বিপুন ভট্টাচার্য, বর্ধমান (পূর্ব বর্ধমান) :- সম্পূর্ণ ব্যক্তিগত উদ্যোগ এবং সেবার মানষিকতায় বীরভূমের বোলপুরের বাসিন্দা ড. দেবপ্রসন্ন চৌধুরী এবার বর্ধমান জেলার একেবারে দরিদ্র, আর্থিকভাবে দুঃস্থ মানুষকে চিকিত্সা, ছাত্রছাত্রীদের শিক্ষার সুযোগ দিতে এগিয়ে এলেন। শুক্রবার বর্ধমানের একটি হোটেলে প্রবাসী বাঙালী দেবপ্রসন্নবাবু বর্ধমানের কয়েকজন সমাজসেবীর সঙ্গে দেখা করে গেলেন। সেখানেই তিনি তাঁর ঐকান্তিক ইচ্ছার কথা জানিয়ে যান। উল্লেখ্য, একদা সংযুক্ত আরব আমিরশাহীরএকটি নামজাদা তেল সংস্থার উচ্চপদস্থ আধিকারিক ছিলেন দেবপ্রসন্নবাবু। এছাড়াও ইতিমধ্যেই তাঁর লেখা তিনটি বই হার্ভাড বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ানো হচ্ছে। তিনি নিজেও বিদেশের তিনটি বিশ্ববিদ্যালয়ের অতিথি অধ্যাপক। কলকাতার নরেন্দ্রপুর রামকৃষ্ণ মিশনের এই প্রাক্তন ছাত্রের এখন ধ্যানজ্ঞান মানুষের সেবা করা। আর সেই কাজ করতে তিনি বেছে নিয়েছেন তিনটি ক্ষেত্রকে। বোলপুরেই তিনি তৈরী করেছেন একটি আউটডোর হাসপাতাল। যেখানে নিখরচায় সমস্ত ধরণের চিকিত্সা এবং ওষুধ দেবার ব্যবস্থা রয়েছে। দুঃস্থ ও গরীব মানুষদের স্বার্থে ২০০০ সাল থেকে চালু হওয়া এই আউটডোর হাসপাতালে ইতিমধ্যেই চিকিত্সা করানো রোগীর সংখ্যা প্রায় ৩ লক্ষ ছাড়িয়ে গেছে। রয়েছে দুটি জরুরী বেডের ইনডোর ব্যবস্থাও। এছাড়াও রয়েছে প্যাথলজিক্যাল ল্যাব। সব ক্ষেত্রেই বিনামূল্যে চিকিত্সা করানো এবং বিনামূল্যে ওষুধ দেওয়া হয়। রয়েছে পঞ্চম শ্রেণী থেকে দ্বাদশ শ্রেণী পর্যন্ত ছাত্রছাত্রীদের ভোকেশনাল প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা। রয়েছে মহিলাদের স্বনির্ভর করার জন্য বিশেষ প্রশিক্ষণও। সমস্ত ক্ষেত্রেই বিনা ব্যয়ে এই কাজ করে যাচ্ছেন তিনি। শুক্রবার বর্ধমানে দেবপ্রসন্নবাবু জানিয়ে গেলেন, কেবলমাত্র বোলপুর নয়, বা বীরভূমও নয়। তিনি চান, গরীব, দুঃস্থ মানুষ যাঁরা অর্থাভাবে চিকিত্সা পাচ্ছেন না, পড়াশোনার সুযোগ পাচ্ছেন না তাঁদের জন্যই এই সেবা কেন্দ্র করা হয়েছে। এদিন বর্ধমান জেলার মানুষকেও এই সুযোগ নেবার আবেদন জানিয়ে যান। তিনি জানিয়েছেন, বিদেশেও তিনি বিভিন্ন ভাবে সাহায্য করছেন। কিন্তু তাঁর লক্ষ্য দেশের মানুষদের জন্য কিছু করার। আর এই কাজ তিনি করতে চান একেবারেই নিজস্বভাবে। অন্য কারো সাহায্য তিনি নেন না। তিনি জানিয়েছেন, তাঁর অনেক ছাত্রছাত্রী এই কাজে উদ্বুদ্ধ হয়ে নিজের নিজের গ্রামেও কাজ শুরু করেছে। তারাও লেখাপড়া শেখাচ্ছেন, স্বাস্থ্য সম্পর্কে সচেতন করছেন, এলাকা পরিষ্কার করার কাজ করছেন। তিনি জানিয়েছেন, তাঁর এই কাজ নিয়ে অনেকেই সন্দেহ করেছেন। এমনকি কয়েকটি পঞ্চায়েত এলাকায় কাজ করতে গিয়ে তাঁদের প্রশ্নের মুখেও পড়তে হয়েছে। অনেকেই জানতে চান তাঁর এই টাকার উত্স কি? দেবপ্রসন্নবাবু জানিয়েছেন, তাঁর পারিবারিক যা আয় এবং তিনি নিজে যা রোজগার করেন তাই দিয়েই তিনি এই সেবার কাজ করছেন। এখানে অন্য কারো কোনো অর্থ নেই। উল্লেখ্য, ইতিমধ্যেই দেবপ্রসন্নবাবুর এই কাজের প্রতি সম্মান জানাতে বোলপুর পুরসভা তাঁর জীবিত অবস্থায় বোলপুরের ওই রাস্তার নামকরণও করেছে তাঁর নামে।