বর্ধমান (পূর্ব বর্ধমান) :- সরকারি স্কুলের শিক্ষকদের প্রাইভেট টিউশন পড়ানো নিয়ে জেলা স্কুল পরিদর্শক (মাধ্যমিক শিক্ষা) চিঠি দিয়ে তলব করল পূর্ব বর্ধমান জেলার ৭২ জন শিক্ষককে। এর মধ্যে ৩৬ জন শিক্ষককে সোমবার এবং বাকি ৩৬ জন শিক্ষককে আগামী ২৯ জানুয়ারি ডিআই অফিসে তলব করা হয়েছে। সঙ্গে আনতে বলা হয়েছে তাঁদের স্কুল শিক্ষক হিসাবে চাকরির এপ্রুভ্যাল অ্যাপয়েন্টমেন্ট লেটারও। এই ঘটনায় রীতিমতো শোরগোল পড়েছে জেলায়। সোমবার সকাল থেকেই রীতিমতো লাইন দিয়ে শিক্ষকরা ডিআই অফিসে হাজিরাও দিয়েছেন। শিক্ষকদের সুবিধার্থে এদিন কয়েকটি টেবিলে তাঁদের বক্তব্যও শোনা হয়েছে। যদিও এই বিষয় সম্পর্কে রীতিমতো বিস্ফোরক বক্তব্য প্রাইভেট টিউশনকারী শিক্ষক সংগঠন ওয়েস্টবেঙ্গল প্রাইভেট টিউটরস ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশনের রাজ্য সভাপতি হীরালাল মণ্ডলের। তিনি জানিয়েছেন, সরকারি সাহায্যপ্রাপ্ত এবং সরকারি স্পনসর স্কুলের শিক্ষকদের প্রাইভেট পড়ানোর বিষয়ে আমরা পর্ষদ সভাপতিকে রাজ্যের ২২ জেলার তথ্য দিয়ে অভিযোগ জানিয়েছিলাম। গত বছরের ১ মে হাইকোর্টের ডিভিশন বেঞ্চ রায় দিয়েছিলো অভিযুক্ত শিক্ষকদের বিরুদ্ধে ডিসিপ্লিনারি একশেন নেবেন পর্ষদ সভাপতি। কোন জেলায় কোন কোন শিক্ষক এই ধরনের কাজ করছেন সেই তালিকা দিয়ে আমরা পর্ষদ সভাপতির কাছে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি করেছিলাম। সেই প্রেক্ষিতে পর্ষদ থেকে প্রতিটি জেলায় সংশ্লিষ্ট তালিকা পাঠিয়ে ব্যবস্থা নিতে বলা হয়। ওই তালিকায় পূর্ব বর্ধমান জেলার বিভিন্ন সরকারিক স্কুলের ২০৬ জন শিক্ষকের নাম জমা দেওয়া হয়েছিল। সেই তালিকা থেকেই এই ৭২ জনকে ডাকা হয়েছে। আশাকরি বাকিদেরও ডাকা হবে। তবে জেলার স্কুল শিক্ষা দপ্তর যেটা করছে তাতে আমরা সন্তুষ্ট নয়, এটা নাটক। আদালত তদন্ত করতে বলেছে। পর্যষদ জেলায় ডিআই-কেও তদন্ত করতে বলেছে। আমাদের কাছে তদন্তের অর্থ ডেকে মুচলেকা নেওয়া নয়। তদন্ত মানে – অভিযুক্ত শিক্ষক কোথায় পড়ান? তাঁর কাছে কতজন পড়ে? ওই শিক্ষকের কত টাকা আয়? তাঁর সম্পত্তি কত? পঠনপাঠনের জায়গার পরিকাঠামো কী আছে এবং এর সঙ্গে ওই শিক্ষকদের প্রতিবেশীদের বক্তব্যও জানার কথা। তিনি বলেন, আমরা তদন্ত চাই। ডিআই যা করছে আমরা লক্ষ্য রাখছি। ডিআই এই সমস্ত করে পর্ষদকে রিপোর্ট পাঠাবেন। পর্ষদের সাথে আমাদেরও কথা হয়েছে, সামনের মাসে আমাদের দেখা করতে বলা হয়েছে। সব জেলা থেকে এখনও পর্ষদে রিপোর্ট জমা পরেনি। ডি আই যদি সমস্ত অভিযুক্ত শিক্ষকদের নিরপরাধ বানিয়ে রিপোর্ট পাঠিয়ে দেন তাহলে আমরা পর্ষদ ঘেরাও করবো। সঠিক তদন্ত হয়নি, ঠান্ডা ঘরে বসে তদন্তের নামে প্রহসন হচ্ছে। হীরালালবাবু জানিয়েছেন, গোটা রাজ্যের ৪ হাজার শিক্ষকের তালিকা পর্ষদে জমা দেওয়া হয়েছিল। আমরাও তদন্তে যুক্ত থাকতে চাইছি। আমাদের দাবি আমরা প্রমাণ করে দেবো। আমরা ডিআইদের বিরুদ্ধে এবার আদালতে মামলা করবো। অপরাধী শিক্ষা দপ্তর, ওরা সাজা দিলে সরকারি স্কুলের শিক্ষকরা প্রাইভেট টিউশনি পড়াতেন না। পর্ষদে আমরা সামনের মাসে দেখা করে প্রমাণ করে দেবো ডিআইরা মিথ্যে কথা বলছেন বলে জানিয়েছেন হীরালাল মণ্ডল।