বিপুন ভট্টাচার্য, বর্ধমান (পূর্ব বর্ধমান) :- প্রথমবারের ধাক্কা সামলে এবার দ্বিগুণ উত্সাহে শুরু হচ্ছে মুখ্যমন্ত্রীর স্বপ্নের মিষ্টি হাবের দ্বিতীয় পর্যায়ের কাজ। ইতিমধ্যেই মিষ্টি হাবের দ্বিতীয় তলের কাজ সম্পূর্ণ হয়েছে। আর তাই জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে মিষ্টি হাবকে ব্যাপকভাবে চালু করার জন্য এই দ্বিতীয় তলে কেবলমাত্র মিষ্টিই নয় তার সঙ্গে অন্যান্য আরও কিছু আঞ্চলিক ও নামীদামী কোম্পানীর স্টল দিতে চলেছে। ইতিমধ্যেই এব্যাপারে টেণ্ডার ডাকাও হয়েছে। জেলাশাসক অনুরাগ শ্রীবাস্তব জানিয়েছেন, মিষ্টি হাবের এই দ্বিতীয় তলে পূর্ব বর্ধমানের আগ্রহী ব্যবসায়ীদের অগ্রাধিকার দেওয়া হবে। বর্ধমানের মিষ্টি এবং বিভিন্ন খাবারে ছাড়াও নামী-দামী ব্রাণ্ডেড কোম্পানীর ফ্যানচাইজিসকেও এখানে সুযোগ দেওয়া হবে। তিনি জানিয়েছেন, আগামী পুজোর আগেই তাঁরা পুরোদমে এই মিষ্টি হাবকে চালু করতে চাইছেন। চলতি আগষ্ট মাসের ১৪ তারিখের মধ্যে টেণ্ডার জমা করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। ইতিমধ্যেই এব্যাপারে জেলা প্রশাসনের একটি উচ্চ পর্যায়ের কমিটি তৈরী করা হয়েছে। আবেদনকারীদের আবেদনপত্র পরীক্ষা করবেন তাঁরা। জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, মুখ্যমন্ত্রীর স্বপ্নের এই মিষ্টি হাব তৈরীর পর তা আশানুরূপ হয়নি। বর্ধমান শহর ঢোকার মুখে ২নং জাতীয় সড়কের পাশে জোতরামের বামচাঁদাইপুর এলাকায় এই মিষ্টি হাব তৈরীর পর প্রশাসন আশা করেছিল তা বিপুল উত্সাহ নিয়েই চলবে। কিন্তু বাস্তবে দেখা গেছে সম্পূর্ণ উল্টো চিত্র। বর্ধমানের সীতাভোগ, মিহিদানা ছাড়াও জেলার অন্যান্য প্রান্তে থাকা বিভিন্ন নামীদামী মিষ্টির সম্ভার নিয়ে শুরুও হয়েছিল ১৫টি স্টল। কিন্তু কার্যত ক্রেতার অভাবে মুখ থুবড়ে পড়ে গোটা প্রকল্প। প্রথম কয়েকদিন লোকসানে দাঁতে দাঁত চেপে ব্যবসায়ীরা দোকান চালু করলেও লাগাতার লোকসানের জেরে তাঁরা বন্ধ করে দেন। ব্যতিক্রম একটিমাত্র দোকান। চালু হওয়ার পর থেকে একটিমাত্র দোকান সেখানে শিবরাত্রির সলতের মতই চালু রয়েছে। কিন্তু সেখানেও প্রতিদিন গড়ে লোকসানের বহর বেড়ে চলেছে। ওই চালু থাকা দোকানের এক কর্মী জানিয়েছেন, কোনো বিক্রি নেই। কেউ আসেই না। স্বাভাবিকভাবেই প্রতিদিন মিষ্টি তৈরী করে তা নষ্ট হচ্ছে। শুধু তাইই নয়, এর সঙ্গে লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে মিষ্টি হাবের