বর্ধমান (পূর্ব বর্ধমান) :- পুরানো স্করপিও গাড়ি কেনার ৫ লক্ষ টাকা জোগার করার জন্য শক্তিগড়ের আমড়ার ল্যাংচা ব্যবসায়ী বলিরাম ওঝার ৫ বছরের ছেলে অনীশ কুমার ওরফে রাজেনকে বাড়ির গাড়ির চালক শেক জামির হোসেন ওরফে রাজ অপহরণ করে বলে জেনেছে পুলিস। গাড়ি বুক করার জন্য কিছুদিন আগে বলিরামের কাছ থেকে ৩০ হাজার টাকা ধার চেয়েছিল জামির। যদিও তা দেননি অনীশের বাবা। সুদে টাকা ধার করেছিল জামির। পাওনাদার তাকে টাকা শোধের জন্য চাপ দিচ্ছিল। গাড়ি কেনার টাকা জোগার এবং দেনার টাকা শোধ করার জন্য অনীশকে জামির অপহরণ করে বলে তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করে জেনেছে পুলিস। শুধু তাই নয়, তার শেখানো মতো মুক্তিপণের টাকা জামিরের হাত দিয়েই দুর্গাপুরে পাঠানোর জন্য বলা হয়। দুর্গাপুরে যাওয়ার জন্য সে তৈরিও হচ্ছিল। তার আগেই অবশ্য আনীশ উদ্ধার হওয়ায় মুক্তিপণের টাকা আদায়ের পরিকল্পনা ভেস্তে যায় জামিরের। অনীশকে খুঁজতে দিনভর সে ছোটাছুটি করে। মুক্তিপণ চেয়ে ফোন আসার সময় শিশুর বাবার পাশেই ছিল সে। সন্ধ্যায় বড়শুল আন্ডারপাশের কাছ থেকে তরল মাদক দ্রব্য কোডাইন সহ পুলিস তাকে গ্রেপ্তার করে। জামালপুর থানার চক্ষণজাদি গ্রামে তার বাড়ি। তার কাছ থেকে ১.৫ কেজি কোডাইন মিলেছে বলে পুলিসের দাবি। পুলিসকে দেখে সে পালানোর চেষ্টা করে। পালানোর সময় পড়ে গিয়ে সে জখম হয়। সেই অপহরণের মূল পাণ্ডা বলে জেনেছে পুলিস। তার সঙ্গে আরও ৩ জন অপহরণে জড়িত বলে জামিরকে জিজ্ঞাসাবাদ করে পুলিস জানতে পেরেছে। ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগে পুলিস শক্তিগড় থানার সিনেমাতলার বাসিন্দা শেখ রবিউল ওরফে সুলতানকে গ্রেপ্তার করেছে। সিনেমাতলা থেকেই তাকে ধরে পুলিস। তার ফোন থেকেই মুক্তিপণ চেয়ে ফোন করা হয়। ২ দিনে রবিউলের সঙ্গে জামিরের ২০০ বারেরও বেশি ফোনে কথা হয়েছে। মোবাইলের সূত্র ধরে অপহরণে রবিউলের জড়িত থাকার বিষয়ে নিশ্চিত হয় পুলিস। জামিরের অপরাধের রেকর্ড রয়েছে পুলিসের খাতায়। এর আগে বাইক চুরির অভিযোগে পুলিস তাকে গ্রেপ্তার করে। অপহরণের মামলায় পুলিস অবশ্য এখনও গ্রেপ্তার দেখায়নি জামিরকে। মাদক মামলায় তাকে আদালতে পেশ করা হয়। তার সঙ্গেই আদালতে পেশ করা হয় রবিউলকে। বাকি অভিযুক্তদের হদিশ পেতে রবিউলকে ৭ দিন পুলিসি হেফাজতে নিতে চেয়ে আদালতে আবেদন জানান তদন্তকারী অফিসার শ্রীধর সেন। রবিউলকে ৩ দিন পুলিসি হেফাজতে পাঠানোর নির্দেশ দেন ভারপ্রাপ্ত সিজেএম কল্লোল ঘোষ। বিচার বিভাগীয় হেফাজতে পাঠিয়ে ৩০ অক্টোবর মাদক সংক্রান্ত বিশেষ আদালতে জামিরকে পেশের নির্দেশ দেন বিচারক।
