চোলাইয়ের বিরুদ্ধে আবগারী দপ্তরের অভিযান চালানোর সময় হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যু এক বৃদ্ধার
admin
বর্ধমান (পূর্ব বর্ধমান) :-শান্তিপুরে চোলাইয়ে মৃত্যুর মিছিলেও হুঁশ ফেরেনি চোলাই কারবারী থেকে চোলাই সেবনকারীদের। এমনকি চোলাইয়ের বিরুদ্ধে খোদ মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশে লাগাতার অভিযান চললেও আড়ালে আবডালে চলছেই চোলাইয়ের রমরমা কারবার। সামনেই লোকসভা ভোট। ইতিমধ্যেই নির্বাচন কমিশন থেকে মদ চোলাইয়ের বিরুদ্ধে নির্দেশিকাও পাঠিয়েছে। ফলে রীতিমত কড়া হাতেই চোলাইয়ের বিরুদ্ধে মোকাবিলায় নেমেছে পূর্ব বর্ধমান জেলা আবগারী দপ্তরও। কিন্তু তারই মাঝে শনিবার চোলাইয়ের বিরুদ্ধে আবগারীর অভিযান চালানোর সময় হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে এক বৃদ্ধার মৃত্যুর অভিযোগ উঠল। ঘটনাটি ঘটেছে বর্ধমানের দেওয়ান দিঘী থানার বিজয়রাম এলাকায়। মৃতার নাম টুনি দাস (৭১)। বাড়ি বিজয়রাম এলাকাতেই। এই ঘটনায় ব্যাপক চাঞ্চল্য ছড়ায় গোটা এলাকায়। এলাকার বাসিন্দারা জানিয়েছেন, শনিবার সকালে আবগারী অভিযান চালায় বেশ কয়েকটি বাড়িতে। গত বৃহস্পতিবারও একই এলাকায় অভিযান চালায় আবগারী দপ্তর। রীতিমত মাটির তলায় বাংকার তৈরী করে সেখানেই লুকিয়ে রাখা হয়েছিল চোলাই মদ। শনিবার এলাকার বাসিন্দারা অভিযোগ করেছেন,এদিন অভিযান চালানোর সময় বাড়ি বাড়ি ভাঙচুর করার পাশাপাশি মহিলাদেরও মারধর করা হয়। সুমিত্রা দাস নামে এক মহিলার হাত মুচড়ে দেওয়া হয় বলে অভিযোগ। অন্যদিকে, এই অভিযান চালানোর সময় টুনি দাস নামে ওই বৃদ্ধার মৃত্যু হয় বলে দাবী করেছেন মৃতের পরিবারের লোকজন। এদিকে, আবগারীর এই অভিযানের প্রতিবাদ করে বিজয়রাম এলাকায় বেশ কিছুক্ষণ বর্ধমান কাটোয়া রোড অবরোধ করেন স্থানীয় মানুষজন। যদিও জেলা আবগারী দপ্তরের সুপার তপন মাইতি তাদের বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগ অস্বীকার করে জানিয়েছেন, কাউকে মারধর করা হয়নি। এমনকি তাদের অভিযানের সময় কেউ মারাও যায় নি। তিনি জানিয়েছেন, তাঁরা চোলাইয়ের বিরুদ্ধে লাগাতার অভিযান চালানোয় এবং সামনেই হোলি তাই হোলির জন্য আগাম চোলাই মজুদে বাধা পেয়েই তাঁদের বিরুদ্ধে মিথ্যা অভিযোগ তুলে চাপ সৃষ্টি করা হচ্ছে। তপনবাবু এদিন জানিয়েছেন, সুমিত্রা দাস নামে যে মহিলা অত্যাচারের অভিযোগ করছেন,তিনি সম্প্রতি রাজ্য সরকারের বাংলা আবাস যোজনায় ঘর তৈরী করেছেন। সেই ঘরে বসেই তিনি চোলাইয়ের কারবার চালিয়ে যাচ্ছিলেন। সরকার প্রদত্ত ঘরে বসে এই কাজ চালানোর বিষয়ে তাঁকে নিষেধও করা হয়। তপনবাবু জানিয়েছেন, এদিনের অভিযানে প্রায় ১৬০ লিটার চোলাই মদ নষ্ট