বিদ্যুতের বিল। যা গিয়ে পৌঁছেছে প্রায় ৫২ হাজার টাকায়। কিন্তু এই টাকা কে দেবেন তা নিয়ে দেখা দেয় সমস্যা। যদিও জেলা প্রশাসনের কর্তারা মিষ্টি ব্যবসায়ীদের নিয়ে আলোচনা করে এই সমস্যা মিটিয়েছেন। কিন্তু তারপরেও শুরু হয়নি মিষ্টি হাব। ইতিমধ্যে ২নং জাতীয় সড়ককে ফোর লেনের পরিবর্তে সিক্স লেন এবং দুপাশে সার্ভিস রোড তৈরীর কাজ শুরু করে দিয়েছে ন্যাশনাল হাইওয়ে অথরিটি। আশংকা দেখা দেয় এই রাস্তা চওড়া করায় মিষ্টি হাবের সামনের কিছু অংশ ভাঙা পড়বে কিনা তা নিয়ে। প্রাথমিকভাবে প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, মিষ্টি হাবের মূল ভবনে কোনো ক্ষতি হবে না। তবে মিষ্টি হাবের সামনের অনেকটা জায়গাই দখলে চলে যাবে এনএইচের হাতে। এরই পাশাপাশি এই মিষ্টি হাবের সামনে উড়ালপুল করারও বিষয়েও আলোচনা শুরু হয়েছে। একইভাবে বর্ধমানের ল্যাংচা হাব শক্তিগড়ের দোকানগুলিও ভাঙা পড়তে চলেছে এই রাস্তা সম্প্রসারণের জন্য। তাই সেখানেও বিকল্প উড়ালপুল তৈরীর বিষয়ে আলোচনা চলছে। জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, মিষ্টি হাবের এই দ্বিতীয় তলে শক্তিগড়ের এই ল্যাংচা হাব ক্ষতিগ্রস্থ হওয়ায় তাদের এখানে আশার জন্য বার্তা দেওয়া হয়েছে টেণ্ডারে। একইসঙ্গে মিষ্টি হাব যাতে রীতিমত জনপ্রিয় আকার নিতে পারে তাই খাবারের নামীদামী কোম্পানীর ব্রাঞ্চ এখানে খোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। যদিও মিষ্টি হাবের ব্যবসায়ীদের মূল বক্তব্য, এই মিষ্টি হাব না চলার মূল কারণ ক্রেতার অভাব। বিশেষ করে তাঁরা বারবার জেলা প্রশাসনের কাছে আবেদন করেছেন এই মিষ্টি হাবের সামনে বাস দাঁড় করানো হোক। কিন্তু জেলাশাসক অনুরাগ শ্রীবাস্তব জানিয়েছেন, এই দাবী তাঁদের পক্ষে মানা সম্ভব নয়। আর এরপরেই ঘুরপথে মিষ্টি হাবের ব্যবসায়ীরা মিষ্টি হাবের সামনে বাস দাঁড় করানোর উদ্যোগ নিয়েছেন। একইসঙ্গে তাঁরা আশা করছেন জাতীয় সড়ক সম্প্রসারণ হবার পর শক্তিগড়ে বাস দাঁড়ানোর কোনো সম্ভাবনা থাকবে না। তাই সেক্ষেত্রে মিষ্টি হাবের সামনে বাস দাঁড়ালে ক্রেতাও পাবেন তাঁরা। জানা গেছে, ইতিমধ্যেই তাঁরা দক্ষিণবঙ্গ রাষ্ট্রীয় পরিবহণ সংস্থার কর্তাদের সঙ্গে তাঁরা শর্তসাপেক্ষে আলোচনা করেছেন। তাঁরা রাজী হয়েছেন মিষ্টি হাবের সামনে বাসের স্টপ দেবেন। আর তা যদি হয় তাহলেই আগামী দিনে মুখ্যমন্ত্রীর স্বপ্ন বাস্তবে সাকার নেবে – এমনটাই আশা করছেন ব্যবসায়ীরা।