বর্ধমান (পূর্ব বর্ধমান) :- সরকারি একাধিক উদ্যোগ এবং বিভিন্ন সিস্টেম চালু হলেও পূর্ব বর্ধমান জেলায় নাবালিকা বিয়ের প্রবণতাকে কিছুতেই রোধ করা যাচ্ছে না। বিগত কয়েকবছরের তুলনায় এই জেলায় নাবালিকা বিয়ের বিষয়টি প্রশাসনিক দ্রুত উদ্যোগের জন্য কিছুটা কমলেও প্রবণতাকে কিছুতেই আটকানো যাচ্ছে না। আর এবার গোটা রাজ্য জুড়েই নাবালিকা বিয়ে রুখতে চালু হলো ‘চাইল্ড ম্যারেজ রিপোর্টিং অ্যান্ড ট্রাকিং সিস্টেম’ বা CMRTS। পূর্ব বর্ধমান জেলা সমাজকল্যাণ আধিকারিক সৌরভ কোলে জানিয়েছেন, এই সিস্টেমে নাবালিকা বিয়ের খবর পেয়ে তা রোখার পর গোটা বিষয়টি এই পোর্টালে নথিভুক্ত করা হবে। এর ফলে সংশ্লিষ্ট বিডিও-র কাছে সেই তথ্য চলে যাবে। সরকারি নির্দেশ অনুযায়ী এরপর বিডিও-র উদ্যোগে ওই নাবালক-নাবালিকার বাড়িতে হোম ইনকোয়ারি করা হবে। একইসঙ্গে শুরু হবে ফলোআপ রিপোর্ট পাঠানো। হোম এনকোয়ারি একবার হবে। ফলোআপ রিপোর্ট ১ বছর চলবে। প্রথম মাসে ২ বার, এরপর প্রতিমাসে ১ বার করে। উল্লেখ্য, জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, পূর্ব বর্ধমান জেলায় নাবালিকা বিয়ে রুখে দেওয়ার যে সাম্প্রতিক তথ্য তাতে দেখা গেছে, ২০১৮-২০১৯ সালে নথিভুক্ত হয় ২৩৩ টি ঘটনা। ২০১৯-২০২০ সালে ২৮৩ টি, ২০২০-২০২১ সালে ২২২ টি, ২০২১-২০২২ সালে ১৫০ টি, ২০২২-২০২৩ সালে ২০৫ টি এবং ২০২৩ – ২০২৪ সালে ১৩৩ টি। এর মধ্যে রয়েছে এপ্রিল ২০২৩ থেকে সেপ্টেম্বর ২০২৩ পর্যন্ত ৩৭ টি এবং অক্টোবর ২০২৩ থেকে মার্চ ২০২৪ পর্যন্ত ৯৬ টি ঘটনা। প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, ২০২৩-২০২৪ অর্থবর্ষের ১৩৩ টা কেসের মধ্যে ৪ টে বিয়ে হয়ে গেছে। চলতি বছরের অর্থাৎ এপ্রিল ২০২৪ থেকে মে ২০২৪ পর্যন্ত ২৩ টি বিয়ে রোখা গেছে। জেলা শিশু সুরক্ষা অফিসার সুদেষ্ণা মুখার্জী জানিয়েছেন, পূর্ব বর্ধমান জেলার বর্ধমান পুরসভা, ভাতার, কালনা ২, মেমারী ১ এবং জামালপুর ব্লকে এই নাবালিকা বিয়ের প্রবণতা বেশি। যদিও বর্ধমান পৌরসভায় উচ্চহার থাকলেও শেষ অর্থবর্ষে বর্ধমান পৌরসভায় উল্লেখযোগ্যভাবে এই হার কমেছে। নাবালিকা বিয়ের ঘটনাগুলো শুধুমাত্র অর্থনৈতিক কারণ নয়। এর পিছনে অন্যান্য কিছু কারণও রয়েছে। জেলা চাইল্ড হেল্প লাইনের প্রোগ্রাম কো-অর্ডিনেটর অভিজিৎ চৌবে জানিয়েছেন, পূর্ব বর্ধমান জেলায় নাবালক বা নাবালিকা মিসিং কেস (৩৬৩, ৩৬৫ ধারা) হয়েছে গত মে মাসে ৭৬ টা। এর মধ্যে ৪৪ টা উদ্ধার হয়েছে। ৭৬ জনের মধ্যে ২ জন বালক। এপ্রিল মাসে ৮১ টা কেস। এর মধ্যে ৬ জন বালক। উল্লেখ্য, সম্প্রতি গত এপ্রিল থেকে মে মাসের মধ্যে রায়নার মাছখান্ডা হাইস্কুলের কন্যাশ্রী ক্লাবের তৎপরতা, স্থানীয় প্রশাসন এবং চাইল্ড লাইনের সহায়তায় ৩টি নাবালিকা বিয়ে বন্ধ করা গেছে বলে জানিয়েছেন, বিদ্যালয়ের কন্যাশ্রীর নোডাল টিচার রাজেশ হালদার। তিনি জানিয়েছেন, বছরখানেক আগেও এই স্কুলের ১ টি নাবালিকার বিয়ে রোখা হয়েছে। বিয়ে আটকে যাওয়া প্রত্যেক নাবালিকাই এখন স্কুলে আসছে বলে জানিয়েছেন রাজেশ হালদার।