E Purba Bardhaman

বাংলা আবাস যোজনা, ১০০ দিনের কাজ, তোলাবাজি নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করলেন মুখ্যমন্ত্রী

Chief Minister Mamata Banerjee held an administrative riview meeting in Purba Bardhaman district. At Sanskriti Lok Mancha in Burdwan

বর্ধমান (পূর্ব বর্ধমান) :- সোমবার বর্ধমানের সংস্কৃতি লোকমঞ্চে প্রশাসনিক সভা করতে এসে সরকারী একাধিক প্রকল্প নিয়ে দফায় দফায় ক্ষোভ প্রকাশ এবং ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশ দিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দোপাধ্যায়। শুধু তাইই নয়, এদিন প্রশাসনিক সভার পর বর্ধমান শহর লাগোয়া একটি আদিবাসী এলাকায় গিয়ে সেখানে আদিবাসী এবং তপশীলি জাতি উপজাতি মানুষদের সঙ্গে কথাও বললেন তিনি। তাঁদের সঙ্গেই খেলেন চা। খোঁজ নিলেন তাঁদের নানাবিধ অসুবিধার বিষয়েও। সোমবার দুপুর প্রায় ২ বেজে ২২ মিনিটে বর্ধমানের সংস্কৃতি লোকমঞ্চে আসেন মুখ্যমন্ত্রী। তার কিছুক্ষণ আগেই সংস্কৃতি লোকমঞ্চের এ্যানেক্স সভাঘরে দলীয় বিধায়ক, পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি, জেলা পরিষদের সদস্যদের সঙ্গে বৈঠক করেন। দলীয় বৈঠকে কোনোরকম অজুহাত ছাড়াই জনসংযোগের ওপর জোড় দেবার নির্দেশ তিনি। এরপর তিনি সংস্কৃতি সভাঘরে প্রায় ৬০০ মানুষের উপস্থিতিতে প্রশাসনিক বৈঠক করেন মুখ্যমন্ত্রী। এই মঞ্চ থেকেই তিনি মোট ২৭১ কোটি টাকার ৪১টি প্রকল্পের শিলান্যাস করেন। এছাড়াও প্রায় ১৫৩ কোটি টাকার নতুন ৪০টি প্রকল্পের উদ্বোধনও করেন। মঞ্চে বিভিন্ন দপ্তরের সচীবদের পাশাপাশি হাজির ছিলেন রাজ্যের পুরমন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম, ক্ষুদ্র ও কুটিরশিল্প দপ্তরের মন্ত্রী স্বপন দেবনাথ, গ্রন্থাগার দপ্তরের মন্ত্রী সিদ্দিকুল্লাহ চৌধুরী, বোলপুরের সাংসদ অসিত মাল, বর্ধমান পুর্বের সাংসদ সুনীল মণ্ডল সহ জেলা পরিষদের সভাধিপতি, সহকারী সভাধিপতি, জেলাশাসক, জেলা পুলিশ সুপার সহ জেলার সমস্ত দপ্তরের আধিকারিকরাও। প্রতিটি প্রকল্প ধরে ধরে মুখ্যমন্ত্রী খোঁজ নেন। কিষাণ ক্রেডিট কার্ড, জবকার্ড সহ একাধিক প্রকল্প নিয়ে খোঁজ নেন। জবকার্ড নিয়ে মুখ্যমন্ত্রী সরাসরি জানান, জবকার্ড পেয়েছেন অথচ অনেকে কাজ পাননি বলে তিনি অভিযোগ পাচ্ছেন। উত্তর দেন জেলাশাসক বিজয় ভারতী। তিনি পরিসংখ্যান তুলে ধরে জানান, গত আর্থিক বছরে এই ঘটনা ঘটলেও এবছর থেকে গোটা বিষয়টিকে আলাদাভাবে গুরুত্ব দিয়ে দেখা হচ্ছে। এরকম কোনো ঘটনা যাতে না হয় সেজন্য মনিটরিং