বর্ধমান (পূর্ব বর্ধমান) :- সব রাজনৈতিক দলকে বলবো, নিজেদের মূর্তি বানিয়ে, বড় বড় বিল্ডিং বানিয়ে টাকা খরচ না করে ফ্লাড কন্ট্রোলের এক চতুর্থাংশ টাকা যদি আমরা পাই, আমরা কাজ করতে পারি। সোমবার পূর্ব বর্ধমানে বন্যা পরিস্থিতি নিয়ে প্রায় ১ ঘণ্টার প্রশাসনিক বৈঠক সেরে এভাবেই নাম না করে বিজেপিকে বিঁধলেন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এদিনের এই বৈঠকে চিফ সেক্রেটারি-সহ অন্যান্য সচিব, ডিএম, এসপি, পশ্চিম বর্ধমানের জনপ্রতিনিধি, পূর্ব বর্ধমানের প্রতিনিধিরাও ছিলেন। এদিন প্রশাসনিক বৈঠকের শুরুতেই জেলা প্রশাসনের আধিকারিকদের ফিল্ডে নেমে কাজ করার কথা বলেন। তিনি বলেন, বর্ধমানে কে কী করছে সব খবর তিনি রাখেন। প্রশাসনের এক আধিকারিককে বাড়িতে বসে না থেকে ফিল্ডে নেমে কাজ করার নির্দেশ দেন। বর্ধমানে দামোদর নদের ওপর দ্বিতীয় সেতু নির্মাণের কাজ এখনও শুরু না হওয়ায় রীতিমতো ক্ষোভ প্রকাশ করেন মুখ্যমন্ত্রী। বন্যা পরিস্থিতিতে সকলকে আরও সক্রিয়ভাবে কাজ করতে বলেন তিনি। মুখ্যমন্ত্রী এদিন সাংবাদিক বৈঠকে বলেন, এই দু-তিনদিনে আরও বৃষ্টি হবে। যাদের জায়গায় জল জমে আছে, আবার যদি জল জমে, আবার ডিভিসি যদি জল ছাড়ে তাহলে বিপদ বাড়বে। এই সব জায়গায় বিডিওদের, ডিএম, আইসিদের বলা হয়েছে মানুষকে বুঝিয়ে সুঝিয়ে কাজ করবেন। কেউ বাসস্থান ছাড়তে চায় না। বিধায়কদেরও গুরুত্ব দিতে বলেছি। বন্যার জল চলে গেলে, বর্ধমান, বাঁকুড়া, বীরভূম, নদীয়া, উত্তর ২৪ পরগনা প্রভৃতি জেলা– যেগুলি শস্য ভাণ্ডার সেই সমস্ত ক্ষতিগ্রস্ত চাষীদের জমির শস্য বিমার টাকা দিতে বলেছি। চাষীদের চিন্তা করতে বারণ করেছি। বাংলার দুর্ভাগ্য। বাংলার অবস্থান নৌকার মত। বাংলায় বন্যা বেশি হয়। বাংলা নদীমাতৃক দেশ। ঝাড়খণ্ডে বৃষ্টি হলেই নিজেদের বাঁচাতে জল ছেড়ে দেয় বাংলার ওপর। ফারাক্কার জলেও প্লাবিত হয়। দীর্ঘদিন ড্রেজিং না করার ফলে জলটা ছেড়ে দেয়। মালদা, মুর্শিদাবাদ বিহারের কিছুটা প্লাবিত হয়। বিহার বাঁধ কেটে দিয়ে বাংলায় জল ঢুকিয়ে দেয়। গঙ্গা অ্যাকশন, ফ্লাড কন্ট্রোল সব দিল্লীর অধীন। আজ পর্যন্ত তারা কোনো কাজ না করার ফলে সব ডুবে যাচ্ছে। সব রাজনৈতিক দলকে বলবো, নিজেদের মূর্তি বানিয়ে, বড় বড় বিল্ডিং বানিয়ে টাকা খরচ না করে ফ্লাড কন্ট্রোলের এক চতুর্থাংশ টাকা যদি আমরা পাই, আমরা কাজ করতে পারি। রাজ্যে অনেক ফ্লাড সেন্টার করা হয়েছে। স্কুল ছুটি হয়ে গেলে সেগুলিতে কাজে লাগাতে বলেন মুখ্যমন্ত্রী। তিনি বলেন, পিএইচইকে জলের খামতি যাতে না হয় তা দেখতে বলা হয়েছে। পূর্ত দপ্তরকে বলা হয়েছে রাস্তা ঠিক করার জন্য। পঞ্চায়েত দপ্তরকে বলা হয়েছে বাড়ি তৈরির অর্ধেক বরাদ্দ টাকা ডিসেম্বরে ছাড়বো। জল কমে গেলে সার্ভে করতে বলা হয়েছে। ১১ লক্ষ মানুষের বাড়ি হবে। সংখ্যালঘু দপ্তরকেও বলা হয়েছে ৬৫ হাজার মানুষকে বাড়ি তৈরি করে দেওয়া হবে। যাদের মাটির বাড়ি ধ্বসে গেছে, তাদের বাড়িগুলিও সার্ভে করে তাদের অগ্রাধিকার দিতে হবে। ৫০ লক্ষ বাড়ি দিয়েছি। এখনও অনেক বাকি আছে। যাদের তালিকায় নাম নেই, তাঁদেরও করে দেবার চেষ্টা করবো। যাদের বাড়ি ভেঙে গেছে তাঁদের তিনটে করে ত্রিপল দিতে বলা হয়েছে। খাওয়া দাওয়া-সহ রিলিফ চলবে যতক্ষণ না স্বাভাবিক পরিস্থিতি হচ্ছে। মমতা বলেন, দলের পক্ষ থেকে ১০ ট্রাক খাবার পুলিশকে দেওয়া হয়েছে। পুলিশও অনেক জায়গায় কমিউনিটি কিচেন করে সাহায্য করছে। আমরা সাধ্যমতো ড্রাই প্যাকেট করে দিচ্ছি। কাউকে ৫ কেজি চাল, কাউকে ৫ কেজি মুড়ি, দুধ, চা, ডালও দেওয়া হচ্ছে পরিবার অনুযায়ী। এরপরেও বন্যা হলে আবার দেওয়া হবে। মানুষ যেন না ভাবেন তাঁরা বিপদে পড়ে আছেন। মায়ের কাছে প্রার্থনা করি সব দুর্যোগ কেটে যাক। মুখ্যমন্ত্রী বলেন, বিধায়কদের বলা হয়েছে বিধায়ক কোটায় গ্রামীণ রাস্তা করুক। সাংসদরাও টাকা দিয়ে রাস্তা করুক গ্রামীণ রাস্তাগুলি।