গণেন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায়, রায়না (পূর্ব বর্ধমান) :- রায়না থানা এলাকার এক ছাত্রীকে অপহরণের মামলায় সিবিআই তদন্তের নির্দেশ দিল কলকাতা হাইকোর্ট। প্রথমে পুলিস ও পরে সিআইডি ঘটনার তদন্ত করে। বর্তমানে মামলাটি সিআইডির কাছে রয়েছে। দুই তদন্তকারী সংস্থার তদন্ত নিয়ে নির্দেশে বিস্তর সমালোচনা করেছে হাইকোর্ট। বৃহস্পতিবার কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি জয় সেনগুপ্ত ঘটনার তদন্তভার সিবিআইয়ের হাতে তুলে দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন। মামলার যাবতীয় নথি সিবিআইয়ের হাতে তুলে দেওয়ার জন্য নির্দেশ দিয়েছেন বিচারপতি। অপহৃতা ছাত্রীর পরিবারের নিরাপত্তা ব্যবস্থা যা ছিল পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত তা বহাল থাকবে বলে জানিয়ে দিয়েছেন বিচারপতি। ১৩ মার্চ মামলার পরবর্তী শুনানির দিন ধার্য হয়েছে। সেদিন তদন্তের অগ্রগতির বিষয়ে সিবিআইকে রিপোর্ট পেশ করতে হবে।
পুলিস ও আদালত সূত্রে জানা গিয়েছে, গত বছরের ৯ আগস্ট বছর চোদ্দোর ওই ছাত্রী সন্ধ্যা ৬টা নাগাদ টিউশন পড়তে যাওয়ার কথা বলে বাড়ি থেকে বের হয়। তারপর থেকে তার হদিশ মিলছে না। বিভিন্ন জায়গায় খোঁজখবর করেও মেয়ের হদিশ না পেয়ে তার মা ১৭ আগস্ট ঘটনার কথা জানিয়ে রায়না থানায় অভিযোগ দায়ের করেন। অভিযোগের ভিত্তিতে অপহরণের মামলা রুজু করে তদন্তে নামে পুলিস। ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগে শেখ সফিকুল ও শেখ জসীমউদ্দিনকে গ্রেপ্তার করে পুলিস। দু’দফায় তাদের হেফাজতে নিয়েও ছাত্রীকে খুঁজে বার করতে পারেনি পুলিস। পুলিসের ভূমিকায় অসন্তোষ প্রকাশ করে স্থানীয় বাসিন্দারা রাস্তা অবরোধ করে। পরে, ছাত্রীর মা বিষয়টি নিয়ে হাইকোর্টের দ্বারস্থ হন। হাইকোর্ট তদন্তভার সিআইডির হাতে তুলে দেয়। যদিও সিআইডির তদন্তেও অনাস্থা প্রকাশ করেন ছাত্রীর মা। এদিনের শুনানিতে তাঁর আইনজীবী দেবপ্রিয় মজুমদার অভিযোগ করেন, নির্ধারিত সময়ের মধ্যে চার্জশিট পেশ না হওয়ায় ধৃত দু’জন জামিন পেয়ে যায়। জামিনে ছাড়া পাওয়ার পর লোকজন নিয়ে ছাত্রীর পরিবারকে নানাভাবে হুমকি দেওয়া হচ্ছে। টাকা-পয়সা নিয়ে বিষয়টি মিটিয়ে নেওয়ার জন্য ছাত্রীর পরিবারকে চাপ দেওয়া হচ্ছে। ছাত্রীকে বিক্রি করে দেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছে তারা। পুলিস ইচ্ছাকৃতভাবে তদন্তে বিলম্ব করেছে। সিআইডি তদন্তভার হাতে নেওয়ার পরও বিশেষ কিছু করেনি। পার্শ্ববর্তী দেশ ও বর্ডার লাগোয়া জেলাগুলিকেও ছাত্রীর নিখোঁজ হওয়ার বিষয়ে কিছু জানানো হয়নি। যে দু’জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছিল তারা রাজনৈতিক দলের সঙ্গে যুক্ত এবং শাসক দলের প্রভাবশালীদের সঙ্গে সম্পর্ক রয়েছে। রাজ্য সরকারের আইনজীবী আনসার মণ্ডল ও আশিস দত্ত রাজ্যের দুই তদন্তকারী সংস্থার তদন্তে গাফিলতির অভিযোগের বিরোধিতা করেন। দুই তদন্তকারী সংস্থা ছাত্রীকে উদ্ধার করতে কী কী পদক্ষেপ নিয়েছে তার উল্লেখ করেন। অভিযোগে যৌন হেনস্থার উল্লেখ না থাকায় মামলায় পকসো বা আরও কোনও কঠোর ধারা প্রয়োগ করা যায়নি বলে জানান সরকারি আইনজীবী। যদিও তাতে চিড়ে ভেজেনি। বিচারপতি তাঁর নির্দেশে জানিয়েছেন, মামলার নথি অনুযায়ী সিআইডি কয়েকজনকে জিজ্ঞাসাবাদ করেছে। জামিনে মুক্ত পাওয়া দুই অভিযুক্তকেও জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। তাদের কল রেকর্ডও বয়ানের সঙ্গে মিলিয়ে দেখা হয়েছে। তাদের গতিবিধির উপরও নজর রেখেছে তদন্তকারী সংস্থা। স্থানীয় পত্রিকায় ছাত্রীর নিখোঁজ হওয়ার বিষয়ে বিজ্ঞাপন দেওয়া হয়েছে। কলকাতার মিসিং পার্সন স্কোয়াডকে বিষয়টি জানানো হয়েছে। তবে, এটা যথেষ্ট নয়। তদন্তকারী সংস্থা দায়িত্বভার নেওয়ার পর দ্রুততার সঙ্গে তদন্ত করা উচিত। তারা নিখোঁজ ছাত্রীর ছবি পার্শ্ববর্তী বিভিন্ন রাজ্যে পাঠাতে পারত। এছাড়াও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের কাছে সাহায্য চেয়ে বিষয়টি জানাতে পারত। পার্শ্ববর্তী দেশের বিভিন্ন তদন্তকারী সংস্থার সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারত। এমনকি আদালতে ধৃত দু’জনের নারকো অ্যানালিসিস টেস্টের আবেদন জানাতে পারত। ছাত্রীর পরিবারকে হুমকি দেওয়া লোকজনকে জিজ্ঞাসা করা উচিত ছিল পুলিসের। তদন্তের করণীয়ের বিষয়ে পরামর্শ দিলেও তদন্তকারী সংস্থাকে কীভাবে তদন্ত করা উচিত তা শিক্ষা দেওয়া আদালতের যে কাজ নয়, তাও নির্দেশে উল্লেখ করেছেন বিচারপতি। তদন্তভার হাতে নেওয়ার একমাস পরও অপহৃতা ছাত্রীকে খুঁজে বের করার ব্যাপারে সিআইডির ব্যর্থতা এবং ঘটনায় আন্তঃরাজ্য এমনকি অন্যান্য দেশের সাহায্য প্রয়োজন। তাই, তদন্তভার সিবিআইয়ের হাতে তুলে দেওয়াই যুক্তিযুক্ত বলে নির্দেশে জানিয়েছেন বিচারপতি।