করা হচ্ছে। মুখ্যমন্ত্রী খোঁজ নেন জেলার কৃষি সেচ নিয়েও। জানান, ২৮০০ কোটি টাকার একটি প্রকল্প গ্রহণ করা হয়েছে বিশ্বব্যাঙ্কের আর্থিক সহায়তায়। এই টাকার মধ্যে পূর্ব বর্ধমান জেলার জন্যই ৫৬০ কোটি টাকা ব্যয় করে সেচনালা সংস্কার, দামোদরের বাঁধ নির্মাণের কাজ হবে। এতে বন্যা প্রতিরোধ এবং কৃষির উন্নতি হবে। ১০০ দিনের কাজে জলাজমির উন্নতির নির্দেশ দেন তিনি। বর্ধমান পুরসভাকে সাফ সুতরো করার ওপর এবং শহরের মধ্যে দিয়ে যাওয়া সাবজোলা সংস্কারের কাজ শুরুর ঘোষণা করেন তিনি। এদিন সেচের কাজ ছাড়াও জল সংরক্ষণ এবং ভূগর্ভস্থ জল সঞ্চয়ের জন্য রাজ্যের প্রতিটি জেলার মজে যাওয়া নদী সংস্কারের কথা ঘোষণা করেন তিনি। একইসঙ্গে জলশ্রী নামে নতুন প্রকল্পের ঘোষণা করে তিনি জানান, এর মাধ্যমে বিভিন্ন জলাশয়, খালবিল, নদীকে একসঙ্গে যুক্ত করা হবে। এরই পাশাপাশি বজ্রপাত ঠেকাতে এবং আর্থিক সহায়তা দিতে প্রতিটি জেলায় ১ লক্ষ করে নারকেল গাছ নদীর ধারে লাগানোর ওপর জোড় দেন তিনি। ডেঙ্গু প্রতিরোধে এদিন উত্তর ২৪ পরগণার পাশাপাশি বর্ধমানের কাটোয়ায় ড্রোন দিয়ে কোথাও কোনো জল জমছে কিনা তার তদন্তের নির্দেশ দেন। শস্য বীমা, কৃষক বন্ধু, স্বাস্থ্য সাথী নিয়েও খোঁজ নেন তিনি। বাংলা আবাস যোজনা নিয়ে মুখ্যমন্ত্রী সরব হন। সরাসরি তিনি জানতে চান এই জেলায় কত বাড়ি তৈরী হয়েছে। এজন্য কোনো চাঁদা দেওয়া হয়েছে কিনা। এরপরই তিনি দপ্তরের সচীবকে নির্দেশ দেন প্রতিটি গ্রামে গ্রামে উপভোক্তাদের নিয়ে সভা করে এই প্রকল্পে কারা কারা বাড়ি পেলেন, কতটাকা কতদফায় পেলেন সে ব্যাপারে জানাতে হবে। এমনকি পরিষ্কারভাষায় জানাতে হবে এই প্রকল্পের জন্য কাউকে কোনো চাঁদা দিতে হয় না। এদিন সভায় বাংলা আবাস যোজনা নিয়ে খোদ রাজ্যের মন্ত্রী তথা তৃণমূল কংগ্রেসের জেলা সভাপতি স্বপন দেবনাথ অভিযোগ করেন, যাঁরা দোতলা বাড়ি পেয়েছেন তাঁরাও বাংলা আবাস যোজনার ঘর পেয়েছেন। এব্যাপারে বিডিওদের কড়া হাতে নজরদারী করার নির্দেশ দেন তিনি। বৈঠকে ঐক্যশ্রী, শিক্ষাশ্রী, সবুজ সাথী নিয়েও খোঁজ নেন। চুঁচুড়ায় মিড ডে মিলে কেবলমাত্র নুন ভাত দেওয়া নিয়ে গোটা রাজ্য জুড়ে হৈচৈ হয়েছে। আর সোমবার পূর্ব বর্ধমা্ন জেলার প্রশাসনিক বৈঠক করতে এসে সংস্কৃতি লোকমঞ্চে মিড ডে মিল নিয়ে মুখ্যমন্ত্রী জেলা প্রশাসনের কাছে জানতে চাইলেন মিড ডে মিলের অবস্থা। শুধু তাই নয়, এদিন রাজ্য সরকারের সচীব মণীশ জৈনের কাছে জানতে চান মুখ্যমন্ত্রী, মিড ডে মিলের জন্য ৭দিনে ৭ রকমের মেনুর চার্ট তৈরী হয়েছে কিনা। রীতিমত ক্ষুব্ধ মুখ্যমন্ত্রী বলেন, তিনি জানেনই না, এই ধরণের কোনো তালিকা তৈরী হয়েছে কিনা। তিনি কাগজে দেখলেন। যে যার মনগড়া লিখে দিচ্ছে। এরপরই তিনি মনীশ জৈনকে নির্দেশ দেন, মিড ডে মিল নিয়ে বিভ্রান্তি ছড়াচ্ছে, এব্যাপারে সরকারীর বক্তব্য জানানোর জন্য। মিড ডে মিল নিয়ে মুখ্যমন্ত্রী এদিন বলেন, মাথা পিছু ৪ টাকা ৭১ পয়সা বরাদ্দ করা আছে। সেই টাকায় কিভাবে ডিম খাওয়ানো সম্ভব? তিনি বলেন, একটা ডিমের দাম ৫ থেকে ৬ টাকা। এরপরই তিনি জেলা প্রশাসনকে নির্দেশ দেন, মিড ডে মিলে সরকার চাল বিনামূল্যে দিচ্ছে। যে টাকা বরাদ্দ করা আছে সেই টাকায় স্থানীয়ভাবে যা সস্তায় পাওয়া যাবে তা দিয়েই চালাতে হবে। তিনি বলেন, ভাত , ডাল আর একটা তরকারি যেন হয়। তাই সবাই পেট ভরে খাক। এদিকে, এরই পাশাপাশি এদিন মিড ডে মিলের রাঁধুনিদের জন্য নতুন উদ্যোগের কথা বলেন মুখ্যমন্ত্রী। তিনি এদিন বলেন, রাঁধুনিদের জন্য ১৫০০ টাকা দেওয়া হয়। কিন্তু ওই টাকায় চলে না। তাই রাঁধুনিদের ১০০ দিনের কাজে কিভাবে যুক্ত করা হয় সে ব্যাপারে পরিকল্পনা করার নির্দেশ দেন দপ্তরের সচীবকে। তিনি বলেন, কিচেন গার্ডেন যেখানে সম্ভব, ১০০ দিনের কাজে সেখানেই যুক্ত করতে হবে। তাদের জব কার্ড দেওয়া হবে। যে টাকা পাওয়া যাবে তা সকল গোষ্ঠীর মধ্যে ভাগ করে দিতে হবে। তাহলেও তাঁরা উপকৃত হবেন। রেশন কার্ড নিয়ে মুখ্যমন্ত্রী অভিযোগ করেন, যাঁরা ডাটা এন্ট্রি অপারেটর তাঁরাই ইচ্ছাকৃতভাবে ভুল করে সরকারের বদনাম করছে। তাঁদের অধিকাংশই অন্য মতের পন্থী। এব্যাপারে জেলাশাসককে প্রয়োজনে তাদের সরিয়ে দেবার নির্দেশ দেন। বালি পাচার নিয়েও সকলকে সতর্ক থাকার নির্দেশ তিনি। খোঁজ নেন বর্ধমানের মিষ্টি হাব নিয়েও। এরই পাশাপাশি এদিন জেলা পুলিশকে সতর্ক করে তিনি সিভিক ভলেণ্টিয়ারদের দিয়ে টাকা তোলা, অহেতুক কেসে সাধারণ মানুষকে জর্জরিত করার প্রসঙ্গ তুলে নির্দেশ দেন- এসব চলবে না। এব্যাপারে রাজ্য নিরাপত্তা উপদেষ্টা সুরজিত পুরকায়স্থকে সমস্ত জেলা পুলিশ সুপারকে সতর্ক করে দেবার নির্দেশ দেন। এদিকে, প্রশাসনিক বৈঠক সেরেই মুখ্যমন্ত্রী চলে যান মিষ্টি হাব এবং মিষ্টি হাবের পিছনে আলিশা গ্রামে। সেখানে গিয়ে বাসিন্দাদের সঙ্গে বিভিন্ন সরকারী প্রকল্পের সুযোগ সুবিধা কি পাচ্ছেন সে বিষয়ে জানতে। তাঁদের সঙ্গে বসে চাও খান। এদিন বাসিন্দারা রেশন কার্ড, জব কার্ড, টিউবওয়েল, রাস্তা প্রভৃতি নিয়ে মুখ্যমন্ত্রীর কাছে তাঁদের অসুবিধার কথা তুলে ধরেন। মুখ্যমন্ত্রী জেলাশাসককে গোটা বিষয়টি দেখার নির্দেশ দিয়ে যান।

Exit mobile version