বাংলা থেকে ৩০ টা সিট দিন বাংলাকে ১ নম্বর করে দেবো – অমিত শাহ
admin
মেমারী (পূর্ব বর্ধমান) :- ৪২-এ ৪২ কিংবা ১৮-২০ নয়, রীতিমতো পশ্চিমবাংলা থেকে ৩০ টা আসনের টার্গেট বেঁধে দিয়ে গেলেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ। মঙ্গলবার পূর্ব বর্ধমানের মেমারী থানার রসুলপুর সংলগ্ন বিষ্ণুপুর মাঠে বর্ধমান পূর্ব লোকসভা কেন্দ্রের বিজেপি প্রার্থী অসীম সরকারের সমর্থনে নির্বাচনী জনসভায় বক্তব্য রাখেন অমিত শাহ। এদিন অমিত শাহ বলেন, ৩০-র বেশি সিট দিন তাহলে সোনার বাংলা তৈরি হবে। বাংলা ১ নম্বর হবে। তিনি বলেন, মোদিকে ফের প্রধানমন্ত্রী করুন। ৪০০ সিট পার করতে হবে। বাংলা থেকে ৩০ এর বেশি সিট মোদিজীকে উপহার দিন। অসীম সরকারকে ভোট দেওয়া মানে মোদিকে প্রধানমন্ত্রী বানানো। অসীম সরকারকে জেতাতে হবে। কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী এদিন বলেন, এই নির্বাচন সেই নির্বাচন যেখানে দেশের মানুষ, বাংলার মানুষ কি চান, পরিবাররাজ চান নাকি রামরাজ্য চান। নাম না করে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় সম্পর্কে অমিত শাহ বলেন, ভাতিজাকে সিএম করতে চান? অযোধ্যায় রামমন্দির তৈরি করা দরকার ছিল কিনা বলুন। সিপিএম, কংগ্রেস, তৃণমূল রামমন্দির ইস্যুকে ৭০ সাল ধরে বিভ্রান্ত করেছেন। আপনারা বাংলা থেকে ১৮ সিট দিয়েছিলেন, তাই মোদি রামমন্দির করে দিয়েছেন। কয়েক বছর ধরে মানুষ চেয়েছিলেন রামমন্দির তৈরি হোক। কিন্তু মমতা দিদিরা অনুষ্ঠানে যায় নি। কারণ ওরা অনুপ্রবেশকারীদের সমর্থন করেন। ৩৭০ কাশ্মীর থেকে তোলার বিরোধিতা করেছিলেন মমতা দিদি।। কিন্তু দিদি, আপনার কথায় দেশ চলে না। বাংলার মানুষ চেয়েছিলেন কাশ্মীরে ভারতের পতাকা উড়ুক। তাই হয়েছে। মানুষ চেয়েছিল। অমিত শাহ বলেন, মোদিজি গত ১০ বছরে গরিবদের জন্য কাজ করেছেন। বিনামূল্যে চাল, আটা, ১২ কোটি মানুষকে শৌচাগার করে দিয়েছেন।। ৪ কোটি আবাস দিয়েছেন। ১০ কোটি মানুষকে গ্যাস সিলিন্ডার দিয়েছেন। ১৪ কোটি মানুষকে পানীয় জল দিয়েছেন। কিন্তু দিদি মোদির সুফল নিচে পৌঁছাতে দেন না। অসীম সরকারকে জিতিয়ে বাংলা থেকে ৩০ এর বেশি সিট দিলে ৫ লাখ টাকার বিনামূল্যে চিকিৎসা খরচ দেবেন মোদিজী। কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, দিদি আর তাঁর ভাইপো ভয়ে মরছে। বিজেপি নেতা কর্মীদের হোটেল বুক করতে দিচ্ছে না। তাঁদের ভয় দেখাচ্ছে গুণ্ডাদের দিয়ে। বিজেপি কিন্তু কাউকে ভয় পায় না। মমতা দিদি যত সন্ত্রাস করার করে নাও। দিদি আর ভাতিজার বিদায় নিশ্চিত। পরিসংখ্যান তুলে ধরে অমিত শাহ বলেন, বিজেপি কর্মকর্তাদের খুন করা হয়েছে, দিদির গুণ্ডারা খুন করেছে। আমাদের সরকার ক্ষমতায় এলে পাতাল থেকেও খুনিদের বার করে সাজা দেবে বিজেপি। আমাদের লোককে চরস গাঁজার মিথ্যা কেশ দিচ্ছে। আদালত তাঁদের নির্দোষ বলছে। লজ্জা করছে না দিদি আপনার। কেন্দ্র