বর্ধমান (পূর্ব বর্ধমান) :- মঙ্গলবার শতবর্ষ প্রাচীন ‘শিয়াল ডাকা লক্ষ্মী পুজো’ অনুষ্ঠিত হল বর্ধমানের কাঞ্চননগরের সিংহ বাড়িতে। সিংহবাড়ির বর্তমান বংশধর উদিত সিংহ জানিয়েছেন, তিনি তাঁর ঠাকুমা প্রয়াত চারুবালা সিংহের মুখ থেকে শুনেছেন, তাঁদের পরিবারে প্রতি বছরের ১ মাঘ এই লক্ষ্মী পূজা হয়ে আসছে বংশ পরম্পরা ধরে। এই লক্ষ্মীপুজোর বিশেষত্ব এটাই যে, শিয়াল ডাকলে তবে এই পুজো শুরু হয়। তিনি জানিয়েছেন, বিকাল থেকেই এই শিয়ালডাকা লক্ষ্মীপুজোর জন্য তদবির তদারকি শুরু হয়। উঠানের মাঝখানে সরাইয়ে ধান দিয়ে পিতলের লক্ষ্মী মূর্তিকে বসানো হয়। ধান্য লক্ষ্মী পুজোর মতই এই পুজোতেও সাধারণ নৈবেদ্য থাকে। বিকাল থেকে পুজোর জন্য সমস্ত প্রস্তুতি সন্ধ্যের মধ্যেই শেষ করতে হয়। এরপর পরিবারের লোকজন অপেক্ষা করতে থাকেন কখন শিয়াল ডাকবে। পুরোহিতও তৈরি থাকেন। শিয়াল ডাকার সঙ্গে সঙ্গে শুরু হয় লক্ষ্মী পুজোর। এদিনও বিকালে এই লক্ষ্মীপুজোর জোগাড় করলেন সিংহ বাড়ির দুই গৃহবধূ দীপ্তি সিংহ এবং কমলা সিংহ। তাঁরা জানিয়েছেন, পরিবারের পরম্পরা মেনে তাঁরা এই পুজোর জোগাড় করেছেন। কিন্তু একটা সময় এই কাঞ্চননগর এলাকায় জনবসতি কম ছিল। ছিল চারিদিকে জঙ্গল। ফলে সেখানে শিয়াল থাকত। তাই শিয়াল ডাকার আওয়াজও শোনা যেত। কিন্তু বর্তমানে এই কাঞ্চনগর এলাকায় ফাঁকা বা জঙ্গল এলাকাই খুঁজে পাওয়া দায়। ফলে শিয়াল ডাকার অপেক্ষা করে রাতভর আর বসে থাকা হয় না। একটা নির্দিষ্ট সময়ের পর পুরোহিত পুজো শুরু করে দেন। যদিও এদিন উদিত সিংহ জানিয়েছেন, ছোটবেলায় অনেক সময় তাঁরা বাড়ি থেকে বেড়িয়ে গিয়ে শিয়ালের মত গলার আওয়াজ করতেন। যা শুনে ঠাকুমা পুজো শুরুর নির্দেশ দিতেন। তিনি জানিয়েছেন, আগে কাঞ্চননগর এলাকায় অনেক পরিবারেই এই পুজোর চল ছিল। এখন তা কমে গেছে। তাঁদের পরিবারে এই পরম্পরা ধরে আজও পুজো হয়ে আসছে। পুজো শেষে আশপাশের মানুষকে প্রসাদ দেওয়ারও চল রয়েছে। উল্লেখ্য, কোনো কোনো এলাকায় এই লক্ষ্মী পুজোকে ‘বার লক্ষ্মী’ বা ‘উঠোন লক্ষ্মী’ বলেও পুজো করা হয়। এই পুজো উপলক্ষ্যে উঠোনে আলপনা দেওয়ার চল রয়েছে। শিয়াল বা প্যাঁচা ডাকলে তবেই বাড়ির উঠোন থেকে দেবী লক্ষ্মীকে ঘরের ভিতর স্থাপন করা হয়। মূলত সারাবছর ধনসম্পদে সচ্ছল থাকার কামনায় এই পুজো হয়ে আসছে।