E Purba Bardhaman

মহালয়ার দিন উদ্বোধন হতে পারে বর্ধমান-কাটোয়া রেল ওভারব্রীজ, জোর কদমে চলছে কাজ

DM, SP & others officials of the Purba Bardhaman district visited the work of constructing Burdwan-Katwa Railway Over Bridge

বর্ধমান (পূর্ব বর্ধমান) :- কিছুটা হলেও জেলা বাসীর কাছে সুখবর নিয়ে এল পূর্ব বর্ধমান জেলা প্রশাসন। রবিবার পূর্ব বর্ধমানের জেলাশাসক বিজয় ভারতী জানিয়েছেনআগামী পুজোর আগেই এবং সম্ভবত মহালয়ার দিনই উদ্বোধন হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে বর্ধমান শহরের রেলওয়ে ওভারব্রীজের। শনিবার জেলাশাসকের নেতৃত্বে রেলওয়ে ওভারব্রীজ নির্মাণকারী সংস্থার প্রতিনিধিপূর্ব রেলের প্রতিনিধি সহ জেলা পুলিশ ও প্রশাসনের পদস্থ আধিকারিকরা এই ব্রীজের কাজ এবং ভবিষ্যত পরিকল্পনা নিয়ে বৈঠক করলে ওভারব্রীজেই। জেলাশাসক ছাড়াও হাজির ছিলেন জেলা পুলিশ সুপার ভাস্কর মুখোপাধ্যায়পূর্তপুরসভার আধিকারিকরাও। পরে জেলাশাসক জানিয়েছেনরেলওয়ে ওভারব্রীজের এ্যাপ্রোচ রোডের জায়গা নিয়ে কিছু জটিলতা ছিল তা মিটে গেছে। আরওবি রাজ্য সরকারের চুক্তি মোতাবেক টাকা না পাওয়ায় কাজ কিছুটা শ্লথ হয়ে পড়েছিল। যাবতীয় এই সমস্ত জটিলতা কাটানো গেছে। ইতিমধ্যেই রাজ্য সরকার তার শেয়ারের টাকা দিয়েছে। ফলে তাঁরা আশা করছেন আগামী পুজোর আগেই এবং তাঁরা চেষ্টা করছেন মহালয়ার দিনই এই ব্রীজের উদ্বোধন করা সম্ভব হবে। উল্লেখ্য২০১২ সালে ১৮৮.৪৩১ মিটার লম্বা এবং ২৭.৭ মিটার চওড়া দুদিকে ১.৫ মিটার চওড়া ফুটপাত থাকা ,২৮৮ কোটি টাকা ব্যয়ে বর্ধমান ষ্টেশনের ওপর দিয়ে এই ঝুলন্ত দীর্ঘতর ব্রীজের মধ্যবর্তী স্তরের কাজ শেষ হয়ে যায় ২০১৫ সালেই। কাটোয়া রোড,কালনা রোডদুর্গাপুর মুখী রোড ছাড়াও চতুর্মুখী এই ব্রীজের একটি রাস্তা শহরের মধ্যে ঢুকছে। উল্লেখ্যবর্ধমান ষ্টেশনের ওপর ব্রিটিশ আমলে তৈরী হওয়া বর্ধমান কাটোয়া ওভারব্রীজ ক্রমশই ধ্বংসের মুখে পড়ায় তা মেরামতের পাশাপাশি নতুন করে আরও চওড়া ব্রীজের দাবী ক্রমশই জোড়ালো হয়ে উঠতে শুরু করে। এরপরই ১৯৯৬ সালে এই ব্রীজ তৈরীর পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়। কিন্তু তত্কালীন রাজ্য সরকারের পক্ষ থেকে আশ্বাস না মেলায় ব্রীজের পরিকল্পনা থমকে যায়। এরপর ২০০৭ সালে ফের ব্রীজ নিয়ে নড়েচড়ে ওঠে তত্কালীন বাম সরকার। ২০০৮ সালে রাজ্য সরকার এব্যাপারে ফের বৈঠক করে। মূলতবর্ধমান ষ্টেশনের ওপরে থাকা পুরনো যে ব্রীজটি তার পিলার বর্ধমান ষ্টেশনের ওপরে থাকায় ষ্টেশনের প্লাটফর্ম বাড়ানোর ক্ষেত্রে সমস্যাও দেখা দিচ্ছিল। ক্রমবর্ধমান চাহিদার কথা মাথায় রেখে বর্ধমান ষ্টেশনকেও