E Purba Bardhaman

প্রাক্তন মাওবাদী নেতা অর্ণব দামের পিএইচডি কাউন্সেলিং নির্বিঘ্নে, কুণাল ঘোষের মৌখিক আশ্বাসে কাটল জট

Former Maoist leader Arnab Dam's counseling for admission to Ph.D went smoothly.

বর্ধমান (পূর্ব বর্ধমান) :- অবশেষে জটিলতা কাটিয়ে প্রাক্তন মাওবাী নেতা অর্ণব দামের কাউন্সেলিং পর্ব শেষ হল সোমবার বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়ের গোলাপবাগ ক্যাম্পাসের কম্পোজিট বিল্ডিংয়ের কাদম্বিনী গাঙ্গুলী মেমোরিয়াল হলে। এদিন দুপুর ৩টে থেকে ৪১৪ নং রুমে এই কাউন্সেলিং শুরুর কথা থাকলেও একাধিক নিরাপত্তাবলয়ের মধ্যে দিয়ে তাঁকে প্রায় ২ টো নাগাদ নিয়ে আসা হয় কাউন্সিলিংয়ের জন্য। দুপুর প্রায় সাড়ে ৩টে নাগাদ কাউন্সেলিং শেষে তাঁকে বের করে নিয়ে যাওয়া হয় বর্ধমান কেন্দ্রীয় সংশোধনাগারে। এদিন কাউন্সেলিং শেষে অর্ণবকে নিয়ে যাওয়ার সময় অর্ণব জানান, রাজ্য সরকার, কারা দপ্তর এবং বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়ের সহযোগিতা ছাড়া এই কাজ সম্ভব হত না। এরপর তিনি বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়েই পিএইচডি-র জন্য পড়াশোনা করবেন। একইভাবে সকলের সহযোগিতা চাই যাতে গোটা রাজ্য তথা দেশ এবং বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়ের সম্মান ও গৌরব বৃদ্ধি করতে পারি। অপরদিকে, এদিন বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগের বিভাগীয় প্রধান সৈয়দ তানভির নাসরিন জানিয়েছেন, অর্ণব দামের পিএইচডিতে ভর্তির ক্ষেত্রে আপাতত আর কোনো বাধা থাকল না। আগামী ১৯ তারিখ তিনি ফের বিশ্ববিদ‌্যালয়ে কিছু কাগজপত্র পরীক্ষা নিরীক্ষার জন্য আসবেন। এরপর পিএইচডির জন্য প্রয়োজনীয় ফি জমা দিলেই প্রক্রিয়া সম্পূর্ণ হবে। তিনি জানিয়েছেন, অর্ণব নিজের যোগ্যতায় এই জায়গা পেয়েছে। কারও দয়া বা সুপারিশে নয়। তানভির নাসরিন জানিয়েছেন, ইতিহাস বিভাগে পিএইচডি-র জন্য তাঁদের মোট ৯টি আসন ছিল। এদিন মোট ১৮ জনকে ডাকা হয়েছিল। তার মধ্যে ৮ টি আসন পূর্ণ হয়েছে। ওবিসি একটি আসনে কিছু জটিলতার জন্য তা পূরণ করা যায়নি। উল্লেখ্য, কয়েকদিন আগেই বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য গৌতম চন্দ্র জানান, তিনি উপাচার্য না থাকলেও এখনও বেশ কয়েকবছর বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যাপক হিসাবেই থাকবেন। অনেকেই বলেছেন, অর্ণব দামের ভর্তি নিয়ে তিনি আন্তরিক নন। এবার তিনি দেখবেন কারা কতটা আন্তরিক। এদিন এই প্রশ্নে তানভির নাসরিন জানিয়েছেন, উপাচার্য এরকম বলেছেন কিনা জানা নেই। তবে একজন সমাজের মূল স্রোতে ফিরতে চাওয়া ব্যক্তির পড়াশোনার প্রতি আগ্রহের বিষয়টি সকলকেই দেখতে হবে। উল্লেখ্য, এদিনই উপাচার্য সাংবাদিক বৈঠকে জানান, অর্ণব দামের ভর্তি প্রক্রিয়া সংক্রান্ত বিষয় এবং তাঁর নিরাপত্তার বিষয় সম্পর্কে রাজ্যসভার প্রাক্তন সাংসদ কুণাল ঘোষ তাঁকে টেলিফোনে আশ্বস্ত করেন। এরপরই তিনি ভর্তি প্রক্রিয়ার জন্য নোটিফিকেশন জারি করেছেন। সোমবার থেকেই কাউন্সেলিং শুরু হচ্ছে। উল্লেখ্য, উপাচার্য গৌতম চন্দ্র অর্ণব দামের নিরাপত্তার বিষয়টি নিয়ে প্রশ্ন তুলে কারা কর্তৃপক্ষকে চিঠি দেন। আগে তিনি সাংবাদিক বৈঠকেই জানিয়েছিলেন, কারা দপ্তর থেকে উত্তর আসলেই তিনি ভর্তি প্রক্রিয়া শুরু করে দেবেন। অথচ একজন তৃণমূল নেতার মৌখিক আশ্বাসে কীভাবে তিনি এই ভর্তি প্রক্রিয়া করলেন সেই প্রশ্নে তিনি জানিয়েছেন, আশ্বাস