গণেন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায়, বর্ধমান (পূর্ব বর্ধমান) :- সম্পত্তি নিয়ে বিবাদের জেরে যুবককে কাটারির কোপ মেরে খুনের ঘটনায় মৃতের দাদা ও বৌদিকে গ্রেপ্তার করেছে বর্ধমান থানার পুলিস। ধৃতদের নাম দিলীপ পণ্ডিত ও নীলম পণ্ডিত। বর্ধমান শহরের ভাতছালা এলাকায় তাদের আদি বাড়ি। স্ত্রী ও আড়াই বছরের বাচ্চাকে নিয়ে শহরের আঁজিরবাগানের লিচুবাগান এলাকায় থাকে দিলীপ। সোমবার সকালে বর্ধমান শহরের বড়বাজার এলাকায় ঘোরাঘুরির সময় পুলিস তাদের ধরে। মৃতের নাম বিজয় পণ্ডিত (২৩)। বিজয়কে খুনের কথা দাদা ও বৌদি কবুল করেছে বলে পুলিসের দাবি। এদিনই ধৃতদের বর্ধমান আদালতে পেশ করা হয়। খুনে ব্যবহৃত কাটারি উদ্ধারের জন্য এবং ঘটনার পুনরনির্মাণ করতে ধৃতদের ৩ দিন পুলিসি হেপাজতে নেওয়ার জন্য আদালতে আবেদন জানান তদন্তকারী অফিসার সাধনচন্দ্র পাত্র। কর্মবিরতির কারণে কোনও আইনজীবী এদিন ধৃতদের হয়ে দাঁড়ান নি। তদন্তকারী অফিসারের আবেদন মঞ্জুর করেন সিজেএম রতন কুমার গুপ্তা।
পুলিস জানিয়েছে, ভাতছালা এলাকায় মা মালতি পণ্ডিতকে নিয়ে থাকতেন বিজয়। লিচুবাগানে তাঁদের আরও একটি বাড়ি আছে। সেখানেই পরিবার নিয়ে থাকে দিলীপ। শুক্রবার বিকালে ছেলেকে নিয়ে ভাতছালার বাড়িতে আসে দিলীপ। সন্ধ্যায় দাদা ও ভাইপোকে বাইকে লিচুবাগানের বাড়িতে পৌঁছাতে যায় বিজয়। রাতে তিনি বাড়ি ফেরেন নি। পরেরদিন সকালে আঁজিরবাগানের বাড়ির কলতলায় বিজয়ের রক্তাক্ত মৃতদেহ পড়ে থাকতে দেখেন তাঁর মা। মৃতের মাথায় গভীর ক্ষতচিহ্ন ছিল। ঘটনার পরই স্ত্রী ও ছেলেকে নিয়ে গা ঢাকা দেয় দিলীপ। তাঁর ছোট ছেলেকে বড় ছেলে ও পুত্রবধূ খুন করেছে বলে শনিবার বর্ধমান থানায় অভিযোগ করেন মালতি দেবী। তার ভিত্তিতে খুনের মামলা রুজু করে তদন্তে নামে পুলিস। তদন্তে নেমে পুলিস জানতে পারে, বেশ কিছুদিন ধরে সম্পত্তি নিয়ে দাদার সঙ্গে বিরোধ চলছিল বিজয়ের। বিহারেও তাদের পারিবারিক সম্পত্তি আছে। সেই সম্পত্তি তার নামে করে দেওয়ার জন্য মাকে চাপ দেয় দিলীপ। কিন্তু, তাতে বাধা দেয় বিজয়। মালতি দেবীও বড় ছেলের নামে সম্পত্তি লিখে দিতে রাজি হননি। এছাড়াও ব্যাবসার টাকা-পয়সার ভাগ-বাটোয়ারা নিয়েও দু’ভাইয়ের মধ্যে অশান্তি চলছিল। এছাড়াও নীলমের সঙ্গে বিবাহ বহির্ভূত সম্পর্ক ছিল বিজয়ের। এনিয়েও ভাইয়ের প্রতি ক্ষোভ ছিল দিলীপের। তাই, তাঁকে পৃথিবী থেকে সরিয়ে দেওয়ার পরিকল্পনা নেয় দিলীপ ও তার স্ত্রী। সেইমতো পরিকল্পনা করে ঘটনার দিন বিজয়কে আঁজিরবাগানের বাড়িতে ডেকে নিয়ে যায় দিলীপ। কিছুক্ষণ বসার পর বিজয় কলতলায় মুখ ধুতে যায়। সেই সময় পিছন থেকে তিনবার কাটারি দিয়ে বিজয়ের মাথায় কোপ বসায় দিলীপ। কিছুক্ষণের মধ্যেই মারা যায় বিজয়। এরপর দেহ ফেলে রেখে স্ত্রী ও ছেলেকে নিয়ে বিহারে এক আত্মীয়ের বাড়িতে যায় দিলীপ। সেই আত্মীয় দিলীপ ও তার স্ত্রীকে পুলিসের কাছে আত্মসমর্পণের পরামর্শ দেন। এরপরই তারা বর্ধমানে ফিরে আসে।