E Purba Bardhaman

অবশেষে বর্ধমান ষ্টেশনে বসতে চলেছে চলমান সিঁড়ি

বর্ধমান (পূর্ব বর্ধমান) :- অবশেষে কয়েকবছরের লাগাতার চেষ্টার পর এবং একইসঙ্গে যাত্রীদের পক্ষ থেকে লাগাতার আবেদন নিবেদনের পর বর্ধমান ষ্টেশনে বসতে চলেছে চলমান সিঁড়ি। দীর্ঘদিন ধরেই বর্ধমান স্টেশনে এক নম্বর প্ল্যাটফর্ম থেকে অন্য প্লাটফর্মে যেতে সমস্যা ছিল প্রবীণ মানুষদের পাশাপাশি অসুস্থ মানুষজনের। একই সঙ্গে জিনিসপত্র নিয়েও যাবার একটা সমস্যা ছিল। বারেবারেই এই বিষয়ে রেল কর্তৃপক্ষের কাছে সরব হয়েছিলেন অনেকেই। পূর্ব বর্ধমান লোকসভার প্রাক্তন সিপিএম সাংসদ সাইদুল হকও রেল কর্তৃপক্ষের কাছে যাত্রী সুবিধার্থে বেশ কয়েকটি দাবীকে তুলে ধরেছিলেন। বর্ধমান ষ্টেশনের যাত্রী সুবিধায় র‌্যাম্প করার জন্য তিনি ৯০ লক্ষ টাকা প্রদান করেছিলেন। কিন্তু জায়গার অসুবিধার জন্য এই র‌্যাম্প তৈরী বিশবাঁও জলে চলে যায়। অবশেষে বর্ধমান ষ্টেশনে চলমান সিঁড়ি তৈরির সবুজ সংকেত মিলেছে। বর্ধমান স্টেশন ম্যানেজার স্বপন অধিকারী জানান, অনেক দিন ধরেই বর্ধমান স্টেশনের জন্য চলমান সিঁড়ির দাবি উঠেছিলই। একইসঙ্গে র‌্যাম্পেরও দাবি উঠেছিল। কিন্তু র‌্যাম্পের জন্য প্রয়োজনীয় জায়গা দিতে না পারায় তা কার্যত বাতিলের পর্যায়ে চলে গেছে। অথচ গত লোকসভা নির্বাচনের আগেই ২০১৪ সাল নাগাদ তত্কালীন রেল স্ট্যান্ডিং কমিটির সদস্য সিপিএম সাংসদ সাইদুল হক বর্ধমান স্টেশনে এই র‌্যাম্পের শিলান্যাস করেন। কিন্তু বর্তমানে সেই শিলাটিও আরও নেই। এদিকে, হাওড়া ডিভিশনের বর্ধমান, ব্যান্ডেল এবং রামপুরহাটকে এ ক্লাস স্টেশন হিসাবে স্বীকৃতি দেবার পর চলমান সিঁড়ির অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। স্বপনবাবু জানান, চলমান সিঁড়ির জন্য প্রয়োজনীয় পরিকল্পনা তৈরি করা হয়েছে। প্রথম ধাপে ৪ ও ৫ প্ল্যাটফর্মে, দ্বিতীয় ধাপে ৬ ও ৭ নং প্ল্যাটফর্মে এবং তৃতীয় পর্যায়ে ২ ও ৩ নং প্ল্যাটফর্মে কেবলমাত্র ওঠার জন্য এই চলমান সিঁড়ি চালু করা হবে। ১নং প্ল্যাটফর্মের বাইরে এই চলমান সিঁড়ি বসানো হবে। স্বপনবাবু জানান, ইতিমধ্যেই প্রতিবন্ধীদের জন্য রেলের প্ল্যাটফর্ম এবং রেল স্টেশন এলাকায় ট্রাক টাইলস বসানোর কাজ শেষ হয়েছে। তিনি জানান, কাটোয়া ওভারব্রিজের কাজ সম্পন্ন হলে বর্ধমান স্টেশনের খোলনোলচেরই পরিবর্তন হয়ে যাবে। যদিও বয়স্ক এবং প্রতিবন্ধীদের জন্য রাম্প করার যে দাবি দীর্ঘদিন ধরে যাত্রী মহল থেকে তোলা হয়েছিল তা কার্যত না হওয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন বীরভূম-বর্ধমান দৈনিক রেলযাত্রী সমিতি সম্পাদক অশোক চট্টোপাধ্যায় জানান, তাঁরাও সাংগঠনিক ভাবে বারবার এই দাবি করেছেন। বিশেষ করে বয়স্ক এবং প্রতিবন্ধীদের জন্য এই র‌্যাম্প তৈরি অত্যন্ত জরুরি। তারা এব্যাপারে রেলমন্ত্রীর কাছেও দাবিপত্র পাঠিয়েছিলেন। যদিও তিনি এদিন জানান, চলমান সিঁড়ি তৈরির এই অনুমোদন পাবার ঘটনা অত্যন্ত আনন্দের। অন্যদিকে, প্রাক্তন সাংসদ সাইদুল হক জানান, এটা অত্যন্ত দুঃখের ঘটনা। তিনি সাংসদ থাকাকালীন তিনি অনেক পরিশ্রম এবং দরবার করেই এই র‌্যাম্প তৈরি করার অনুমোদন ছিনিয়ে নিয়ে এসেছিলেন যাত্রী সুবিধার জন্য। এমনকি তিনি নিজে ওই র‌্যাম্পের জন্য ফলকও উন্মোচন করেছিলেন। এখন সেই ফলক উধাও হয়ে যাওয়া বা সরিয়ে ফেলার পাশাপাশি র‌্যাম্পের পরিকল্পনাই বাতিল হয়ে যাওয়ার ঘটনা অত্যন্ত দুঃখের। স্বাভাবিকভাবেই রেল কর্তৃপক্ষের যাত্রী সুবিধা দেবার মত বিষয়টিও প্রশ্ন চিহ্নের মুখে দাঁড়ায়। উল্লেখ্য, এদিন স্বপনবাবু জানান, বর্ধমান ষ্টেশনে গড়ে দূরপাল্লা, লোকাল এবং বর্ধমান ষ্টেশনে না দাঁড়ানো এরকম প্রতিদিন প্রায় ৪০০ ট্রেন যাতায়াত করে। গড়ে প্রতিদিন ১ লক্ষ যাত্রী যাতায়াত করে এবং প্রতিদিন গড়ে ৪৯ হাজার টিকিট বিক্রি হয়। যার আর্থিক মূল্য প্রায় ১০ লক্ষ টাকা। এদিকে, দীর্ঘ প্রতীক্ষার পর বর্ধমান ষ্টেশনে বসতে চলেছে চলমান সিঁড়ি। ইতিমধ্যেই এই চলমান সিঁড়ির প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি চলে এসেছে। বর্ধমানের ষ্টেশন ম্যানেজার স্বপন অধিকারী জানিয়েছেন, প্রতিদিন গড়ে প্রায় ১৫-২০ শতাংশ যাত্রীই রয়েছেন যাঁদের সিঁড়ি দিয়ে ওঠানামা করতে অসুবিধা হয়। এই চলমান সিঁড়ি চালু হলে এই অসুবিধা দূর হবে।

Exit mobile version