পুলিস জানিয়েছে, আমড়া বাজারে বাড়ি লাগোয়া ল্যাংচার দোকান রয়েছে বলিরামের। রবিবার বেলা ১০টা ৪৪ নাগাদ একটি লাল রংয়ের গাড়ি বাড়ির দরজার সামনে দাঁড়ায়। খদ্দেরের ভেবে গাড়িটি নিয়ে কারও মনে কোনও সন্দেহ হয়নি। কিছুক্ষণ পর গাড়িটি চলে যায়। তারপর থেকেই খোঁজ মিলছিল না অনীশের। বিভিন্ন জায়গায় খোঁজখবর করেও ছেলের হদিশ না পেয়ে শক্তিগড় থানায় মিসিং ড়ায়েরি করেন বলিরাম। বেলা ৩টে ১০ নাগাদ একটি মোবাইল থেকে বলিরামের মোবাইলে ফোন আসে। হিন্দিতে তাঁর ছেলেকে অপহরণ করা হয়েছে বলে জানানো হয়। মুক্তিপণ বাবদ ৫ লক্ষ টাকা দাবি করা হয়। মুক্তিপণের টাকা গাড়ির চালক জামিরের হাত দিয়ে দুর্গাপুরে পাঠানোর জন্য বলা হয়। টাকা না দিলে তাঁর ছেলেকে উড়িয়ে দেওয়া হবে বলে হুমকি দেয় অপহরণকারীরা। মুক্তিপণের ফোন পেয়ে থানায় যোগাযোগ করেন বলিরাম। এরপর তিনি অপহরণের অভিযোগ দায়ের করেন।
টাকা নিয়ে দুর্গাপুরে যাওয়ার জন্য প্রস্তুতি শুরু করেন বলিরাম। পৌনে ৫টা নাগাদ শক্তিগড় থানারই কাঁদরসোনা থেকে উদ্ধার হয় অনীশ। কাঁদরসোনায় পুকুরপাড়ে কাঁটাঝোপের মধ্যে পা বাঁধা অবস্থায় স্থানীয় বাসিন্দা রতন দাস অনীশকে দেখতে পান। তার গলায় প্লাস্টিকের স্ট্রিপ দিয়ে ফাঁস দেওয়া ছিল। ধাতস্থ হওয়ার পর অনীশ তার নাম ও ঠিকানা বলে। এরপরই তাকে নিয়ে আমড়ায় হাজির হন বাসিন্দারা। অসুস্থ হওয়ায় অনীশকে বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভরতি করা হয়। সেখানে সে চিকিৎসাধীন রয়েছে। তার আগে অবশ্য ল্যাংচার দোকানের ও পাশের একটি সংস্থার সিসি ক্যামেরার ফুটেজে অনীশের বাড়ির সামনে গাড়িটিকে চলে যেতে দেখা যায়। স্থানীয় বাসিন্দারাও কাঁদরসোনায় গাড়ি নিয়ে বেশ কয়েকবার জামিরকে যাতায়াত করতে দেখেন। তবে, তাঁদের মনে কোনও সন্দেহ হয়নি। সুস্থ হওয়ার পর বাসিন্দাদের কাছে আনীশ জানায়, তাকে ড্রাইভার আঙ্কেল (জামির) সেখানে ফেলে দিয়ে গিয়েছে। জামির ও রবিউলকে জিজ্ঞাসাবাদ করে পুলিস জেনেছে, দুর্গাপুজোর আগেই আনীশকে অপহরণের পরিকল্পনা ছিল তাদের। কিন্তু, যে কোনও কারণেই হোক তা সম্ভব হয়নি। ক্লোরোফর্ম জাতীয় কিছু নাকে দিয়ে অজ্ঞান করে আনীশ অপহরণ করা হয় বলে পুলিসের অনুমান। অপহরণের পর তাকে গাড়ির ডিকিতে ঢুকিয়ে রাখা হয়েছিল বলে মনে করছে পুলিস।