বর্ধমান (পূর্ব বর্ধমান) :- ঝাড়খণ্ডের জামতারা গ্যাংয়ের তিন প্রতারক বর্ধমান শহরে ঘরভাড়া নিয়ে দিব্যি প্রতারণা চালাচ্ছিল। স্থানীয় বাসিন্দারা কেউ প্রতারকদের টের পায়নি। বর্ধমান থানার পুলিসও জানতে পারেনি প্রতারকদের ডেরার বিষয়ে। কিন্তু, তিন প্রতারক দিল্লি পুলিশের জালে ধরা পড়েছে। শুক্রবার সকালে আলমগঞ্জের একটি ভাড়াবাড়ি থেকে রবি মণ্ডল, রমেশ কুমার মণ্ডল ও মহেন্দ্র কুমার মণ্ডল নামে তিন যুবককে গ্রেপ্তার করেছে দক্ষিণ-পশ্চিম দিল্লির সবদরজং এনক্লেবের সাইবার থানার পুলিশ। রবির বাড়ি ঝাড়খণ্ডের জামতারা জেলার শিয়াতর গ্রামে। ঝাড়খণ্ডেরই দেওঘর জেলার মাের্গা মুণ্ডা থানার কেন্দুয়াতণ্ডে রমেশের বাড়ি। অপরজনের বাড়ি ঝাড়খণ্ডেরই গিরিডি জেলার বেঙ্গাবাদ থানার রাতডি এলাকায়। ধৃতদের সকলের বয়স তিরিশের মধ্যে। ধৃতরা জামতাড়া গ্যাংয়ের সদস্য বলে জানা গিয়েছে। তিনজনই দীর্ঘদিন ধরে প্রতারণায় জড়িত বলে জানতে পেরেছে তদন্তকারীরা। এদিনই রাতে ধৃতদের বর্ধমান সিজেএম আদালতে পেশ করা হয়। হাতিয়ে নেওয়া টাকা উদ্ধার করতে এবং গ্যাংয়ের বাকিদের হদিশ পেতে ধৃতদের দিল্লি নিয়ে যাওয়া প্রয়োজনীয়তার কথা উল্লেখ করে ৯৬ ঘণ্টার ট্রানজিট রিমান্ডের আবেদন জানায় দিল্লি পুলিশ। সেই আবেদন মঞ্জুর করেছেন সিজেএম বিনোদ কুমার মাহাত। ধৃতদের পাতিয়ালা হাউস কোর্টের চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেটের কাছে ২৭ মে-র মধ্যে পেশ করার জন্য তদন্তকারী অফিসারকে নির্দেশ দিয়েছেন সিজেএম। এ সংক্রান্ত একটি রিপোর্টও ই-মেইল করে ২৮ মে-র মধ্যে পাঠানোর জন্য নির্দেশ দিয়েছেন বিচারক।
পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, দিল্লির সেক্টর আর কে পুরম এলাকার বাসিন্দা লক্ষ্মণ আগওয়ালের কাছে এ বছরের ১২ মে একটি মেসেজ আসে। দিল্লির জলবোর্ড থেকে মেসেজটি পাঠানো হচ্ছে বলে উল্লেখ করা হয়। মিটার রিডিং আপ-টু ডেট না করার জন্য তাঁর জলের সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেওয়া হবে বলে মেসেজে জানানো হয়। জলের সংযোগ বিচ্ছিন্ন হওয়া আটকাতে তাঁকে একটি অ্যাপ ডাউনলোড করতে বলা হয়। লক্ষ্মণ তা করেন। এরপর তাঁর কাছ থেকে ব্যাংকের বিভিন্ন তথ্য জানতে চাওয়া হয়। তিনি তা দিয়ে দেন। এরপরই তাঁর রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকে থাকা অ্যাকাউন্ট থেকে ৩৮ হাজার ১৬১ টাকা তুলে নেওয়া হয়। খোঁজখবর নিয়ে লক্ষ্মণ জানতে পারেন, তিনি প্রতারণার শিকার হয়েছেন। জলবোর্ডের কর্মীর পরিচয় দিয়ে তাঁকে ঠকানো হয়েছে। এরপরই তিনি সাইবার থানায় অভিযোগ দায়ের করেন। তদন্তে নেমে সাইবার থানার পুলিশ যে মোবাইল নম্বর থেকে তাঁকে মেসেজ পাঠানো হয়েছিল সেটির সম্পর্কে তথ্য সংগ্রহ করে। এরপর মোবাইল এবং অন্যান্য টেকনিক্যাল সাপোর্টের সাহায্যে ঘটনায় এই তিনজনের জড়িত থাকার কথা জানতে পারে দিল্লি পুলিশ। টেকনিক্যাল সাপোর্টের মাধ্যমে প্রতারকরা বর্ধমান থানা এলাকায় রয়েছে বলে জানতে পারে দিল্লি পুলিশ। এরপরই দিল্লি পুলিশের একটি টিম বর্ধমানে এসে স্থানীয় পুলিশের সাহায্য নিয়ে প্রতারকদের পাকড়াও করে। প্রতারকরা দীর্ঘদিন ধরে সাইবার প্রতারণায় জড়িত বলে দিল্লি পুলিশের অনুমান।
কীভাবে টাকা হাতাতো জামতারা গ্যাং-এর এই পান্ডারা? পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, ধৃতরা তিন ভাগে বিভক্ত হয়ে পুরো প্রক্রিয়াটি সম্পন্ন করতো। ধৃত রবি মন্ডল ফোন করে প্রথমে বিশ্বাসযোগ্যতা অর্জন করত, রমেশ কুমার মণ্ডলের দায়িত্ব থাকত ফোনের ওপারে থাকা ব্যক্তির সমস্ত রকমের ডেটা সংগ্রহ করার। ঠিক এরপরেই মূল কাজ করতো মহেন্দ্র কুমার মন্ডল। রমেশের দেওয়া ডেটা অনুযায়ী আগে থেকেই ভাড়া করা অ্যাকাউন্টে টাকা ট্রান্সফারের ব্যবস্থা করত মহেন্দ্র কুমার মন্ডল অর্থাৎ মহেন্দ্র কুমার মন্ডল লোডারের কাজ করতো। একই সাথে এভিডেন্স কালেক্টর ও ফেক সিম কালেক্টর হিসেবে রবি ও রমেশ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতো। অনেক ক্ষেত্রেই সিম বিক্রেতাদের কাজ থেকেও সিমের ক্রেতাদের বিভিন্ন নথি সংগ্রহ করত এরা। গ্রুপ পরিচালনার ক্ষেত্রে মূল দায়িত্ব পালন করতো মহেন্দ্র কুমার মন্ডল। পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, ধৃতদের কাছ থেকে উদ্ধার হয়েছে ২ টি ল্যাপটপ, ৮ টি মোবাইল, ২৬ টি সিমকার্ড, ১ টি স্কলার ডিভাইস ও নগদ প্রায় ৪০ হাজার টাকা।