বর্ধমান (পূর্ব বর্ধমান) :- বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রায় ১ কোটি ৯৪ লক্ষ টাকা নয়ছয়ের ঘটনায় তদন্ত শুরু করেছে এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট (ইডি)। ইডির তরফে চিঠি দিয়ে যে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকে বিশ্ববিদ্যালয়ের টাকা জমা ছিল তার জোনাল ম্যানেজারের কাছ থেকে বেশকিছু তথ্য জানতে চাওয়া হয়েছে। মানিলন্ডারিং অ্যাক্টে তদন্ত শুরু হয়েছে। কিছুদিন আগে ইডির অ্যাসিস্ট্যান্ট ডিরেক্টর মুকেশ কুমার চিঠি দিয়ে ব্যাংকের কাছ থেকে তথ্য চেয়ে পাঠিয়েছেন। ইডির দপ্তরে ব্যাংকের অফিসারদের ডেকে পাঠানো হয় বলে জানা গিয়েছে। ইডি সূত্রে জানা গিয়েছে, ব্যাংকের তিন আধিকারিকের তাঁদের অ্যাকাউন্টের সম্পর্কে তথ্য জানতে চাওয়া হয়েছে। ২০২১ সাল থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত অফিসারদের স্থাবর এবং অস্থাবর সম্পত্তির বিষয়ে তথ্য চাওয়া হয়েছে। ব্যাংকে স্থায়ী আমানত প্রকল্পে জমা রাখা তিনটি অ্যাকাউন্টের সম্পর্কেও জানতে চেয়েছে ইডি। যে সময় ব্যাংক থেকে মেয়াদ উত্তীর্ণ হওয়ার আগেই বিশ্ববিদ্যালয়ের জমা রাখা টাকা তোলা হয়েছে সেই সময় রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কটির বর্ধমান শহরের স্টেশনবাজার ব্রাঞ্চের সার্কেল হেড ও ডেপুটি সার্কেল হেড কারা ছিলেন তার তথ্যও জানতে চেয়েছে ইডি। এছাড়াও বিশ্ববিদ্যালয়ের টাকা মেয়াদ উত্তীর্ণ হওয়ার আগে তোলার বিষয়ে উপরওয়ালাদের কাছ থেকে যে অনুমোদন নেওয়া হয়েছিল সে সম্পর্কেও তথ্য জানতে চেয়েছে ইডি। বিশ্ববিদ্যালয়ের কাছ থেকেও ইডি বেশকিছু তথ্য জানতে চেয়েছে বলে জানা গিয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থ তছরুপের মামলায় ইডি তদন্ত শুরু করায় কর্মীদের একাংশ আশার আলো দেখছেন। ইডি তদন্তে দুর্নীতির বিষয়ে প্রকৃত তথ্য সামনে আসবে বলে মনে করছেন তাঁরা। আর্থিক দুর্নীতিতে জড়িত রাঘববোয়ালদের নাম এবার সামনে আসবে বলে মনে করছেন কর্মীরা। বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থ তছরুপের মামলায় জামিনের আবেদনের শুনানিতে জেলা জজ বেশকিছু পর্যবেক্ষণ দেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য, রেজিস্ট্রার-সহ কয়েকজন আধিকারিকের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন জেলা জজ। সিআইডি অবশ্য তদন্তে তাঁদের ভূমিকার বিষয়ে তেমন কোনও তথ্য পায়নি।
সিআইডি সূত্রে জানা গিয়েছে, ২০২৪ সালের ৬ ফেব্রুয়ারি বর্ধমান শহরের বড়বাজার এলাকার একটি রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকের শাখায় স্থায়ী আমানত প্রকল্পে জমা রাখা টাকা মেয়াদ উত্তীর্ণ হওয়ার আগেই তুলে নেওয়ার জন্য আবেদন জমা পড়ে। সেই টাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সেভিংস অ্যাকাউন্টের পরিবর্তে একটি ঠিকাদার সংস্থার অ্যাকাউন্টে জমা করার জন্য চিঠিতে বলা হয়। চিঠিটি দেখে ব্যাংক কর্তৃপক্ষের সন্দেহ হয়। ব্যাংক থেকে চিঠির বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের কাছে জানতে চাওয়া হয়। এ ধরনের কোনও চিঠি দেওয়া হয়নি বলে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ব্যাংকে জানিয়ে দেওয়া হয়। এরপরই ব্যাংকের তরফে বর্ধমান থানায় অভিযোগ দায়ের হয়। বিষয়টি সামনে আসার পর বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ বিভিন্ন ব্যাঙ্ককে চিঠি দিয়ে আমানতের অবস্থার বিষয়ে জানতে চায়। সেই সময় জানা যায়, রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকের স্টেশন বাজার শাখা থেকে ১ কোটি ৯৩ লক্ষ ৮৯ হাজার ৮৭৬ টাকা মেয়াদ উত্তীর্ণ হওয়ার আগেই তুলে নেওয়া হয়েছে। সেই টাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যাকাউন্টে জমা পড়েনি। এরপরই বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার বর্ধমান থানায় অভিযোগ দায়ের করেন। তদন্তে নেমে পুলিশ বিশ্ববিদ্যালয়ের এক কর্মীকে গ্রেপ্তার করে। পরে তদন্তভার সিআইডির হাতে যায়। সিআইডি ইতিমধ্যেই মামলায় চার্জশিট পেশ করেছে। তাতে বিশ্ববিদ্যালয়ের ফিনান্স বিভাগের সিনিয়র অ্যাসিস্ট্যান্ট ভক্ত মণ্ডল সহ দশজনের নাম রয়েছে। সে অবশ্য এখনও ধরা পড়েনি। চার্জশিটে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকের তিন অফিসারের নামও রয়েছে। সিআইডি তদন্ত নিয়ে অবশ্য খুশি নয় কর্মীদের একাংশ।