পেয়েছেন এবং তাঁর বিশ্বাস কুণালবাবু যে আশ্বাস দিয়েছেন সেই অনুযায়ীই কাজ হবে। উল্লেখ্য, এদিন অর্ণব দামের নিরাপত্তার জন্য সাদা পোশাকে মোতায়েন করা হয়েছিল পুলিশকে। জানা গেছে, এদিন তাঁর নিরাপত্তার বিষয়টিতে নজরদারি ছিল সিআইডি, জেলা গোয়েন্দা ও রাজ্য গোয়েন্দাদের, বর্ধমান থানার পুলিশ, কারাগারের পুলিশ, হুগলী জেলা ও হুগলী কারাগার পুলিশেরও। অপরদিকে, তৃণমূল নেতা কুণাল ঘোষের ফোনে অর্ণবের এই কাউন্সেলিং শুরু নিয়ে গণতান্ত্রিক অধিকার রক্ষা সমিতির সাধারণ সম্পাদক রঞ্জিত শূর এদিনই প্রেস বিবৃতিতে কড়া সমালোচনা করেছেন। তিনি জানিয়েছেন, “অর্ণব দাম-সহ সকল রাজনৈতিক বন্দির নিঃশর্ত মুক্তি চাই। অর্ণব দামকে রাজ্য সরকার মিথ্যা মামলায় এবং সাজানো সাক্ষী এনে সাজা দিয়েছে। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ক্ষমতায় আসার আগে ২০১১ সালে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন ক্ষমতায় এলে সমস্ত রাজনৈতিক বন্দিকে মুক্তি দেওয়া হবে। সেই প্রতিশ্রুতি তিনি রক্ষা করেননি। বরঞ্চ মাওবাদী অভিযোগে আরো বেশ কিছু তরুণ- তরুণীকে নতুন করে গ্রেপ্তার করে জেলে পচিয়ে মারছেন। অর্ণবের বিরুদ্ধে প্রথম পাঁচ বছরের মামলায় কোন সাক্ষী তাঁকে শনাক্ত করেনি। তাঁর বিরুদ্ধে কেউ কোনও অভিযোগ করেনি। এরপর অর্ণব কলকাতা হাইকোর্টের জয়মাল্য বাগচীর বেঞ্চ থেকে জামিন পায়। জামিন পাওয়ার পরে একাংশ মিডিয়ায় কিছু লেখালেখি হলে পুলিশের অতি তৎপরতায় তাঁর বিরুদ্ধে মিথ্যা সাক্ষ্য সংগ্রহ করে আদালতে হাজির করা হয়। অদ্ভুত রকম সব সাজানো সাক্ষী দিয়ে তাঁকে সাজা দেওয়া হয়। শুধু অর্নব নয় গোটা শিলদা মামলার ক্ষেত্রেই এটা সত্য। পুলিশ আর পুলিশের সাজানো সাক্ষীর উপর দাঁড়িয়ে শিলদা মামলায় রাজনৈতিক রায়ে অর্ণব দাম এবং অন্যান্য রাজনৈতিক বন্দীদের সাজা দেওয়া হয়েছে। রাজ্য সরকার বা তৃণমূল নেতা যতই ফোনাফোনি করে মহান সাজার চেষ্টা করুন না কেন অর্ণবের জেলবন্দি থাকার কারণও কিন্তু তৃণমূল সরকার। অর্ণব যা করেছে নিজের চেষ্টায় করেছে। যা তাঁর প্রাপ্য তাই পেয়েছে। কারও দয়ার দান নয়। ভিসি বা তৃণমূল নেতারা নাটকবাজি করে ভর্তি আটকে তাঁর কৃতিত্বের ভাগ আত্মসাৎ করতে চাইছে। সেই বহু প্রতীক্ষিত ‘রাজার চিঠি’ আসার আগেই নোটিশ জারি থেকে বোঝা যায় সবটাই ছিল নিজেদের দিকে ঝোল টানার সাজানো নাটক। অর্ণবের কৃতিত্বের প্রতিফলিত আলো নিজেদের দিকে টেনে নেওয়ার ধূর্তামি। কুনাল ঘোষ সরকারের কোন পদে আছেন যে তার ফোনেই ভিসি-র সব বাধা কেটে গেলো! অনুমতি, নিরাপত্তা এসব না ভেবে কি জেল থেকে অর্ণবকে পরীক্ষা দিতে পাঠিয়েছিল! এর আগে বিএ, এমএ, স্লেট এসব পরীক্ষা তো জেল থেকে বেরিয়ে পরীক্ষা কেন্দ্রে গিয়েই দিয়েছিলেন। তাহলে এবার এসব প্রশ্ন ওঠে কী করে? আসলে এসব নাটক করে অর্ণবের কৃতিত্বের ভাগ নিয়ে জনমানসে ভাবমূর্তি উজ্জ্বল করার চেষ্টা করলেন তৃণমূল নেতা। ভিসি তাকে সংগত করলেন। প্রসঙ্গত হুগলি জেলে অর্ণবের তিন মাসের মজুরি এখনও আটকে রেখেছে রাজ্য সরকার। নানা অজুহাতে দিচ্ছে না। অবিলম্বে অর্ণবকে সেই মজুরিও দিতে হবে। সেই দাবিও আমরা জানিয়েছি জেল সুপারকে। অর্ণব দামকে এভাবে হেনস্তা করার জন্য আমরা বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি এবং মন্ত্রীসহ কারা বিভাগের গয়ংগচ্ছ মনোভাবের নিন্দা করছি। ভবিষ্যতে আর কোন সমস্যায় যেন অর্ণবকে ফেলা নয় সেটাও সবাইকে নজর রাখার অনুরোধ জানাচ্ছি।”

Exit mobile version