সরকারের প্রকল্পের নাম নিজের নাম লিখে দিচ্ছে। অথচ এই প্রকল্পের মাধ্যমে মোদিজী বাংলার বিকাশের জন্য ১০ লাখ কোটি টাকা দিয়েছেন। কিন্তু গ্রামে এই সুফল পৌঁছায়নি। তৃণমূল গুণ্ডারা সেই টাকা খেয়ে নিয়েছে। বিজেপি সরকার এলে ওই টাকা উলটো করে টাঙিয়ে আদায় করবে। রাজ্যের মন্ত্রীদের ঘর থেকে টাকা বের হচ্ছে। মন্ত্রীর ঘর থেকে ৫১ কোটি টাকা পেয়েছে। তাকে কি জেলে ঢোকানো উচিত নয়। দিদির লজ্জা করা উচিত। যারা বাংলার টাকা খেয়েছে তাদের জেলে ঢোকাবই। সন্দেশখালির ঘটনা গোটা দুনিয়ায় হয়নি। অপরাধীদের বাঁচানোর চেষ্টা চলছে। মহিলাদের শোষণ করেছে তৃণমূল নেতারা। অপরাধীদের জেলে ঢোকানো উচিত। যারা মহিলাদের ওপর অত্যাচার করেছে তাদের জেলে ঢোকাবে বিজেপি। অনুপ্রবেশকারীদের রোখা উচিত কি না বলুন। মমতা দিদি রোখেননি। আসামে বিজেপি সরকার হওয়ার পর অনুপ্রবেশ বন্ধ হয়ে গেছে। বাংলায় বিজেপি সরকার তৈরি হবে। সেদিন বেশি দূর নেই। এখানেও অনুপ্রবেশ বন্ধ হবে। বাংলাতেও বাংলাদেশ থেকে হিন্দু, জৈন শরণার্থীরা এসেছেন। মমতা সিএএ নিয়ে বিরোধিতা করছেন। কারণ অনুপ্রবেশকারীরাই তাঁর ভোট ব্যাংক। অমিত শাহ বলেন, প্রত্যেক শরণার্থীদের মোদিজী নাগরিকত্ব দেবেন। বর্ধমানে নতুন করে রেল স্টেশন, রেলওয়ে লাইন, দুর্গাপুর আসানসোল নতুন স্টেশন, আবাস যোজনায় ঘর, ৭ লাখ লোককে সিলিন্ডার দিয়েছে, ৫ কেজি চাল দিয়েছে। ১৯ নং জাতীয় সড়ক সম্প্রসারণ করেছেন মোদিজী। গোটা দেশ এগোচ্ছে, আর বাংলা পিছিয়ে যাচ্ছে। ৩০-এর বেশি সিট দিন তাহলে সোনার বাংলা তৈরি হবে। বাংলা ১ নম্বর হবে। অমিত শাহ বলেন, মা মাটি মানুষের সরকার মাফিয়াদের সরকার হয়েছে। যদি সত্যি মা মাটি মানুষের সরকার দরকার হয় তা বিজেপিই করবে। মোদিজীই তা করবেন। এদিনের ‘বিজয় সংকল্প সভা’-য় অন্যান্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন কেন্দ্রীয় আইন ও বিচারমন্ত্রী অর্জুন রাম মেঘওয়াল, কেন্দ্রীয় নেতা সতীশ ধন, সঞ্জয় সিং, বিদ্যাসাগর চক্রবর্তী, সুনীল গুপ্ত, গোপাল চট্টোপাধ্যায়। উল্লেখ্য, অমিত শাহের এই সভা থেকে কয়েকজন মহিলার গলার হার ছিনতাইয়ের অভিযোগ উঠেছে। সুপর্ণা দত্ত নামে ছিনুই এলাকার এক মহিলার, বিষ্ণুপুরের বাসিন্দা ঝুমা চৌধুরি নামে এক শিক্ষিকারও গলার হার ছিনতাইয়ের অভিযোগ উঠেছে। পুলিশ এব্যাপারে ১ মহিলাকে আটক করেছে বলে জানা গেছে। একইসঙ্গে একটি বেসরকারি সংস্থা এই সভাস্থলেই ড্রোন উড়িয়ে ছবি তোলায় নিরাপত্তার কারণে অমিত শাহের নিরাপত্তাকর্মীরা ড্রোনটিকে বাজেয়াপ্ত করে। বিষ্ণুপুরের শিক্ষিকা ঝুমা চৌধুরি জানিয়েছেন, তিনি স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহকে দেখতে এসেছিলেন। টেন্টের বাইরেই ছিলেন। সেখানে ভিড় ছিলো। পরে দেখতে পান ভিড়ের মধ্যে তাঁর সোনার চেন চুরি হয়ে গেছে। ঝুমা চৌধুরি জানিয়েছেন, তিনি শুনেছেন আরও ২ জনের চেন চুরি হয়েছে।