বর্ধমান (পূর্ব বর্ধমান) :- একসময়ে যে কাঁধে একে-৪৭ থাকার অভিযোগ, সেই কাঁধে উঠলো বইয়ের ব্যাগ। যাবতীয় জট, জটিলতা কাটিয়ে মঙ্গলবার থেকে শুরু হল বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগের পিএইচডির ক্লাস। প্রথম দিনই ক্লাসে এলেন প্রাক্তন মাওবাদী বন্দী অর্ণব দাম ওরফে বিক্রম। সামাজিক ইতিহাসের কোনো একটি বিষয় নিয়ে গবেষণা করবেন অর্নব। তবে ঠিক কি বিষয়ের উপর গবেষণা করবেন তা ঠিক হতে সময় লাগবে প্রায় ছয় মাস।
উল্লেখ্য, দীর্ঘ টালবাহানার পর গত সপ্তাহের সোমবার অর্ণবের কাউন্সেলিং সম্পন্ন হয়। সেদিন বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়ের কাদম্বিনী গাঙ্গুলি ভবনে কাউন্সেলিংয়ের জন্য নিয়ে আসা হয়েছিল অর্ণবকে। সেখানেই তাঁর কাউন্সেলিং হয়। গত শুক্রবার বর্ধমান কেন্দ্রীয় সংশোধনাগার থেকে প্রিজন ভ্যানে করে বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়ের গোলাপবাগ ক্যাম্পাসের ইতিহাস বিভাগে নিয়ে যাওয়া হয় অর্ণবকে। সেখানে তার ডকুমেন্ট ভেরিফিকেশন হয়। এককথায় সব জল্পনার অবসান ঘটিয়ে অর্ণব ক্লাস শুরু করায় খুশী বিভাগের আধিকারিক থেকে সকলেই। মঙ্গলবার ইতিহাসের বিভাগীয় প্রধান সৈয়দ তানভীর নাসরিন জানিয়েছেন, খুবই আনন্দের কথা যে সমস্ত বাধা বিপত্তি কাটিয়ে কুনাল ঘোষ, কারামন্ত্রী, উচ্চশিক্ষামন্ত্রী, রাজ্য সরকার, বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ-সহ সকলের সহযোগিতায় মঙ্গলবার থেকে ইতিহাস বিভাগের ৬ মাসের কোর্স ওয়ার্ক শুরু হলো। খুব সুন্দর ভাবে আজ ক্লাস শুরু হয়েছে। অর্নবের সাথে যারা কারা বিভাগের এসেছেন তাঁরাও সহযোগিতা করেছেন। সমাজ, রাষ্ট্র, সরকার, ব্যক্তি হিসাবে আমরা সবাই চেয়েছি যারা মূল স্রোত থেকে অপরাধী হিসাবে ছিটকে গেছেন সবাই ফিরে আসুন মূল স্রোতে। অর্নবের এই ঘটনা অত্যন্ত ইতিবাচক বার্তা সমাজের পক্ষে। তিনি মূল স্রোতে ফিরছেন, লেখা-পড়া করছেন। সামাজিক ইতিহাসের কোন বিষয়ে গবেষণা করবেন সেটা এখনও ঠিক হয়নি। কোর্স ওয়ার্ক শেষ হলে যোগ্যতা নির্ণয়ের পরীক্ষা হবে। তারপরে ঠিক হবে তিনি কার কাছে কোন বিষয়ে গবেষণা করবেন। যদিও এই ৬ মাসে তাঁর ভাবনাগুলোর কথা, আগ্রহের কথা আলোচনা করবেন।
নির্ধারিত সময়েই প্রথম দিনের ক্লাসে বর্ধমান কেন্দ্রীয় সংশোধনাগার থেকে প্রিজন ভ্যানে বিশ্ববিদ্যালয়ে নিয়ে আসা হয় তাঁকে। বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়ে পিএইচডির প্রবেশিকা পরীক্ষায় নজরকাড়া ফল করেন অর্ণব। ২৪৯ জনকে পিছনে ফেলে প্রথম স্থানটি দখল করেন অর্ণব দাম। এরপরেই শুরু হয় নানা বিভ্রাট। পূর্ব নির্ধারিত সূচি অনুযায়ী মেধা তালিকায় থাকা পরীক্ষার্থীদের জন্য ৯ জুলাই কাউন্সেলিংয়ের দিন নির্ধারিত ছিল। কিন্তু ৮ জুলাই বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে বিজ্ঞপ্তি দিয়ে জানিয়ে দেওয়া হয় অনিবার্য কারণে কাউন্সেলিং প্রক্রিয়া স্থগিত করে দেওয়া হল। পরবর্তীতে প্রাক্তন সাংসদ কুণাল ঘোষ বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য গৌতম চন্দ্রের সঙ্গে টেলিফোনে কথা বলেন। তারপরই মাওবাদী নেতা অর্ণব দামের ভর্তি নিয়ে জট কাটে। হুগলি থেকে বর্ধমান সংশোধনাগারে নিয়ে আসা হয় অর্ণবকে। ভর্তি প্রক্রিয়াও সম্পন্ন হয়। মঙ্গলবার সব জট কেটে ক্লাস শুরু হওয়ায় খুশী বিভাগীয় প্রধান সৈয়দ তানভীর নাসরিন। তিনি বলেন, যারা সমাজের মূল স্রোত থেকে ছিটকে গেছে, তাদের মূল স্রোতে ফিরিয়ে আনা তো ইতিবাচক দিক। গত ১৪ জুলাই অর্ণব দামকে হুগলি জেলা সংশোধনাগার চুঁচুড়া থেকে কড়া পুলিশি পাহাড়ায় বর্ধমান জেলা কেন্দ্রীয় সংশোধনাগারে আনা হয়। তার পর থেকেই অর্ণব কার্যত বর্ধমান সংশোধনাগারে আবাসিক হয়েছেন।