বর্ধমান (পূর্ব বর্ধমান) :- পূর্ব বর্ধমান জেলায় বিদ্যুত চুরির বহর না কমায় এবার মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশে নড়েচড়ে বসল রাজ্য বিদ্যুত পর্ষদ। হুকিং, ট্যাপিং -এর কারণেই জেলার ২৭টি সেক্টর অফিসের মধ্যে ১১টি সেক্টর অফিসের অধীনে প্রায় ১৩টি ব্লকের বিভিন্ন জায়গায় ব্যাপক হারে চলছে এই বিদ্যুত চুরি। সামগ্রিক ভাবে এই চুরির পরিমাণ চলতি আর্থিক বছরে প্রায় ২৫০ কোটি টাকা। শতাংশের বিচারে প্রায় ৫৩ শতাংশ। আর তাই মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশে পূর্ব বর্ধমান জেলায় চলতি বছরে ২৫০ কোটি টাকা লোকসান মেটাতে সোমবার উচ্চ পর্যায়ের বৈঠক অনুষ্ঠিত হল বর্ধমানের বিডিএ হলে। বৈঠকে হাজির ছিলেন রাজ্য বিদ্যুত বণ্টন নিগম লিমিটেডের চীফ ম্যানেজিং ডিরেক্টর রাজেশ পাণ্ডে সহ জেলা প্রশাসনের সমস্ত আধিকারিক, ব্লক স্তরের আধিকারিক এবং জনপ্রতিনিধিরাও। এদিন বৈঠক শেষে বর্ধমান জেলা পরিষদের সভাধিপতি দেবু টুডু জানিয়েছেন, পূর্ব বর্ধমান জেলায় বিদ্যুত ব্যবস্থা নিয়ে এদিন বৈঠক হয়েছে। লোকসান কমাতে স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের নিয়ে গ্রামীণ মানুষের সঙ্গে আরও নিবিড় সম্পর্ক গড়ে তোলা এবং তাদের বোঝানোর নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। তিনি জানিয়েছেন, বেশ কিছু ক্ষেত্রে বকেয়া বিদ্যুতের বিলের পরিমাণও বিশাল আকার নিয়েছে। সেগুলি আদায় করার জন্য এদিন নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। বস্তুত, এদিনের বৈঠকে উঠে এসেছে গোটা রাজ্যের মধ্যে পূর্ব বর্ধমান জেলাতেই সবথেকে বেশি লোকসানের হার। যার পরিমাণ প্রায় ২৫০ কোটি টাকা। এই লোকসানের মূল কারণ হুকিং এবং অবৈধ বিদ্যুত সংযোগ নেওয়া। খোদ বর্ধমান পুরএলাকায় লোকসানের বহর ১৫ শতাংশ। বিদ্যুত দপ্তর সূত্রে জানা গেছে, এই লোকসানের বহর গ্রামীণ এলাকায় যেখানে থাকার ১১ শতাংশ সেখানে পূর্ব বর্ধমান জেলায় রয়েছে ৫৩ শতাংশ। শহরাঞ্চলে যেখানে থাকার কথা ৯ শতাংশ, সেখানে রয়েছে ১১ শতাংশ। অনেক ক্ষেত্রেই এই লোকসানের কারণ রাজনৈতিক নেতৃত্বের জন্য হলেও এগুলিকে দমন করার জন্য জেলা পুলিশ ও প্রশাসনের সাহায্যও চাওয়া হয়েছে এদিনের বৈঠকে। বিদ্যুত দপ্তরের বর্ধমানের দুই জেলার রিজিওনাল ম্যানেজার দিলীপ কুমার বাছাড় জানিয়েছেন, গতবার এই লোকসানের পরিমাণ ছিল ৫৬ শতাংশ। এবারে ৩ শতাংশ কমে দাঁড়িয়েছে ৫৩ শতাংশে। তিনি জেলার ২৭ বিদ্যুত দপ্তরের সেক্টর এলাকার মধ্যে ১১টি সেক্টর এলাকায় বিদ্যুত দপ্তরের লোকসানের পরিমাণ সব থেকে বেশি। ভয়াবহ অবস্থা জেলার ভাতর ব্লকে। এছাড়াও রয়েছে দাঁইহাট, কেতুগ্রাম, নতুনহাট, কাটোয়া, সমুদ্রগড়, মন্তেশ্বর, পূর্বস্থলী, মেমারী, জামালপুর, গুসকরা, রায়না প্রভৃতি ব্লকেও। তিনি জানিয়েছেন, সব থেকে বেশি লোকসানের বহর রয়েছে ১৩টি ব্লকে।বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই হুকিং করা এবং বিদ্যুতের একটি বৈধ সংযোগ থাকা সত্ত্বেও অসদুপায়ে অন্য একটি সংযোগ নেওয়ার কারণেই বিদ্যুতের এই লোকসান হচ্ছে। তিনি জানিয়েছেন, চলতি আর্থিক বছরে ১৩৬টি এফআইআরও করা হয়েছে। এদিনের বৈঠকে এই লোকসান কমাতে পুলিশ ও প্রশাসনের পাশাপাশি জনপ্রতিনিধিদেরও উদ্যোগী হবার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এরই পাশাপাশি তিনি জানিয়েছেন, ২০১৭ সাল থেকে স্পটবিলিং এবং পিকচারাইজেশন প্রথা চালু হওয়ায় মিটারে কারচুপির হার অনেকটাই কমানো গেছে। যেহেতু এখন বিদ্যুত বিল সংগ্রহের কাজ বেসরকারী সংস্থার হাতে দেওয়া হয়েছে তাই সেক্ষেত্রেই তাদের কর্মীরা কোনো অসদুপায় নিচ্ছেন কিনা সে ব্যাপারে মনিটরিং করা হচ্ছে। ইতিমধ্যেই এব্যাপারে কিছু শাস্তিমূলক ব্যবস্থাও নেওয়া হয়েছে। অন্যদিকে, তিনি জানিয়েছেন, অনেক ক্ষেত্রে বিদ্যুত চুরির বিষয়টি দপ্তর জানতে পারলেও পুলিশের সহযোগিতা সঠিকভাবে না পাওয়ায় তাদের বিরুদ্ধে এফআইআর করা যায় না। এদিনের বৈঠকে এই সমস্যার বিষয়টিও তুলে ধরা হয়েছে। বিদ্যুতের লোকসান তথা চুরি ঠেকাতে এদিন পুলিশের ১০০ শতাংশ সহযোগিতা চাওয়া হয়েছে।