E Purba Bardhaman

বর্ধমান হাসপাতালে অচলাবস্থা অব্যাহতই, পরিকাঠামো এবং নিরাপত্তা বাড়ানোর আবেদন জুনিয়র ডাক্তারদের

The patients are being treated in the emergency department. At Burdwan Medical College & Hospital

বর্ধমান (পূর্ব বর্ধমান) :- রাজ্য জুড়ে চিকিত্সকদের গণ ইস্তফার ঢেউয়ে বর্ধমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালেরও ৬১ জন চিকিত্সক তাঁদের ইস্তফাপত্র জমা দিলেন মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষ সুহৃতা পালের কাছে। শুক্রবার থেকেই এই ইস্তফাপত্র দেবার তোড়জোড় শুরু হয়েছিল। শনিবার পর্যন্ত মোট ৬১ জন চিকিত্সক গণইস্তফা পত্রে স্বাক্ষর করেছেন। অন্যদিকেগত ৪দিনের মতই জুনিয়র ডাক্তারদের পঞ্চম দিনেও বর্ধমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিস্থিতি একই জায়গায় দাঁড়িয়ে থাকল। কোনোরকম কোনো উন্নতি বা অবনতি চোখে পড়েনি। তবে এদিন রোগীদের আসার সংখ্যা অনেক কমেছে। যদিও পূর্ব ঘোষণা অনুযায়ীই জরুরী বিভাগ সংশ্লিষ্ট ঘরে আউটডোরের পুরনো রোগীদের চিকিত্সাঅপারেশন সবই হয়েছে। এমনকি শুক্রবার থেকেই ধর্ণামঞ্চে নিজেদের দাবী দাওয়া নিয়ে বসে থাকলেও চিকিত্সকের মানবিক ধর্ম ভুলতে পারেননি বেশ কয়েকজন জুনিয়র ডাক্তার। কর্মবিরতির পঞ্চম দিনেও ধর্ণামঞ্চ থেকেই বেশ কয়েকজন জুনিয়র ডাক্তার রোগীদের চিকিত্সা করেছেন। প্রেসক্রিপশন লিখেছেন। হাসপাতাল সুপার ডাউত্পল দাঁ জানিয়েছেনসিনিয়র চিকিত্সকফ্যাকাল্টি সদস্য এবং জুনিয়র ডাক্তাররা হাসপাতালের জরুরী বিভাগকে চালু রাখার ব্যাপারে সবরকমের সহযোগিতা করছেন। এদিকেএনআরএস কাণ্ডের জেরে ৫ম দিনে পা রাখা জুনিয়র ডাক্তারদের আন্দোলনের মাঝেই জুনিয়র ডাক্তাররা একটি বিবৃতি প্রকাশ করেছে। শুক্রবারই রাজ্য স্বাস্থ্য দ‌প্তর ১০ দফা নির্দেশিকা জেলায় জেলায় পাঠায়। উল্লেখ্যএনআরএস কাণ্ডের ঘটনায় চলা আন্দোলনকে কেন্দ্র করে বুধবার বর্ধমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালেও জুনিয়র ডাক্তার এবং বহিরাগতদের সঙ্গে ব্যাপক সংঘর্ষ ঘটে। এনআরএসের পাশাপাশি বর্ধমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালেও এই ঘটনায় জুনিয়র ডাক্তার এবং ইন্টার্নরা জোড়ালো নিরাপত্তার দাবী তোলে। রাজ্য স্বাস্থ্য দপ্তরের নির্দেশিকা মেলার পর তা নিয়ে বিস্তারিত আলোচনার পর শনিবার জুনিয়র ডাক্তারদের পক্ষ থেকে বেশ কিছু আবেদন জানানো হয়েছে বর্ধমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ এবং রাজ্য সরকারের