বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়ে এসে নরেন্দ্র মোদির ভূয়সী প্রশংসা রাজ্যপালের, কালো পতাকা দেখিয়ে তৃণমূল ছাত্রপরিষদের বিক্ষোভ
admin
বর্ধমান (পূর্ব বর্ধমান) :- সামনেই লোকসভা ভোট। তার আগেই রাজ্যপালের মুখে মোদির ভূয়সী প্রশংসা বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়ে। যা নিয়ে শুরু হয়েছে তরজা। বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় বোলপুর থেকে বর্ধমান মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালে আসা এবং সেখান থেকে বর্ধমান স্টেশনের দুর্ঘটনাস্থল পরিদর্শনের পর শুক্রবার বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়ে আসেন রাজ্যপাল সি ভি আনন্দ বোস। বৃহস্পতিবার সন্ধ্যেয় বর্ধমান স্টেশনে জলের ট্যাংক ভেঙে পড়ে আহতদের দেখতে রাজ্যপাল হাসপাতালে আসেন। তখনই তিনি বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়ে যাবার কথা জানান। সেই মত বৃহস্পতিবার রাতের মধ্যেই সাজো সাজো রব ওঠে বিশ্ববিদ্যালয়ে। এদিন গোলাপবাগের অডিটোরিয়ামে ভাষণ দেন রাজ্যপাল। যদিও মেয়ের অসুস্থতার জন্য বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য এদিন উপস্থিত ছিলেন না। পরিবর্তে উপস্থিত ছিলেন রেজিষ্টার-সহ বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্যান্য আধিকারিকরা। এদিন সকালে সার্কিট হাউস থেকে বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়ের অডিটোরিয়ামে ঢোকার মুখে তৃণমূল ছাত্র পরিষদের সমর্থকরা রাজ্যপালকে পুলিশের সামনেই কালো পতাকা নিয়ে গো ব্যাক স্লোগান দেয়। একইভাবে অডিটোরিয়াম থেকে তিনি যখন বেড়িয়ে যান তখনও তৃণমূল ছাত্র পরিষদের সমর্থকরা পুলিশের উপস্থিতিতেই গো ব্যাক স্লোগান দেয়। এরই পাশাপাশি এদিন এসএফআইয়ের গুটিকতক সমর্থক হাতে পোস্টার নিয়ে বিক্ষোভ দেখায় রাজ্যপালকে। অন্যদিকে, এদিন অডিটোরিয়ামে প্রায় মিনিট ২০ বক্তব্য রাখেন বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়ের আচার্য সি ভি আনন্দ বোস। আর এই বক্তব্যেই সরাসরি তিনি দেশের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির নাম উল্লেখ করে বলেন, প্রধানমন্ত্রী দেশের যুবকদের জন্য অনেক প্রকল্প এনেছেন। সেই প্রকল্পকে বাস্তবায়িত করতে হলে যুবকদের নিয়মানুবর্তিতা এবং শৃঙ্খলাপরায়ণ হতে হবে। এই প্রসঙ্গেই তিনি বেশ কয়েকটি গল্পেরও উল্লেখ করেন। তিনি বলেন, লিটল জন একজন ভাল মনের মানুষ ছিলেন। কিন্তু তাঁর মধ্যে ছিল না কোনো নিয়মানুবর্তিতা এবং শৃঙ্খলাপরায়ণতা। তাই তিনি ভালো মনের মানুষ হলেও সমালোচিত হতেন। রাজ্যপাল এদিন যুবকদের চরিত্র গঠনের ওপরও জোড় দেন। তিনি বলেন ভালো ও দৃঢ় চরিত্রের মানুষ হিসাবে নিজেকে তৈরি করতে হবে। পরে রাজ্যপাল সাংবাদিকদের বলেন, বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয় এসে খুব ভালো লাগছে। আমি খুবই আবেগপ্রবণ এখানে এসে। প্রধানমন্ত্রী যে স্বপ্নের ভারত প্রকল্প ঘোষণা করেছেন সেটাই আলোচনা হয়েছে, এ বিশ্ববিদ্যালয় ইতিমধ্যে তা কার্যকর করার চেষ্টা করছে। কালো পতাকা দেখানোর প্রসঙ্গে রাজ্যপাল বলেন, আমি খুবই সন্তুষ্ট ভারতের সুপ্রিম কোর্ট বাংলা মডেল করার আদেশ দিয়েছে। রাজ্যপাল ও মুখ্যমন্ত্রীর মধ্যে কথা বলে যে অ্যাজেন্ডা আছে তা মেটানোর জন্য। সুপ্রিম কোর্টের আদেশে রাজ্যপাল মুখ্যমন্ত্রীকে ডেকে আলোচনা করবে এবং সিদ্ধান্ত গ্রহণ করবে নিজেদের মধ্যে বোঝাবুঝি বা আলোচনার মাধ্যমে। এই উদ্যোগকে বাংলা মডেল বলা হচ্ছে। আলোচনা করতে হবে, আমাদের কোন দ্বন্দ্ব নয় আলোচনা করতে হবে, দ্বন্দ্বে কোন সমস্যার সমাধান হয় না। রাজ্যপাল বলেন, আমি বিশ্ববিদ্যালয়-বিশ্ববিদ্যালয়ে গিয়ে উন্নয়ন মূলক দেশ গড়ার জন্য কি কি দরকার, কি কি প্রয়োজন সেই নিয়ে আলোচনা করছি। এদিকে, সামনেই লোকসভা ভোট, আর তার আগেই বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়ে ঝটিকা সফরে এসে রাজ্যপাল নরেন্দ্র মোদির নাম উল্লেখ করে প্রকল্পের কথা বলায় সমালোচনার ঝড় বইতে শুরু করেছে। এদিন রাজ্যপালকে কালো পতাকা দেখানো সম্পর্কে তৃণমূল ছাত্র পরিষদের রাজ্য সম্পাদক আমিরুল ইসলাম জানিয়েছেন, দীর্ঘ ৬ মাস ধরে বিশ্ববিদ্যালয়গুলিতে অরাজকতা শুরু হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়গুলিতে স্থায়ী উপাচার্য নেই। ছাত্রছাত্রীদের বিভিন্ন সমস্যার সম্মুখীন হতে হচ্ছে। এর দায় রাজ্যপালের। এর পাশাপাশি নিজের ব্যক্তিস্বার্থে সুপ্রিম কোর্টের মামলা লড়ার জন্য বিশ্ববিদ্যালয়গুলি থেকে টাকা চেয়ে পাঠিয়েছেন। এই ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতেই এদিন তৃণমূল ছাত্র পরিষদের সমর্থকরা কালো পতাকা নিয়ে বিক্ষোভ দেখিয়েছেন। অন্যদিকে, এব্যাপারে এসএফআইয়ের জেলা কমিটির সদস্য অয়ন মণ্ডল ও রানা দাস উভয়েই জানিয়েছেন, কেন্দ্রের শিক্ষানীতি প্রত্যাহারের দাবিতে তাঁরা পোস্টার নিয়ে বিক্ষোভ দেখিয়েছেন। একইসঙ্গে রাজ্য সরকারও ঘুরপথে এই শিক্ষানীতি প্রয়োগ করছে। তাই সে ব্যাপারেও তারা বিক্ষোভ দেখিয়েছেন।