বিজেপি থেকে মুখ ঘোরালো ঘোষেরা, পাল্টা নির্দল হিসাবে নির্বাচনে লড়াইয়ে নামার প্রস্তুতি শুরু
admin
বিপুন ভট্টাচার্য, বর্ধমান (পূর্ব বর্ধমান) :-বিজেপিকে সমর্থনের রাস্তা থেকে সরে দাঁড়ালো রাজ্য গাভী কল্যাণ সমিতি। রবিবার সাংবাদিক বৈঠক করে রাজ্য ঘোষ এণ্ড গাভী কল্যাণ সমিতির রাজ্য সভাপতি বাপ্পাদিত্য ঘোষ এই ঘোষণা করেছেন। তিনি জানিয়েছেন, দীর্ঘদিন ধরেই গোটা রাজ্য জুড়ে গোপালকদের বিবিধ সমস্যা নিয়ে তাঁরা ২০ দফা দাবী জানিয়ে আসছেন। গোটা রাজ্য জুড়েই তাঁরা দুধ ও ছানার সরকারী সহায়ক মূল্য প্রদান সহ গো পালকদের সরকারী বিভিন্ন সুযোগ সুবিধা প্রদানের ২০ দফা দাবীকে সামনে রেখে আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছেন। রাজ্যের বিভিন্ন জেলায় জেলায় রাস্তার ওপর দুধ ফেলে দিয়ে বিক্ষোভ দেখানো হয়েছে। রবিবার সাংবাদিক বৈঠকে বাপ্পাদিত্য ঘোষ জানিয়েছেন, গোটা রাজ্যে তাঁদের প্রায় ৩৮ শতাংশ ভোটার রয়েছে। তিনি জানিয়েছেন, দিনের পর দিন তাঁরা বঞ্চনার শিকার হয়ে থাকবেন – এটা হতে পারে না। এতদিন ধরে তাঁরা দাবীই জানিয়ে গেছেন। কিন্তু কোনো সুরাহা হয়নি। জলের দাম বেশি কিন্তু দুধের দাম কম – এই অবস্থার পরিবর্তন চান তাঁরা। দুধ, ছানার সরকারী সহায়ক মুল্য নির্ধারণ সহ দেশের জনসংখ্যার ৩৮ শতাংশ ঘোষ সম্প্রদায় হওয়ায় সাংসদ ও বিধায়ক নির্বাচনে তারা সংরক্ষণের দাবীও তুলেছেন। এছাড়াও গোপালকদের ৪০ শতাংশ সরকারী ভর্তুকি প্রদান করা, গো খাদ্যের ওপর ৪০ শতাংশ ভর্তুকি প্রদান করা, সরকারের পক্ষ থেকে ফ্যাট মেশিন সরবরাহ করা, ব্লকে ব্লকে সরকারী দুধের সেণ্টার খোলা, গোপালকদের ও গরু, মোষের জন্য বীমার সুবিধা প্রদান করা প্রভৃতি বিভিন্ন দাবী তোলা হয়েছে। এদিন সাংবাদিক বৈঠকে তিনি জানিয়েছেন, দীর্ঘদিন ধরে রাজ্যের ক্ষমতাসীন তৃণমূল কংগ্রেসের একাধিক নেতা–মন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণ করেছেন তাঁরা। লাভ হয়নি। সম্প্রতি এই দাবীগুলি পূরণের লক্ষ্যে বর্ধমানে কার্জন গেটের সামনে আমরণ অনশনে বসেন বাপ্পাদিত্য ঘোষ। ৩দিন অনশন চলার পর খোদ বিজেপির কেন্দ্রীয় নেতা কৈলাশ বিজয়বর্গী অনশন মঞ্চে এসে তাঁর অনশন ভঙ্গ করেন। একইসঙ্গে তাঁদের দাবী পূরণের আশ্বাসও দিয়ে যান। আর তার পরিপ্রেক্ষিতেই পাল্টা রাজ্য ঘোষ এণ্ড গাভী কল্যাণ সমিতি তাঁদের পূর্ণ সমর্থন বিজেপিকেই দেবার প্রতিশ্রুতি দেন। কিন্তু ভোট যত এগিয়ে আসতে শুরু করে ততই তাঁদের দাবী নিয়ে কোনো উচ্চবাচ্য করেনি বিজেপি। বাপ্পাদিত্যবাবু জানিয়েছেন, কিছুদিন আগে খোদ বিজেপির কেন্দ্রীয় ও রাজ্য নেতা জয় ব্যানার্জীও বাপ্পাদিত্য ঘোষের বাড়িতে আসেন, একান্তে বৈঠক করেন। রবিবার বাপ্পাদিত্যবাবু জানিয়েছেন, বিজেপি জানিয়েছে আগে তাঁদের সমর্থন দিতে হবে তারপরেই তাঁদের দাবীদাওয়া নিয়ে বিজেপি এগোবে। তিনি জানিয়েছেন, বিজেপির এই মিথ্যা প্রতিশ্রুতির জন্যই তাঁরা বিজেপির প্রতি সমর্থনের পথ থেকে সরে আসার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। এরই পাশাপাশি তিনি জানিয়েছেন, তৃণমূল কংগ্রেস এবং বিজেপি কেউই তাঁদের প্রতি সুবিচার করেনি। ইতিমধ্যেই কংগ্রেস নেতৃবৃন্দের সঙ্গে তাঁদের কথা চলছে। কংগ্রেস তাঁদের দাবী নিয়ে লড়াই করলে তাঁরা কংগ্রেসকেই সমর্থন করবেন। কিন্তু এব্যাপারে আগামী ২৪ ঘণ্টার মধ্যে তাঁদের লিখিত প্রতিশ্রুতি না পেলে ঘোষ এণ্ড গাভী কল্যাণ সমিতির সমর্থনে তাঁরা নির্দল হিসাবে নির্বাচনী ময়দানে নামার সিদ্ধান্তও নিচ্ছেন। বাপ্পাদিত্যবাবু জানিয়েছেন, পূর্ব বর্ধমান জেলায় ঘোষ তথা গোপালকদের জনসংখ্যা প্রায় ৫ লক্ষের কাছাকাছি। স্বাভাবিকভাবেই তাঁরা নির্বাচনী ময়দানে নামলে অনেকের কাছেই দুশ্চিন্তার কারণ হয়ে দাঁড়াবেন। তাঁরা চেয়েছিলেন যে কোনো রাজনৈতিক দল তাঁদের দাবীগুলি নিয়ে সরকারের সঙ্গে আলোচনা করে সমাধান করুক। কিন্তু কেউ যখন এগিয়ে এলো না, তাঁরা তৈরী হচ্ছে নির্দল হিসাবে লড়াই করার জন্য। সেক্ষেত্রে তিনি নিজে বর্ধমান দুর্গাপুর লোকসভা আসনে প্রার্থীও হতে পারেন। উল্লেখ্য, রবিবার বর্ধমান জেলা পরিষদের সভাঘরে সাংবাদিক বৈঠকের পাশাপাশি পূর্ব বর্ধমান ছাড়াও পার্শ্ববর্তী ৪টি জেলার সংগঠনের নেতাদের নিয়ে বৈঠকও হয়। সেখানে এই বঞ্চনার প্রতিবাদে ভোট বয়কটের বিষয়টি নিয়েও সিদ্ধান্ত হয়। যদি সিংহভাগ চাইছেন নির্দল হিসাবে প্রতিদ্বন্দ্বি করুক ঘোষ এণ্ড গাভী কল্যাণ সমিতির সদস্যরা।