বর্ধমান (পূর্ব বর্ধমান) :- তৃণমূল কংগ্রেসের উদ্যোগে ডেঙ্গু প্রতিরোধে গরীব মানুষদের মশারি বিলির অনুষ্ঠান মঞ্চে খোদ বর্ধমানের গোলাপবাগ সাবপোষ্টের ট্রাফিক ওসি বিশ্বনাথ পাইনকেই সম্বর্ধনা দেওয়ার ঘটনায় গোটা শহর জুড়ে শুরু হয়ে গেল তোলপাড়। পরিস্থিতি বেগতিক দেখে তড়িঘড়ি ওই পুলিশ অফিসারকে শোকজ করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন জেলা পুলিশ সুপার কামনাশীষ সেন। যদিও এদিন পুলিশের একটি সূত্র থেকে জানা গেছে, এই ঘটনার পরই বিশ্বনাথ পাইনকে পুলিশ লাইনে ক্লোজড করা হয়েছে। এই ঘটনায় রীতিমত বিরোধীদের তোপের মুখে পড়েছে জেলা পুলিশ মহল। একইসঙ্গে ওই মঞ্চেই নিজেদের লোকদের না ধরার জন্য খোদ তৃণমূল কংগ্রেসের নেতা তথা বর্ধমান দক্ষিণের বিধায়ক খোকন দাস ওই ওসিকে আবেদন করার ঘটনায় বিতর্ক তীব্র আকার নিয়েছে। উল্লেখ্য, বৃহস্পতিবার সন্ধায় বর্ধমানের খাগড়াগড় মাদ্রাসা মোড় এলাকায় তৃণমূল কংগ্রেস এবং খাগড়াগড় যুব সংঘের উদ্যোগে এলাকার গরীব মানুষদের মশারি বিলির আয়োজন করা হয়। ওই মশারি বিলির অনুষ্ঠানেই হাজির ছিলেন বিধায়ক খোকন দাস-সহ এলাকার তৃণমূল নেতারা। আর সেই মঞ্চেই পুলিশের পোশাক পড়েই হাজির হন বিশ্বনাথ পাইন। তৃণমূলের তরফে তাঁকে দেওয়া হয় সম্বর্ধনা। সেই ছবি ছড়িয়ে পড়তেই সমালোচনার ঝড় উঠতে শুরু করে। শুক্রবার বিজেপি বর্ধমান সাংগঠনিক জেলা কমিটির সহ-সভাপতি শ্যামল রায় জানিয়েছেন,”এই অভিযোগই তো আমরা দীর্ঘদিন ধরে করছি। পুলিশ তৃণমূলের হয়ে কাজ করছে। আজ তা প্রমানিত হল। পুলিশ তৃণমূলের দলদাসে পরিণত হয়েছে। সামনে পঞ্চায়েত ভোট কাজেই পুলিশ যে তার নিরপেক্ষ ভূমিকা পালন করবে না তা এই ঘটনা থেকেই বোঝা যাচ্ছে।” এব্যাপারে জেলা যুব কংগ্রেস সভাপতি গৌরব সমাদ্দার আরও একধাপ এগিয়ে গিয়ে সরাসরি পুলিশ মন্ত্রীর পদত্যাগই দাবী করেছেন। শুক্রবার তিনি বলেছেন, এই ঘটনা নতুন কিছু না হলেও পুলিশ যে তৃণমূলের হয়েই কাজ করে এই ঘটনা তা থেকেই প্রমাণিত। তিনি বলেন, পুলিশ তৃণমূল আর প্রশাসন সব একাকার হয়ে গেছে ২০১১ সালের পর থেকেই। গৌরব বলেন, বিধায়ক ওই ওসির কাছে নিজেদের ছেলেদের না ধরার যে কথা বলেছেন তাতে বিধায়কের বিরুদ্ধেই তো ব্যবস্থা গ্রহণ করা উচিত। কারণ বিধায়কের ওই ঘোষণার পরই এলাকার মানুষ সমস্বরে বিধায়কের বক্তব্যকে সমর্থন করেন। এদিকে, এই ঘটনায় তৃণমূলের বিরুদ্ধে বিরোধীরা সমালোচনায় মুখর হলেও তৃণমূলের জেলা মুখপাত্র প্রসেনজিত দাস ওই পুলিশ ওসি-সহ বিধায়কের পাশেই দাঁড়িয়েছেন। শুক্রবার তিনি জানিয়েছেন, ওই ওসি ডিউটিরত অবস্থায় গেছেন কিনা প্রশাসন দেখবে। যে কাজে গেছিলেন সেটা সামাজিক কাজ। ডেঙ্গু প্রতিরোধে গরীব মানুষদের মশারি দেওয়া হচ্ছিল। সেই কাজ তো ভাল। তবে গোটা বিষয়টি প্রশাসন দেখবে। বিরোধীদের সমালোচনার জবাবে তিনি জানিয়েছেন, বিরোধীদের সঙ্গে লোকজন নেই। মানুষ ওদের প্রত্যাখ্যান করেছে। ওদের কথার জবাব না দেওয়াই ভাল। ওদের কাজই সকাল থেকে তৃণমূলের সমালোচনা করা। বিধায়ক খোকন দাসের বক্তব্য সম্পর্কে প্রসেনজিত বলেছেন, বিধায়ক কী বলেছেন সেটা তিনিই বলতে পারবেন। যেহেতু তিনি বিধায়ক অর্থাৎ, জনপ্রতিনিধি, তাই কী বলতে হবে বা হবে না, তা তিনি ভালই জানেন।