বর্ধমান (পূর্ব বর্ধমান) :- বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়ে ইতিহাস বিষয়ে পিএইচডি করার জন্য প্রাক্তন মাওবাদী নেতা অর্ণব দামকে নিয়ে আসা হল বর্ধমান কেন্দ্রীয় সংশোধনাগারে। ইতিহাস বিষয়ে পিএইচডি-র জন্য এই ভর্তি প্রক্রিয়া হবে সোমবার, গত শনিবার এই বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ হয়েছে। আর রবিবার অর্ণব দামকে হুগলী সংশোধনাগার থেকে বর্ধমান কেন্দ্রীয় সংশোধনাগারে নিয়ে আসা হয়। সূত্রের খবর, রাজ্যসভার প্রাক্তন তৃণমূল সাংসদ কুণাল ঘোষের হস্তক্ষেপ এবং বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের সঙ্গে দীর্ঘ ফোনালাপের পরই প্রাক্তন মাওবাদী নেতা অর্ণব দামের ভর্তি সংক্রান্ত জটিলতা মিটেছে। আর রবিবার দুপুর প্রায় দেড়টা নাগাদ হুগলী সংশোধনাগার থেকে বর্ধমান কেন্দ্রীয় সংশোধনাগারে নিয়ে আসার পর খোদ অর্ণব দাম ওরফে বিক্রম জানালেন, ‘ভর্তি প্রক্রিয়া শেষ হলেই যা বলার বলবো একটু ওয়েট করুন না।’ রবিবার হুগলী সংশোধনাগার থেকে বর্ধমান কেন্দ্রীয় সংশোধনাগারে নিয়ে আসা হল জেলবন্দি মাও নেতা অর্ণব দামকে। বেলা প্রায় ১.৩৭ মিনিট নাগাদ বর্ধমান কেন্দ্রীয় সংশোধনাগারে প্রবেশের সময় সাংবাদিকদের করা প্রশ্নের উত্তরে অর্ণব দাম জানান, কালকে ভর্তির পরই তিনি যা বলার বলবেন। ভর্তি প্রক্রিয়া শেষ হলেই যা বলার বলবো একটু ওয়েট করুন। আগে ভর্তি প্রক্রিয়াটা হতে দিন। স্বাভাবিকভাবেই এরপরই কৌতূহল তুঙ্গে উঠেছে। উল্লেখ্য, বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়ের জারিকৃত বিজ্ঞপ্তি অনুযায়ী সোমবার বেলা ৩ টে থেকে ইতিহাসের পিএইচডি ভর্তি প্রক্রিয়া শুরু হবে। এবং যেহেতু মেধা তালিকায় একেবারের প্রথমে নাম আছে অর্ণবের তাই তাঁকে দিয়েই ভর্তি প্রক্রিয়া শুরু হবে। প্রশ্ন দেখা দিয়েছে, এদিন বর্ধমান কেন্দ্রীয় সংশোধনাগারে ঢোকার মুখে অর্ণব যা বলেছেন, ভর্তি প্রক্রিয়া মিটুক তারপরেই যা বলার বলবেন – তিনি কী বলবেন তা নিয়েই কৌতূহল তুঙ্গে উঠেছে। বিশেষত, তাঁর পিএইচডি করা নিয়ে যে জটিলতার শিকার তাঁকে হতে হয়েছে তা নিয়েই কি তিনি মুখ খুলবেন? উল্লেখ্য, বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা গেছে, শনিবার রাজ্যসভার প্রাক্তন সাংসদ কুণাল ঘোষ অর্ণব দামের বিষয় নিয়ে সরাসরি কথা বলেন বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য গৌতম চন্দ্রের সঙ্গে। জানা গেছে, দীর্ঘক্ষণ তাঁদের মধ্যে কথা হয়। এরপরই বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ নোটিফিকেশন জারি করেন। যদিও এব্যাপারে উপাচার্যের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, এব্যাপারে যা বলার তিনি সোমবার সাংবাদিক বৈঠকেই জানাবেন।
উল্লেখ্য, গত ২৬ জুন পুলিশি প্রহরায় ইন্টারভিউয়ের জন্য বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়ে হাজির হন অর্ণব। গত ৫ জুলাই মেধা তালিকা প্রকাশ করে বিশ্ববিদ্যালয়। আর এই তালিকা দেখেই অনেকের চোখ কপালে ওঠে। ইতিহাস বিভাগের মেধা তালিকা অনুযায়ী ১০০ নম্বরের মধ্যে ৭৬.৮৬৭০ নম্বর পেয়ে প্রথম হন অর্ণব। ইতিহাস বিষয়ে পিএইচডি করার ইন্টারভিউয়ে ২৪৯ জনকে পিছনে ফেলে প্রথম স্থান লাভ করে ইতিহাস সৃষ্টি করেন জেল বন্দী প্রাক্তন মাওবাদী নেতা অর্ণব দাম ওরফে বিক্রম। আর এই পরেই ঘটে বিপত্তি। পূর্ব নির্ধারিত সূচী অনুযায়ী মেধা তালিকায় থাকা পরীক্ষার্থীদের জন্য ৯ জুলাই কাউন্সিলিং-এর দিন নির্ধারিত ছিল। ৮ জুলাই বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে বিজ্ঞপ্তি দিয়ে জানিয়ে দেওয়া হয় অনিবার্য কারণে কাউন্সেলিং প্রক্রিয়া স্থগিত করে দেওয়া হয়। যদিও এই বিষয়ে উপাচার্য গৌতম চন্দ্র জানিয়েছিলেন, অর্নব যেহেতু সংশোধনাগারে বন্দী সেহেতু সংশেধনাগার কর্তৃপক্ষের কাছে জানতে চাওয়া হয়েছে অফলাইন কোর্স ওয়ার্ক সে কীভাবে করবে এবং নিরাপত্তা ব্যবস্থা কী হবে? পাশাপাশি আরও জানতে চাওয়া হয় এই বিষয়ে কারাদপ্তরের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কোনো অনুমতি আছে কিনা? বিষয়টি নিয়ে ই-মেইল করে বিশ্ববিদ্যালয়ের তরফে জানতে চাওয়া হয় হুগলী সংশেধনাগার কর্তৃপক্ষের কাছে। উপাচার্য জানিয়েছিলেন চিঠির উত্তর পাওয়ার পরই এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।