করা হয়েছে। পাশাপাশি ২৩ লিটার চোলাই তৈরীর কাঁচামাল নষ্ট করা হয়েছে। গ্রেপ্তার করা হয়েছে চরণ দাস নামে এক ব্যক্তিকেও। জেলা আবগারী সুপার জানিয়েছেন, বিশেষ করে বিজয়রাম এলাকার এই সমস্ত চোলাই প্রস্তুতকারীরা অন্য কোনো কাজ করেন না। এদিন অভিযানের পরিপ্রেক্ষিতে স্থানীয় বাসিন্দা তথা চোলাই কারবারী পুরুষ ও মহিলারাও দাবী করেছেন,সরকার তাঁদের কিছু অন্য কাজের ব্যবস্থা করে দিক। তাহলেই তাঁরা এই কাজ ছেড়ে দেবেন। এদিন সেই প্রসঙ্গে তপনবাবু জানিয়েছেন, এব্যাপারে জেলাশাসকের আলোচনা হয়েছে। চোলাই কারবারীদের একটি তালিকা তৈরী করা হচ্ছে। তারপরেই এব্যাপারে উদ্যোগ নেওয়া হবে। তিনি জানিয়েছেন, বিজয়রাম এলাকায় প্রায় ৩০টি পরিবার এই কাজের সঙ্গে যুক্ত রয়েছেন। যদিও এলাকাবাসীর দাবী, এই কাজে যুক্ত রয়েছেন প্রায় হাজার দুয়েক লোক। বেসরকারী হিসাবে প্রায় ৮০টি পরিবার যুক্ত এই কাজে। গড়ে প্রতিটি পরিবার ৫০ লিটার করে প্রতিদিন চোলাই তৈরী করেন। উল্লেখ্য,এদিন জেলা আবগারী সুপার জানিয়েছেন, চোলাইয়ের বিরুদ্ধে এই অভিযানে যদি জনপ্রতিনিধিরা এগিয়ে আসতেন তাহলে কাজটা অনেক বেশি সহজ হত। কিন্তু জনপ্রতিনিধিদের প্রত্যাশামত অংশগ্রহণ নেই। এব্যাপারে জনপ্রতিনিধিদের যুক্ত করার চেষ্টা চলছে – যেমনটি পোস্ত চাষের বিরুদ্ধে অভিযান হয়েছে। উল্লেখ্য, জেলা আবগারী দপ্তরের সদর সার্কেলের অফিসার ইনচার্জ শশীভূষণ তেওয়ারী জানিয়েছেন, এপ্রিল ২০১৮ সাল থেকে চলতি বছরের ফেব্রুয়ারী মাস পর্যন্ত চোলাইয়ের বিরুদ্ধে মোট ২০১১টি কেস হয়েছে। এর মধ্যে গ্রেপ্তার করা হয়েছে ৩৪৪জনকে। তার মধ্যে ৫জন মহিলা। বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে ৪২ হাজার ২৮৭লিটার চোলাই মদ। কাঁচামাল বাজেয়াপ্ত করা কিংবা নষ্ট করা হয়েছে ৪ লক্ষ ৭৫ হাজার ৮১৭ লিটার। গুড় নষ্ট করা হয়েছে ১০৫৫ কেজি। চোলাই তৈরীর হাঁড়ি বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে ২০০৯টি। সম্প্রতি ৫টন হাঁড়িকে টেণ্ডার করে বিক্রিও করেছে আবগারী দপ্তর। এরই পাশাপাশি বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে ১০টি সাইকেল এবং ১৮টি মোটর সাইকেল। শশীভূষণ বাবু জানিয়েছেন এই আর্থিক বছরে রাজস্ববাবদ আয় বেড়েছে গত আর্থিক বছরের তুলনায় ৬০ শতাংশ।যেখানে গত আর্থিক বছরে রাজস্ব বাবদ আয় হয়েছিল ৬৮২ কোটি টাকা। সেখানে চলতি বছরের ফেব্রুয়ারী মাস পর্যন্ত আয় হয়েছে ১০৯৭ কোটি টাকা। তিনি জানিয়েছেন, সামনেই লোকসভা ভোট। তাই নির্বাচন কমিশনের নির্দেশে তৈরী করা হয়েছে বিশেষ ফ্লাইং স্কোয়ার্ড। ২জন অফিসার এবং ৫জন কনষ্টেবলকে নিয়ে এক একটি স্কোয়ার্ড তৈরী করা হয়েছে। নির্বাচন ঘোষণা হলেই তাঁরা কাজ শুরু করবেন তাঁরা।