অকাল বৃষ্টিতে ফসলের ভয়াবহ ক্ষতি, বীমার টাকা পেতে ৭২ ঘন্টার মধ্যে আবেদন করার নির্দেশ
admin
বর্ধমান (পূর্ব বর্ধমান) :- গত মঙ্গলবার থেকে বৃহস্পতিবার পূর্ব বর্ধমান জেলায় বিভিন্ন ব্লকে মাঝারি থেকে ভারী বৃষ্টিপাতের পাশাপাশি শিলাবৃষ্টিতে ব্যাপক ফসল ক্ষতির সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে। জেলা কৃষি দপ্তর সূত্রে জানা গেছে, পূর্ব বর্ধমান জেলায় আলু ৫০ হাজার হেক্টর, পিঁয়াজ ৩৫০০ হেক্টর, সব্জি ৩৬০০ হেক্টর এবং সরষে প্রায় আড়াই হাজার হেক্টরে ক্ষতিগ্রস্থ হবার সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে। এব্যাপারে ইতিমধ্যেই রাজ্য সরকারের কাছে রিপোর্ট পাঠানো হয়েছে এবং কার্যত প্রতিদিনই রিপোর্ট পাঠানো হচ্ছে বলে শনিবার জানিয়েছেন জেলা কৃষি দপ্তরের যুগ্ম কৃষি আধিকারিক জগন্নাথ চট্টোপাধ্যায়। তিনি জানিয়েছেন, এরই পাশাপাশি সমস্যা দেখা দিয়েছে চাষীদের ফসল বীমা নিয়ে। তিনি জানিয়েছেন, নিয়মানুযায়ী ফসল বীমার টাকা পেতে গেলে ৭২ ঘণ্টার মধ্যেআবেদন করতে হয়। গত শুক্রবার বর্ধমানে শেষ বৃষ্টি হয়েছে। স্বাভাবিকভাবেই রবিবারের মধ্যে ৭২ ঘণ্টার সময়সীমা শেষ হচ্ছে। কিন্তু মাঝে ২ দিন ছুটি থাকায় চাষীরা কিভাবে ফসল বীমার টাকা পেতে সংশ্লিষ্ট বীমা সংস্থার সঙ্গে যোগাযোগ করবেন তা নিয়ে বিভ্রান্তি দেখা দিয়েছে। জগন্নাথবাবু জানিয়েছেন,নিয়মানুযায়ী ৭২ ঘণ্টার মধ্যে জানানোর বিষয়টি থাকায় তাঁরাও চাষীভাইদের কোম্পানীর ই–মেল আইডি এবং টোল ফ্রি নাম্বারে অভিযোগ ও আবেদন নথীভুক্ত করার জন্য আবেদন করেছেন। উল্লেখ্য, পূর্ব বর্ধমান জেলায় ফসল বীমার দায়িত্বে রয়েছেন ইউনাইটেড ইনসিওরেন্স কোম্পান লিমিটেড। তিনি জানিয়েছেন, ইতিমধ্যেই জেলার ৩ লক্ষ চাষীর নাম নথীভুক্ত করিয়েছেন ওই বীমা কোম্পানী। দ্রুততার সঙ্গে রবিবার মধ্যে সেই সমস্ত চাষীকে বীমার ক্ষতিপূরণের জন্য আবেদন করতে হবে। সেক্ষেত্রে কেউ ব্লক কৃষি আধিকারিকের কাছে অভিযোগ নথীভুক্ত করছেন। সেটা করার পাশাপাশি ওই কোম্পানীর কাছে সংশ্লিষ্ট চাষীর নাম ও তাঁর ছবি সহ ক্ষতিগ্রস্থ চাষ এলাকার ছবি দিয়ে আবেদন করতে হবে। তিনি জানিয়েছেন, সাধারণত কোনো গ্রাম পঞ্চায়েতের ৫০ শতাংশ ক্ষতি হলে জেলাশাসকের নোটিফিকেশন অনুযায়ী ফসলবীমার ক্ষতিপূরণ পেয়ে থাকেন। কিন্তু ৫০ শতাংশের নিচে হলে প্রত্যেক চাষীকে ব্যক্তিগতভাবে আবেদন করতে হয়। তিনি জানিয়েছেন, আবেদনের ভিত্তিতে এই কোম্পানী ভ্যালু এসেসকারী, বিডিওর প্রতিনিধি এবং কৃষি ব্লক অধিকারিকের প্রতিনিধিরা ক্ষতিগ্রস্থ এলাকা পরিদর্শন করবেন। ক্ষতির নমুনা দেখা গেলে বিশেষজ্ঞ কমিটির মতামত অনুযায়ী ক্ষতিপূরণ পাবেন। তবে্ কেবলমাত্র ব্লক অফিসে আবেদন করলেই হবে না। কোম্পানীর মেলেই পাঠাতে হবে। কোম্পানীর টোলফ্রি নাম্বারেও অভিযোগ নথীভুক্ত করতে পারেন। সুযোগ পেতে গেলে ৭২ ঘণ্টার মধ্যেই করতেই হবে। তিনি জানিয়েছেন, কৃষি দপ্তর থেকে ক্ষয়ক্ষতির নিরুপণ চলছে। যেহেতু অনেক জমি জলের তলায়। তাই জল সরে যাবার পর মাটি কিছুটা শুকালে তবেই ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ বোঝা যাবে। এব্যাপারে রাজ্য সরকারের কাছে ক্ষতির বিষয়ে প্রতিদিনই রিপোর্ট পাঠানো হচ্ছে। চেষ্টা চলছে সরকারীভাবে সুযোগ সুবিধা দেবার বিষয়টিও। অন্যদিকে, রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীর কৃষি উপদেষ্টা প্রদীপ মজুমদার এই ক্ষতির বিষয় নিয়ে শনিবারই হুগলীতে একটি আলোচনা করেছেন। প্রদীপবাবু জানিয়েছেন, প্রত্যেক চাষীকেই কোম্পানীতে অভিযোগ জানাতে হবে। তিনি জানিয়েছেন,যেহেতু ২৫ ফেব্রুয়ারীর আগেই ফসলের বিষয়ে ক্রপ কাটিং এসেসমেণ্ট হয়ে গেছে এবং সেখানে ভাল ফলনের বিষয়টিই নথীভুক্ত হয়েছে তাই বাধ্যতামূলকভাবেই চাষীদের কোম্পানীর কাছে অভিযোগ জানাতেই হবে। অন্যদিকে, এব্যাপারে পূর্ব বর্ধমানের জেলাশাসক অনুরাগ শ্রীবাস্তব জানিয়েছেন,ছুটির জন্য যাতে কোনো চাষী অভিযোগ জানাতে কোনো অসুবিধার মধ্যে না পড়েন সেই বিষয়টি বীমা কোম্পানীকে দেখতে বলা হয়েছে।