বর্ধমান (পূর্ব বর্ধমান) :- শক্তিগড়ে ১৯ নম্বর জাতীয় সড়কের কলকাতামুখি লেনের ধারে ঝাঁ চকচকে একটি দোকানের ভিতর ঢুকে হাঁ হয়ে গেলেন জেলার খাদ্য-সুরক্ষা (ফুড সেফটি) দফতরের আধিকারিকরা। তাঁরা দেখেন, নীচে বড় বড় পাত্রে ল্যাংচা সাজানো রয়েছে। তার পাশে আরশোলার দল খেলে বেড়াচ্ছে! মাথার উপর ঝুলের আস্তরণ। অন্যদিকে, দুর্গাপুরমুখি লেনের ধারে একটি বড় দোকান। সামনে গাড়ির লাইন। রান্নাঘরের আগে একটি জায়গাতে ডাঁই করে রাখা রয়েছে ল্যাংচা-সহ নানা রকমের মিষ্টি। ফুড-সেফটির একজন ইন্সপেক্টর বলেন, “ওই সব মিষ্টির ‘লাইফ’ শেষ হয়ে গিয়েছে। তারপরেও বিক্রির উদ্দেশে রাখা হয়েছিল।”
এ ছবি শক্তিগড় ল্যাংচা-হাবের। যা দুর্গাপুর এক্সপ্রেসওয়ের ধারে আমড়া গ্রামে। শুধু ওই দু’টি দোকান নয়, বৃহস্পতিবার সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত ১০টি দলে ভাগ হয়ে পুলিশকে সঙ্গে করে পূর্ব বর্ধমান জেলা স্বাস্থ্য দফতরের ‘ফুড-সেফটি’ বিভাগ অভিযান চালায়। এ দিনের বিকেল পর্যন্ত রিপোর্ট, দু-একটি দোকান বাদ দিলে সব দোকানেই নিয়ম ভাঙার ‘খেলা’ চলে। এ দিন অভিযানে গিয়ে ইন্সপেক্টররা জানতে পারেন, ব্যাঙের ছাতার মতো শক্তিগড়ের এ-প্রান্ত থেকে ও-প্রান্ত পর্যন্ত গজিয়ে ওঠা অধিকাংশ দোকানের ফুড-লাইসেন্স পর্যন্ত নেই! খাদ্য-সুরক্ষার প্রথম ধাপেই শক্তিগড়ের ওই সব দোকান ‘ফেল’ করে গিয়েছে। এক ইন্সপেক্টরের দাবি, “তারপরেও কয়েকজন দোকানের মালিক তাঁদের সঙ্গে অসহযোগিতা করেছেন। অভব্য আচরণও করেছেন। পুলিশ না থাকলে তাঁদের বিপদ বাড়ত।”
ফুড-সেফটি অফিসারদের দাবি, শক্তিগড়ের দোকানগুলিতে খাবারে রং মেশানো হচ্ছে। কিন্তু সেই রং ব্যবহারে খাদ্য বা স্বাস্থ্য দফতর কোনওভাবেই অনুমোদন করে না। এ ছাড়াও আটা-সহ কাঁচামাল অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে রাখা রয়েছে। খোলা জায়গাতে ছানার ব্যবহার করা নিয়েও নিষেধাজ্ঞা মানছেন না দোকানদাররা। এমনকী কেন্দ্র সরকারের খবরের কাগজ ব্যবহারের নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। সেটাও কোনও দোকান মানেন না। দমকল-বিধি মানা নিয়েও প্রশ্ন রয়েছে।
জেলার ফুড-সেফটির দায়িত্বে থাকা ডেপুটি সিএমওএইচ (২) সুবর্ণ গোস্বামী এই অভিযানে নিজে গিয়েছিলেন। তিনি বলেন, “প্রতিটি দোকানকে নোটিস দেওয়া হয়েছে। ১৫ দিনের মধ্যে ফুড লাইসেন্স-সহ যে সব অসঙ্গতি পাওয়া গিয়েছে, তা ঠিক করে নিতে হবে। তা না হলে স্রেফ ফুড লাইসেন্সের জন্যেই ১০ লক্ষ টাকা পর্যন্ত জরিমানা করার অধিকার রয়েছে। এমনকী অন্যান্য অনিয়মের জন্যে জেলেও যেতে হতে পারে। শক্তিগড় থানাকেও নজর রাখার জন্যে বলা হয়েছে।”
দফতর সূত্রে জানা যায়, সম্প্রতি কলকাতা যাওয়ার পথে একজন ল্যাংচা কিনেছিলেন। বাড়িতে গিয়ে ল্যাংচা মুখে দিতেই টকে যাওয়া স্বাদ পান। তিনি অভিযোগ জানিয়েছিলেন। শুধু তিনি নন, ল্যাংচা-হাবের অস্বাস্থ্যকর পরিবেশ নিয়ে অনেকই নানা সময়ে অভিযোগ জানিয়ে থাকেন বলে জানা গিয়েছে। এ নিয়ে ব্যবসায়ীদের সঙ্গে আলোচনায় বসলেও সহযোগিতা মেলেনি বলে দাবি। সে কারণেই অভিযান বলে মনে করা হচ্ছে। সুবর্ণ গোস্বামীর দাবি, “আমরা চাই স্বাস্থ্যকর পরিবেশ গড়ে উঠুক শক্তিগড় ল্যাংচা হাবে। প্রয়োজনে আমরা কর্মীদের প্রশিক্ষণও দেব।”