E Purba Bardhaman

লোকসভা ভোটের মুখে বর্ধমানের সভা থেকে রণ হুংকার মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের

Chief Minister Mamata Banerjee's shout from Burdwan meeting ahead of Lok Sabha polls

বর্ধমান (পূর্ব বর্ধমান) :- কয়েক হাজার শিক্ষক আমরা নেবো। ৬০-৭০ হাজার চাকরি হতো; রাম-বাম আর কংগ্রেস কোর্ট কেস করে আটকে রেখে দিয়েছে। আপনারা আওয়াজ তুলুন। যদি অন্যায় হয় তাহলে সংশোধন করুক আদালত। বুধবার বর্ধমানের গোদা বালির মাঠে (স্বাস্থ্য উপনগরী) প্রশাসনিক সভায় এসে ফের রণহুংকার দিলেন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সামনেই লোকসভা ভোট। সেই ভোটের মুখে চাকরি নিয়ে ক্রমশই আন্দোলনকারীদের আওয়াজ তীব্র হচ্ছে। এমতাবস্থায় মমতা একেবারেই অভিযোগের তীর ঘুরিয়ে দিয়ে রাজ্যের বিজেপি এবং বামেদেরকেই দায়ী করে গেলেন। নাম না করেই তিনি বলে গেলেন, আমরা চাই চাকরি দিতে। চাকরি দিলে বহু বেকার কাজ পাবে। কিন্তু আমাদেরও হাত পা বাঁধা রয়েছে। মঞ্চ থেকেই এদিন তিনি বলেন, আমরা আদালতের কাছে আবেদন করব যাতে চাকরি হয় সে ব্যাপারে ব্যবস্থা নিক। কোথাও কোনো ভুল থাকলে আদালত তার সংশোধন করুক। এদিন এই মঞ্চ থেকে মুখ্যমন্ত্রী বারবার হুমকি দিয়েছেন কেন্দ্রের বিজেপি সরকারকে। তিনি বলেন, বিনা পয়সায় আমরা রেশন দিই। মা মাটি মানুষের সরকার দেয়, তৃণমূল সরকার দেয়। কেন্দ্র সরকার রাজনৈতিক ঠুঁটো জগন্নাথ। বাক্স হয়ে যাবে একদিন ফুটো। তিনি বলেন, আমাদের জিএসটির টাকা তুলে নিয়ে যাচ্ছে। আবার বলছে ঘরে ঘরে জল দিচ্ছি। আমরাই পাইপ কিনছি, জল সরবরাহ করছি, সব করছি আর ওরা মিথ্যা বলছে ভোটের জন্য। কিন্তু মিথ্যা কথা বলে পার পাবে না। সবটাই আমরা করছি আর ওদের কাজ কেবল আমায় গালি দেওয়া। তিনি বলেন, মেয়েরা লিপস্টিক লাগায় জানতাম, ছেলেরা লাগায় জানতাম না। সেজে গুঁজে বসছে। আর বলছে রাস্তা খারাপ। মুখ্যমন্ত্রী বলেন, রাজ্য সরকারের প্রাপ্য শেয়ার আমাদের দেয় না। তা বলে আমরা দুর্বল নই। ২০২২-২০২৩-এ এক টাকাও দেয়নি। আমরা ৪০ দিনের কাজ করিয়েছি। বলছে টাকা দেবো না, সব গেরুয়া রং করতে হবে। বলছে ৬ মাসের জন্য চাল দেবে। ব্যাগে ওদের ছবি থাকবে। আমি হতে দেবো না। রামমন্দির উদ্বোধনের দিন সরকারিভাবে ছুটি দেওয়ার ঘটনায় এদিন মুখ্যমন্ত্রী রীতিমতো ফুঁসে উঠে বলেন, ধর্মের জন্য ছুটি দিচ্ছ। আর নেতাজির মৃত্যুদিন কবে? আজও জানলাম না। লজ্জা লজ্জা। বাংলার মনীষীদের নিয়ে অনেক অসম্মান করেছে। অসম্মান করলেই আমরা রুখে দাঁড়াবো। পূর্ব বর্ধমান জেলা শস্যের ভাণ্ডার। মুখ্যমন্ত্রী এদিন বলেন, বর্ধমান, বীরভুম আমাদের ধান দেয়। সেজন্য আমাদের সেক্রেটারিয়েটের নাম দিয়েছি নবান্ন। কী নেই বর্ধমানে। সব আছে। মিষ্টি হাবে দাঁড়ায় সবাই। তিনি বলেন, আমরা নাকি কিছু করি নি। কন্যাশ্রী আমাদের গর্ব। লক্ষ্মীর ভাণ্ডার থেকে বিভিন্ন প্রকল্পের খতিয়ান তুলে