বর্ধমান (পূর্ব বর্ধমান) :- ‘হাট বসেছে শুক্রবারে বক্সীগঞ্জের পদ্মাপারে’। কর্পোরেট দুনিয়ায় যখন গ্রামবাংলার এই হাট সংস্কৃতিকেই বদলে দিয়ে তৈরী হচ্ছে আধুনিক শপিং কমপ্লেক্স – সেই সময় কবিতার এই লাইনের বদলে বর্ধমান সদরের মানুষ শুনছেন – হাট বসছে শনি, মঙ্গলবারে, বর্ধমানের কৃষি খামারে। দীর্ঘ কয়েকবছর আগে বর্ধমান সদরের জেলা কৃষিখামারে তৈরী হয়েছিল রাজ্য সরকারের উদ্যোগে কিষাণ মাণ্ডি। বারবার কিষাণ মাণ্ডিকে চালু করার উদ্যোগ নেওয়া হলেও তা বাস্তবায়িত হয়নি। এমনকি খোদ মুখ্যমন্ত্রী বর্ধমানের প্রশাসনিক বৈঠকে এসেও কিষাণ মাণ্ডিগুলিকে চালু করতে না পারায় জেলা প্রশাসনকে কাঠগড়ায় তুলেছেন। দাওয়াই দিয়েছেন যেকোনোভাবে চালু করতে হবে কিষাণ মাণ্ডিকে। প্রয়োজনে কিষাণ মাণ্ডি লাগোয়া এলাকায় তৈরী করতে হবে ছোট হিমঘর, ছোট ছোট শিল্প কারখানা। কিন্তু তাতেও এগোয়নি কিছুই। পরবর্তীকালে বর্ধমানের এই কিষাণ মাণ্ডিতে ধান কেনা-বেচা শুরু হলেও সামগ্রিকভাবে সারাবছর ধরে চালু করতে পারায় অস্বস্তির মধ্যে পড়ে জেলা প্রশাসন। ইতিমধ্যে বর্ধমান শহরের বুকে থাকা তেঁতুলতলা বাজার এবং রাণীগঞ্জ বাজারের পাইকারী মার্কেটকে এই কিষাণ মাণ্ডিতে তুলে আনার উদ্যোগ নেওয়া হয়। কিন্তু ব্যবসায়ীদের অনাগ্রহে তাও বেশিদূর এগোয়নি। কার্যত কিষাণ মাণ্ডিকে চালু করার জন্য দীর্ঘদিনের এই চেষ্টার পর অবশেষে রাজ্য সরকারের উদ্যোগে পূর্ব বর্ধমানের বর্ধমান সদর উত্তর মহকুমার কিষাণ মাণ্ডি জোড়ালোভাবে চালু হতে চলেছে আগামী মঙ্গলবার থেকে। রাজ্য সরকার তথা জেলা প্রশাসন এবং স্থানীয় ব্যবসায়ীদের উদ্যোগে আগামী মঙ্গলবার থেকে চালু হতে চলেছে এই কিষাণমাণ্ডিতে হাট। প্রায় মাস দুয়েক আগে জেলা কৃষি খামারে একটি বৈঠকে এসে রাজ্যের কৃষিমন্ত্রী আশীষ বন্দোপাধ্যায়ের উপস্থিতিতে কিষাণ মাণ্ডিকে চালু করার জন্য রাজ্যের প্রাণী সম্পদ বিকাশ দপ্তরের মন্ত্রী স্বপন দেবনাথ এই হাট চালুর প্রস্তাব দেন। এরপরই ধাপে ধাপে বিষয়টি নিয়ে এগোতে থাকে জেলা প্রশাসন। বর্তমানে এই কিষাণ মাণ্ডিতে ধান ক্রয় কেন্দ্র ছাড়াও সবুজসাথী প্রকল্পে সাইকেলের বিতরণ কেন্দ্র রয়েছে। সম্প্রতি বর্ধমান-কালনা রোডকে সম্প্রসারণের জন্য এগ্রিকালচার ফার্ম সংলগ্ন ফুটপাতের প্রায় ৯০জন ব্যবসায়ীকে উচ্ছেদ করা হয়। পরবর্তীকালে ব্যবসায়ীদের পক্ষ থেকে সরকারের কাছে পুনর্বাসনের আবেদন জানানোয় কিষাণ মাণ্ডির ভেতরে তাদের শর্ত সাপেক্ষে অস্থায়ী দোকান তৈরীর অনুমতি্ দেয় প্রশাসন। স্থানীয় ব্যবসায়ীরা জানিয়েছে্ন, ইতিমধ্যেই তাঁদের দোকানঘর তৈরী। একইসঙ্গে এই কিষাণ মাণ্ডিকে জনপ্রিয় করে তুলতে তাঁরাও চেষ্টা চালাতে শুরু করেছেন। এরই মাঝে সরকারীভাবে হাট চালুর অনুমোদন দেওয়ায় রীতিমত খুশী এলাকার বাসিন্দারা। ইতিমধ্যেই এই হাট চালুর বিষয়ে ব্যাপকভাবে প্রচার শুরু হয়েছে। স্থানীয় ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন, প্রতি মঙ্গল ও শনিবার এই হাট বসবে। হাটের চরিত্র বজায় রেখেই এখানে সমস্ত ধরণের মালপত্র বিক্রি হবে। বর্ধমানের অতিরিক্ত জেলাশাসক (পঞ্চায়েত) প্রবীর চট্টোপাধ্যায় জানিয়েছে্ন, মঙ্গলবার থেকে হাট চালুর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। অন্যান্য গ্রামের হাটের মতই এখানে মালপত্র নিয়ে আসবেন বিক্রেতারা। হাটকে জনপ্রিয় করার জন্য প্রচারও চালাচ্ছেন তাঁরা। তিনি জানিয়েছেন, ইতিমধ্যেই এই কৃষি খামারে তৈরী হয়েছে মুখ্যমন্ত্রীর স্বপ্নের স্থায়ী মাটি উত্সবের প্রাঙ্গণ। এছাড়াও তৈরী হচ্ছে খাদ্য দপ্তরের উদ্যোগে একটি আঞ্চলিক পরীক্ষাগার। তৈরী হচ্ছে কৃষিভবন। ইতিমধ্যেই কৃষি খামারের সিংহভাগ এলাকাকে তুলে দেওয়া হয়েছে বিধানচন্দ্র কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের হাতে। ফলে স্বাভাবিকভাবেই গোটা কৃষিখামারকে ঘিরে একাধিক নতুন প্রকল্পকে হাতে নেওয়া হয়েছে। এগুলি চালুর পাশাপাশি হাট এবং বাজারগুলি চালু হলে তা এলাকার আর্থ সামাজিক অবস্থার পরিবর্তন হবে বলে মনে করছেন এলাকার বাসিন্দারাও।