E Purba Bardhaman

বর্ধমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ব্র্যাকি থেরাপি যন্ত্র বিকল, ব্যাহত ক্যানসার চিকিৎসা পরিষেবা

Cancer treatment service is being disrupted due to the Brachytherapy machine being out of order. Department of Oncology of Burdwan Medical College & Hospital

বর্ধমান (পূর্ব বর্ধমান) :- কয়েকদিন আগেই রাজ্যের দুই স্বাস্থ্য অধিকর্তা বিনোদ কুমার এবং শরদ দ্বিবেদী বর্ধমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের হালহকিকত খতিয়ে দেখে যান। হাসপাতালের চিকিত্সা পরিষেবার ব্যাপক উন্নতি হয়েছে জানানো হলেও বাস্তবে দেখা দিল উল্টো চিত্র। দিনের পর দিন ক্যান্সার আক্রান্তদের রশ্মি দেবার ব্র্যাকি থেরাপি মেশিন খারাপ। মেশিন দেখভালকারী সংস্থার বকেয়া টাকা সরকার না দেওয়ায় তাঁরাও মেশিন মেরামত করার জন্য কোনোরকম আগ্রহই দেখাচ্ছেন না। ফলে চুড়ান্ত ভোগান্তি এবং সংকটের মুখে পড়েছেন ক্যান্সার আক্রান্ত রোগীরা। ফলে দূর দুরান্ত থেকে রোগীদের হয়রানি বেড়েই চলেছে বর্ধমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে। শুধু হয়রানিই নয়মেশিন খারাপ থাকায় একটু একটু করে মারণ রোগ ক্যান্সার তার বিস্তার ঘটাচ্ছে রোগীর শরীরে। বর্ধমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ব্র্যাকি থেরাপির একটি মেশিন প্রায় দুমাস ধরে খারাপ। শেষ ব্র্যাকি থেরাপি করা হয়েছে গত ১ এপ্রিল। প্রায় ৫ কোটি টাকা খরচ করে জার্মানীর এই মেশিন ২ বছর আগে বর্ধমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চালু হয়। এই মেশিন দেখভালের দায়িত্বে রয়েছে হাইটস নামে একটি সংস্থা। উত্তরবঙ্গের দিনহাটা কৃষি মেলা থেকে মা মিনকি দাসকে নিয়ে এভাবেই হয়রানির শিকার হয়ে পড়েছেন ছেলে সুজন দাস। তিনি অবশ্য অভিযোগ করেছেন২ মাস নয়। তিনি প্রায় ৪ মাস ধরেই ঘুরে মরছেন। সুজনবাবু জানিয়েছেনতাঁর মা ওভারীর ক্যান্সারে আক্রান্ত হওয়ার পর উত্তরবঙ্গের হাসপাতালে তাঁর চিকিৎসা হয়। সেখানে তাঁকে বাইরে থেকে রে দেওয়ার পর তাঁরা বর্ধমান হাসপাতালে পাঠান আভ্যন্তরীণ রে দেবার জন্য। কিন্তু গত ৪ মাস ধরে তাঁদের ৫ টা ডেট দেওয়াই হয়েছেকিন্তু চিকিৎসা শুরু হয়নি। এরপর সোমবার তিনি এলে তখন তাঁকে জানানো হয় ওই রে দেবার মেশিনটি খারাপ। তাই তাদের এনআরএসে যাবার কথা বলা হয়েছে। আর এরপরই তিনি ক্ষোভে ফেটে পড়েন। সুজনবাবু জানানমেশিন খারাপের কথা আগেই হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানিয়ে দিতে পারতেন। কিন্তু তা না করে তাদের মত অসংখ্য রোগীকে হয়রানির মধ্যে ফেলা হয়েছে। তিনি জানিয়েছেনক্যান্সার তো আর থেমে থাকার রোগ নয়। নিয়ম মেনেই তার চিকিৎসা হওয়া দরকার। কিন্তু হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের দায়িত্বজ্ঞানহীনতায় তাঁর মায়ের চিকিৎসা হল না গত ৪ মাস ধরে। এদিকেএ ব্যাপারে হাসপাতাল সুপার ডা উত্পল দাঁ জানিয়েছেনমেশিন খারাপের বিষয়টি বারবার উর্ধতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে। কার্যত প্রতিদিনই এব্যাপারে অসুবিধার কথা জানানো হচ্ছে ওয়েষ্ট বেঙ্গল মেডিকেল সার্ভিস কর্পোরেশন সহ হাইটসকে। কিন্তু সংশ্লিষ্ট সংস্থাটি কোনোভাবেই গা করছে না। তিনি স্বীকার করেছেনএর ফলে রোগীদের সমস্যা বাড়ছে। উল্লেখ্যএই মেশিনে গড়ে প্রতিদিন ৮ থেকে ১০ জন রোগীকে রে দেওয়া হয়। বর্ধমান ছাড়া এই উন্নতমানের মেশিন রয়েছে কলকাতা মেডিকেল কলেজএনআরএসআরজিকরে। বর্ধমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের অঙ্কোলজি বিভাগের প্রধান প্রদীপ কুমার মাইতি জানিয়েছেনপ্রতি বছর গড়ে প্রায় আড়াই হাজার নতুন ক্যান্সারে আক্রান্ত রোগী এই হাসপাতালে আসেন চিকিত্সা করাতে। ২০০৮ সাল থেকে নতুন-পুরনো মিলিয়ে গড়ে বছরে প্রায় ১৬ হাজার ক্যান্সার রোগীর চিকিত্সা চলছে। তিনি জানিয়েছেনইতিমধ্যেই ৪৫ কোটি টাকা ব্যয়ে বর্ধমান মেডিকেল কলেজ সংলগ্ন এলাকায় তৈরী হচ্ছে পৃথক ক্যান্সার ইউনিট। এদিকেব্র্যাকি থেরাপি মেশিন খারাপ হয়ে থাকা এবং বরাতপ্রাপ্ত হাইটস সংস্থা তা ঠিক করার বিষয়টি নিয়ে রীতিমত চাপান উতোর শুরু হয়েছে। খোদ হাইটসের জোনাল আধিকারিক অভিষেক গুপ্তা জানিয়েছেনবর্ধমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ওই মেশিনটি দেখভালের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে কির্লোস্কার নামে একটি সংস্থাকে। কিন্তু সেই সংস্থা ওই মেশিন বসানো বাবদ ১০ শতাংশ টাকা এখনও পায়নি। তাই তারা দেখভাল করার ক্ষেত্রে আগ্রহ দেখাচ্ছেন না।

Exit mobile version