ধরে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, আজ পূর্ব বর্ধমানে ৪ লক্ষ, পশ্চিম বর্ধমানে ১ লক্ষ ৬০ হাজার মানুষ সুবিধা পাচ্ছেন। এদিন এই মঞ্চ থেকে তিনি ঘোষণা করেন, ফেব্রুয়ারি থেকে ১৩ লাখ মহিলা নতুন করে লক্ষ্মীর ভাণ্ডার পাবেন। এছাড়াও অন্যান্য প্রকল্পেও নতুন করে কয়েক লক্ষ সুবিধা দেওয়া হবে ফেব্রুয়ারি থেকে। নতুন করে বার্ধক্য ভাতা পাবেন ৯ লক্ষ মানুষ, নতুন করে বিধবা ভাতা পাবেন ১ লক্ষ ৪ হাজার মানুষ, নতুন করে মানবিক ভাতা পাবেন ৭ হাজার মানুষ, কন্যাশ্রী প্রকল্পে নতুন করে আরও ১০ লক্ষ ৫০ হাজার ছাত্রী যুক্ত হলেন, রূপশ্রী প্রকল্পে নতুন করে যুক্ত হলেন ৮৪.৬৭ হাজার মহিলা। এই ৬ টি প্রকল্পেরই নতুন সংযুক্তির কথা এদিন মঞ্চ থেকে ঘোষণা করেন মুখ্যমন্ত্রী। ডবলুবিসিএস, আইএএস, আইপিএস পরীক্ষার জন্য বর্ধমান-সহ জেলায় জেলায় কোচিং এর ব্যবস্থা নিতে নির্দেশ দেন মমতা। তিনি বলেন, বাইরে যেতে হবে না। এখানেই সব পাবেন। আমরা ৪২ টা বিশ্ববিদ্যালয় করেছি। ৪৩ টা হাসপাতাল করেছি। পরিযায়ী শ্রমিকদের জন্য বোর্ড করেছি। তাঁদের সবরকমের সুবিধা দেবো। ২৫ লক্ষ নাম নথিভুক্ত হয়েছে। এখানে থাকলে ভালো থাকবেন, সুস্থ থাকবেন। বাইরে যেতে হবে না। বৃষ্টির জন্য ফসলের ক্ষতি নিয়ে তিনি বলেন, কৃষি দপ্তরকে বলে দিয়েছি। আমরা সবসময় কৃষকদের পাশে আছি। মমতা বলেন, বাংলার অবদান সব থেকে বেশি দেশের স্বাধীনতায়। বাংলা হারবে না। বাংলা নতুন উদ্যমে চলবে। তিনি এদিন ঘোষণা করেন, পথশ্রী ৩ প্রকল্পে নতুন ১২ হাজার কিমি রাস্তা হবে। এরই পাশে ভূমি দপ্তর সম্পর্কে সতর্ক করেছেন মুখ্যমন্ত্রী। তিনি এদিন বলেন, মিউটেশনের জন্য কোনো টাকা দেবেন না। টাকা চাইলে দুটো থাপ্পড় দিন। স্থানীয়ভাবে কেউ অন্যায় করলে দুয়ারে সরকারে গিয়ে শুধরে নিন। গ্রামীণ রাস্তায় টোল ট্যাক্স আদায় নিয়েও তিনি সতর্ক করে বলেন, আমরা টোল ট্যাক্স নিই না। টোল ট্যাক্স তুলে দিয়েছি গ্রামের রাস্তায়। উল্লেখ্য, এদিন কুয়াশা এবং বৃষ্টি জনিত কারণে নির্ধারিত দুপুর ১ টার আগেই ১২ টা বেজে ২৮ মিনিটে মুখ্যমন্ত্রী হেলিকপ্টারে আসেন বর্ধমানের গোদার মাঠে প্রশাসনিক সভায়। তাঁর সঙ্গে আসেন রাজ্যের মন্ত্রী অরুপ বিশ্বাস। অন্যান্যদের মধ্যে এদিন মঞ্চে উপস্থিত ছিলেন রাজ্যের মন্ত্রী প্রদীপ মজুমদার, মলয় ঘটক, স্বপন দেবনাথ, সিদ্দিকুল্লাহ চৌধুরি, রাজ্য সরকারের মুখ্যসচীব-সহ একাধিক আধিকারিক। মঞ্চে ছিলেন পূর্ব ও পশ্চিম বর্ধমান জেলার জেলাশাসক-সহ বিধায়করাও। আমন্ত্রণ কার্ডে আসানসোলের সাংসদ শত্রুঘ্ন সিনহার নাম থাকলেও তিনি না আসায় মুখ্যমন্ত্রী বলেন, আসেনি যখন তখন কেন তার নাম দিয়েছেন। এদিন বিভিন্ন প্রকল্পে দুই জেলার ৫০ জন উপভোক্তাকে সরাসরি সরকারি সুবিধা প্রদান করেন মুখ্যমন্ত্রী। করেন বেশ কিছু প্রকল্পের উদ্বোধন ও শিলান্যাস। মঞ্চের পাশে শিল্পীদের শিল্পকলার স্টলও ঘুরে দেখেন তিনি।

Exit mobile version