আরও বাড়ানোর প্রয়োজন ছিল। ফলে সবমিলিয়ে শেষ পর্যন্ত ২০১২ সালে এই ব্রীজের কাজ শুরু হয়। কথা ছিল ২০১৬ সালেই তা শেষ হবে। কিন্তু রেলের দায়িত্বে থাকা রেললাইনের ওপরে ঝুলন্ত সেতুর কাজ সম্পন্ন হয়ে গেলেও এ্যাপ্রোচ রোড নিয়ে জটিলতা দেখা দেয়। যাইহোকঅবশেষে সেই সমস্ত জটিলতা কাটিয়ে একেবারে অন্তিম লগ্নের ব্রীজের কাজ দ্রুততার সঙ্গে শেষ করার বিষয়ে রাজ্য সরকারও এগিয়ে এসেছে তাঁদের বকেয়া টাকা প্রদানের মাধ্যমে। জেলাশাসক জানিয়েছেনব্রীজের কাজ শেষ হয়ে গেলেই তাঁরা উদ্বোধন করবেন। একইসঙ্গে ব্রীজের তলায় তাঁরা বেশ কিছু ঘর তৈরী করবেন। পূর্ত ও পুরসভা সেগুলির দেখভাল করবেন। উল্লেখ্যচুক্তি মোতাবেক মোট টাকার অর্ধেক দেবার কথা রেলের এবং বাকি টাকা রাজ্য সরকারের দেওয়ার কথা ছিল। কিন্তু রাজ্য সরকারের প্রদত্ত টাকা সময়ে না পাওয়ায় কাজের গতি ধীর হয়ে যায়। ফলে কবে এই ব্রীজ চালু হবে তা নিয়ে রীতিমত বিতর্ক দেখা দেয়। ব্রীজ চালু না হওয়ায় সাধারণ মানুষের যাতায়াতেও প্রতিদিন চরম দুর্ভোগের মধ্যে পড়তে হ। আরভিএনএলের প্রজেক্ট ডিরেক্টর প্রদ্যুৎ কুমার মুখোপাধ্যায় বলেনতাঁরা চেষ্টা করছেন পুজোর আগেই কাজ শেষ করতে। বর্ষা নেমে যাওয়ায় কাজে একটু সমস্যা হবে। তবে পুজোর আগে তাঁরা হ্যান্ডওভার দিয়ে দিতে পারবেন বলে আশা করছেন। এদিকেএদিন জেলা প্রশাসনের এই ব্রীজ পরিদর্শন এবং বৈঠকের পরে জেলাশাসক জানিয়েছেনএদিনের বৈঠকে ঠিক হয়েছে উড়ালপুলের নিচে সরকারিভাবে বেশ কিছু ঘর তৈরী করা হবে। যেখানে বর্তমানে থাকা কিছু সবজি বাজার সহ ফুটপাতের দোকানদারদের ঘর দেওয়া হবে। লিজের মাধ্যমে এই ঘর দেওয়া হবে পুরসভা ও পূর্ত দপ্তর থেকে। পাশাপাশি ব্রিজের পাশে তৈরী করা হবে একটি পার্কও। এছাড়াও মহিলা পুলিশ থানার আউটপোষ্টট্রাফিক পুলিশের কন্ট্রোলরুমও থাকবে। জেলা পুলিশ সুপার ভাস্কর মুখোপাধ্যায় জানিয়েছেন, ব্রিজের উপরে স্পিডো মিটার লাগানো থাকবে। যা জেলায় প্রথম বসছে। নির্দিষ্ট গতির উপরে কেউ গাড়ি চালালে পুলিশ ব্যবস্থা নেবে। জরিমানা করবে। এছাড়াও গোটা এলাকা সিসিটিভি বসানো হবে। প্রতিদিন কয়েকলক্ষ মানুষ যাতায়াত করেন এই রাস্তা দিয়ে। ফলে নিরাপত্তার বিষয়ে প্রথম থেকেই কড়া নজরদারি করা হবে। বৈঠকে সিধান্ত নেওয়া হয়েছে বেশ কয়েকটি জায়গায় পার্কিং জোন করা হবে। সরকারি ও বেসরকারিভাবে এখানে পার্কিং করার ব্যবস্থা থাকবে। তার সঙ্গে করা হচ্ছে টোটো স্ট্যান্ডও। শহরের মধ্যে গাড়ি ঢোকার ক্ষেত্রে নিয়ন্ত্রন করা হবে প্রথম থেকেই। তিনি জানিয়েছেনএই উড়ালপুলেই থাকবে বর্ধমান মহিলা থানার অধীনে একটি আলাদা মহিলা পুলিশের ইউনিট।

Exit mobile version