এক বছর আগেই কাকদ্বীপে বদলি করা হয় চিকিৎসক বিরূপাক্ষকে, যাননি; ক্যান্টিন মালিক আইনের পথে
admin
বর্ধমান (পূর্ব বর্ধমান) :- বিতর্কিত চিকিৎসক বিরূপাক্ষ বিশ্বাসকে এক বছর আগেই স্বাস্থ্য দপ্তর বদলির নির্দেশ দিলেও গত মঙ্গলবার (৩ সেপ্টেম্বর) তাঁকে বর্ধমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের প্যাথলজি বিভাগ থেকে অব্যাহতি দিল বর্ধমান মেডিকেল কলেজ কর্তৃপক্ষ। তাঁকে ডায়মন্ডহারবার স্বাস্থ্য জেলার কাকদ্বীপ মহকুমা হাসপাতাল ও এমএসএসএইচ-এর সিনিয়র রেসিডেন্ট হিসাবে কাজে যোগ দিতে বলা হয়েছে। অধ্যক্ষ ও এমএসভিপি ওই রিলিজ অর্ডারে সই করেছেন। যদিও এক বছর আগে বদলির নির্দেশ এক বছর পর কার্যকর হওয়ায় মেডিকেল পড়ুয়ারা প্রভাবশালী তত্ত্বকেই খাড়া করেছেন। পাশাপাশি এটা তাঁদের আন্দোলনের জয় বলে দাবি করেন মেডিকেল পড়ুয়ারা। তাঁদের অভিযোগ, অভীক দে ও বিরূপাক্ষ বিশ্বাস বর্ধমান মেডিকেল কলেজে ভয়ের বাতাবরণ অর্থাৎ “থ্রেট কালচার” তৈরি করেছিলেন। এদিকে বিরুপাক্ষের বর্ধমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল থেকে রিলিজ হওয়ার পরই পড়ুয়ারা বর্ধমান মেডিকেল কলেজে একটি মিছিল করেন এবং সেই মিছিল থেকে শ্লোগান ওঠে “থ্রেট কালচারের মাথার এক, বিরূপাক্ষ গো ব্যাক”। অন্যদিকে, বিরূপাক্ষের বিরুদ্ধে বুধবার আবার নতুন করে অভিযোগে সরব হয়েছেন মেডিকেল পড়ুয়া থেকে ক্যান্টিন মালিকও। মেডিকেল কলেজের ক্যান্টিন মালিক সেখ মাখনের অভিযোগ, কয়েক বছরে ক্যান্টিনে বিরূপাক্ষের ধার রয়েছে প্রায় ২৩,৮০০ টাকা। অভিযোগ, বিরূপাক্ষ খাবার অর্ডার দিলে কখনও ক্যান্টিনে খেয়ে যেতেন না। খাবার তার হোস্টেলে পাঠাতে হতো। টাকা চাইলে বলতো টাকা দিয়ে দেবো। টাকা চেয়ে ফোন করলেও ফোন কেটে দিতেন। টাকা না পেয়ে এবার আইনজীবী মারফৎ চিঠি পাঠাবার প্রস্তুতি নিচ্ছেন ক্যান্টিন মালিক। তিনি জানান, বিরুপাক্ষ তাঁর কাছে খেতো। সারাদিনে ১০০ কাপ চাই-ই খেতো। তারসাথে অন্যান্য খাবার, সিগারেট। এখন ২৩৮০০ টাকা পাওনা আছে। ফোন ধরছেন না। এর জন্য আলাদা একটা মোবাইল নম্বর নিয়েছি। এখন পড়ুয়াদের বলছি, তাঁরা দেখছেন বলছেন। অল্প অল্প করে টাকা ফেরত দিতে বলছি, তাও দিচ্ছেন না। আমার গলা পেলেই ফোনে উত্তর দেয় না। ২-আড়াই বছর হয়ে গেছে। মাখনবাবু জানিয়েছেন, ওনার ধমকানো চমকানো দেখেছি। ক্ষমতা আছে বলেই এসব করেন। তৃণমূল করেন। ৪৭ বছরে এই রকম অভিজ্ঞতা নেই। এরপরেই তিনি বলেন, ঠিকানা জোগাড় করেছেন। বিরূপাক্ষবাবুর বাড়িতে উকিলের চিঠি পাঠাবেন। প্রসঙ্গত, আর জি কর কাণ্ডের পর কয়েকদিন আগে একটি অডিও ভাইরাল হয়। তাতে শোনা যায়, এক জুনিয়র পড়ুয়া চিকিৎসককে হুমকি দিচ্ছেন বিরূপাক্ষ। বিরূপাক্ষ যদিও এই অডিওটি সাজানো বলে উড়িয়ে দেন। তবে কী কারণে? কার অঙ্গুলিহেলনে বিরূপাক্ষ বিশ্বাস বদলির নির্দেশের পর আরও এক বছর এখানে থাকলেন এই প্রশ্ন উঠছে। প্রশ্ন উঠছে অভীক দে, বিরূপাক্ষ বিশ্বাস ও সন্দীপ ঘোষ এখানে ভয়ের বাতাবরণ তৈরি করেন। একবছর পর বিরুপাক্ষের রিলিজ নিয়ে কলেজের অধ্যক্ষ মৌসুমি বন্দ্যোপাধ্যায় জানিয়েছেন, চিকিৎসকের অভাবের জন্যই আমরা তাঁকে ছাড়তে পারিনি। এখন স্বাস্থ্য ভবন থেকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে তাই আমরা তাঁকে ছেড়ে দিলাম। এরকম ৬৬ জন সিনিয়র রেসিডেন্ট ছিল বর্ধমান মেডিকেল কলেজে। বিরূপাক্ষের পরও এরকম এখনো ৭ জন চিকিৎসক আছেন বর্ধমানে যাদের ইতোমধ্যেই বদলির অর্ডার হয়ে গেছে। স্বাস্থ্য ভবনের নির্দেশ হলেই আমরা তাঁদেরও ছাড়তে বাধ্য হব। পাশাপাশি তিনি জানান, বর্ধমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে রোগীর চাপ প্রচুর। সেই তুলনায় চিকিৎসক কম আছেন। আমরা স্বাস্থ্য ভবনের কাছে জানাবো বাকি যে কজন আছেন তাঁদের যেন বদলি না করা হয়। অন্যদিকে, কলেজ কাউন্সিলের সঙ্গে মেডিকেল পড়ুয়াদের মিটিং-এর পরই গোটা কলেজ জুড়ে করা হয়েছে দেওয়াল লিখন। দেওয়াল লিখনেই রেভ্যুলেশন, পরিবর্তন ও ফেয়ার বিএমসি করার দাবি করা হয়েছে। পাশাপাশি দেওয়াল লিখনের মাধ্যমে জুনিয়র ডাক্তাররা অভীক-দের কলেজে না ঢোকা, থ্রেট কালচার-সহ মৃত চিকিৎসকের বিচারের দাবিতে সরব হয়েছেন।