কাছে। জুনিয়র ডাক্তাররা জানিয়েছেনহাসপাতালচত্বরে কোনো শরীরিক লাঞ্ছনা বা অপ্রীতিকর কোনো অবস্থার সৃষ্টি হয় তাহলে বিভাগীয় প্রধানরা দ্রুত এফআইআর দায়ের করবেন। একইসঙ্গে গোটা বিষয়টি দ্রুততার সঙ্গে জানাতে হবে উর্ধতন কর্তৃপক্ষকে। বলাহয়েছেএফআইআর করার পর অজামিনযোগ্য ধারায় তার মামলা শুরু করতে হবে। এব্যাপারে সংশ্লিষ্ট থানার তদন্তকারী অফিসারকে ব্যবস্থা নিতে হবে। তিনি উদ্যোগ না নিলে তাঁকে ওই কেস থেকে পরিবর্তন করে দেবার সুপারিশ করবে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ তথা নিরাপত্তা দেখভালকারী নয়া কমিটি। উল্লেখ্যইতিমধ্যেই এব্যাপারে একটি কমিটি গঠিত হয়েছে। সেই কমিটিতে স্বাস্থ্য দপ্তরের কর্তাপুলিশ কর্তা ছাড়াও জুনিয়র ডাক্তারদেরও প্রতিনিধি থাকছে। জুনিয়র ডাক্তাররা রাজ্য সরকারের কাছে আবেদন রেখে জানিয়েছেনগত ৩ বছরে এই ধরণের ঘটনায় সরকার কি কি ব্যবস্থা নিয়েছে তা জনসমক্ষে প্রকাশ করা হোক। হাসপাতালের ঢোকা ও বের হবার পথে পর্যাপ্ত নিরাপত্তা ব্যবস্থা করার আবেদন করা হয়েছে। বর্ধমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের জন্য জাতীয় স্বাস্থ্য নির্দেশিকা মেনে পরিকাঠামো তৈরী করার জন্য আবেদন রাখা হয়েছে রাজ্য স্বাস্থ্য দপ্তরের কাছে। আরও কর্মীচিকিত্সক নিয়োগের আবেদন রাখা হয়েছে। বর্ধমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের অভ্যন্তরে রাস্তার অবস্থা অত্যন্ত খারাপ। রাস্তায় জল জমে যাওয়া নিত্যকার ঘটনা। তাই হাসপাতালের অভ্যন্তরে মসৃণ রাস্তা তৈরীর আবেদন করা হয়েছে যাতে দ্রুততার সঙ্গে রোগী ও চিকিত্সকরা যাতায়াত করতে পারেন। বর্ধমান হাসপাতালের জরুরী বিভাগের গেট লাগানোমহিলা হোষ্টেলে নিরাপত্তা ব্যবস্থা বাড়ানোজরুরী বিভাগ এবং রাধারাণী ওয়ার্ডে আরও বেডের সংখ‌্যা বাড়ানোক্লিনিক্যাল পরীক্ষা কেন্দ্র লাগোয়া পরীক্ষা নিরীক্ষার জন্য ঘর তৈরী করাআলাদা করে জরুরী বিভাগের অস্থি সংক্রান্ত অস্ত্রোপচারের জন্য অপারেশন থিয়েটার তৈরী করাঅপারেশনের পরবর্তী রোগীকে পর্যবেক্ষণে রাখার জন্য ঘর তৈরীশীততপ আউটডোর তৈরী এবং চিকিত্সক রোগী সম্পর্কের উন্নতির জন্য একটি আলাদা সেল গঠন করার প্রস্তাব রাখা হয়েছে রাজ্য স্বাস্থ্য দপ্তরের কাছে। গত ৪দিনের মতই শনিবারও বর্ধমান হাসপাতালের অচলাবস্থা জারী রইল। খোলেনি আউটডোর। জরুরীবিভাগেই পুরনো আউটডোরের রোগীদের চিকিত্সা চালানো হয়েছে। পরিস্থিতি মোকাবিলায় সর্বক্ষণের জন্য প্রচুর সংখ্যক পুলিশও দেওয়া হয়েছে।

Exit mobile version