E Purba Bardhaman

বর্ষার চাষে জল সংকটের তীব্র সম্ভাবনা দেখা দিল দক্ষিণবঙ্গের ৫ জেলায়

A high level meeting on water supply of Kharif cultivation under the leadership of Burdwan Divisional Commissioner

বর্ধমান (পূর্ব বর্ধমান) :- পুড়ছে গোটা দক্ষিণবঙ্গ। জুলাই মাসের মাঝামাঝি সময়েও বর্ষার দেখা নেই। আবহাওয়া দপ্তরও কোনো সুখবর শোনাতে পারছেন না। তারই মাঝে শুক্রবার বর্ধমান ডিভিশনাল কমিশনারের নেতৃত্বে খরিফ চাষের জল সরবরাহ নিয়ে উচ্চ পর্যায়ের বৈঠকেও মিলল না কোনো আশার বাণী। বরং সংকটের কথাই শুনিয়েছেন বর্ধমানের ডিভিশনাল কমিশনার বরুণ রায়। শুক্রবার বর্ধমানের সার্কিট হাউসে দক্ষিণবঙ্গের পাঁচ জেলার কৃষি, সেচ, ডিভিসি সহ প্রশাসনিক আধিকারিকদের নিয়ে উচ্চ পর্যায়ের বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। এই বৈঠকেই ডিভিশনাল কমিশনার বরুণবাবু জানিয়েছেন, জলাধারে নেই পর্যাপ্ত সরবরাহ করার মত জল। বৃষ্টির ওপরই ভরসা করতে হচ্ছে তাঁদের। ফলে বর্ষার খরিফ চাষে চাষীদের জল পাওয়া নিয়ে ঘোরতর দুশ্চিন্তা দেখা দিল পূর্ব বর্ধমান ও পশ্চিম বর্ধমান, হুগলী, বাঁকুড়া ও হাওড়ার জেলার চাষীদের। চলতি বর্ষা মরশুমে অন্যান্য বছরের তুলনায় ৪০ শতাংশ বৃষ্টিপাত কম হওয়ায় এবার খরিফ চাষে ব্যাপক জলসংকটের সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে। পাশাপাশি মাইথন এবং পাঞ্চেত জলাধারেও প্রয়োজনীয় খরিফ চাষের জন্য পর্যাপ্ত জল না থাকায় শেষ পর্যন্ত খরিফ চাষের পরিণতি কি দাঁড়ায় তা নিয়েই দুশ্চিন্তা দেখা দিয়েছে। এদিনের বৈঠকে হাজির ছিলেন পূর্ব বর্ধমানের জেলাশাসক বিজয় ভারতী, জেলা সভাধিপতি শম্পা ধারা, ডিভিসির প্রতিনিধি, জেলা কৃষি দপ্তরে যুগ্ম কৃষি আধিকারিক জগন্নাথ চট্টোপাধ্যায় সহ জেলা প্রশাসনের আধিকারিক, অন্যান্য জেলার প্রতিনিধিরাও। বৈঠকের পর ডিভিশনাল কমিশনার বরুণ রায় জানিয়েছেন, যেহেতু এবারে প্রয়োজনের তুলনায় প্রায় ৪০ শতাংশ বৃষ্টিপাত কম হয়েছে তাই জল সরবরাহের ক্ষেত্রে বিলম্বিত হতে পারে। তিনি জানিয়েছেন, মাইথন এবং পাঞ্চেত জলাধারে যে জল মজুদ রয়েছে তাতে ২৫ জুলাই থেকে জল ছাড়ার কথা থাকলেও তাঁরা ওইদিন ফের একটি রিভিউ বৈঠক করবেন। এর মধ্যে বৃষ্টিপাতের পরিমাণ কি হয় তা দেখার পরই জল ছাড়ার ব্যাপারে চুড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। সেক্ষেত্রে ২৫ জুলাই সন্ধ্যের পর জল ছাড়া হলে ধাপে ধাপে তা এই জেলার ক্ষেত্রে তা এসে পৌঁছাবে ৩০ জুলাই নাগাদ। জেলা কৃষি আধিকারিক জগন্নাথ চট্টোপাধ্যায় এদিন জানিয়েছেন, এখনও গোটা জেলায় যে বৃষ্টিপাত হয়েছে তাতে সমস্যা রয়েছে। কোথাও কোথাও জলের অভাবে বীজতলা শুকিয়ে যাবার প্রবণতা দেখা দিচ্ছে। তবে দু-একদিনের মধ্যেই বৃষ্টি শুরু হলে এই সমস্যা কেটে যাবে। তবে যদি বৃষ্টি না হয় সেক্ষেত্রে খরা পরিস্থিতিও সৃষ্টি হতে পারে। আর তাই চাষীভাইদের ফসল বীমা করানোর ওপর তাঁরা জোড় দিচ্ছেন। জগন্নাথবাবু জানিয়েছে্ন, অন্যান্য বছরের জুলাই মাসের মাঝামাঝি সময় যেখানে ৩৯ হাজার হেক্টর এলাকায় বীজতলার কাজ হয়ে যায় এবারে গোটা জেলায় সেটা হয়েছে ৩৩-৩৪ হাজার হেক্টর এলাকায়। অন‌্যান্য বছরে যেখানে ২০ হাজার হেক্টর এলাকায় চাষ শুরু হয়ে যায় জলের অভাবে সেখানে এখনও পর্যন্ত হয়েছে (জুলাই মাসের মাঝামাঝি) প্রায় ৮ হাজার হেক্টর এলাকায়। উল্লেখ্য, গোটা পূর্ব বর্ধমান জেলায় মোট ধান চাষের এলাকা রয়েছে ৩ লক্ষ ৮০ হাজার হেক্টর। এর মধ্যে গড়ে চাষ হয় ৩ লক্ষ ৬০ হাজার হেক্টর। তার মধ্যে ডিভিসি সেচসেবিত এলাকা রয়েছে ২ লক্ষ ৫ হাজার হেক্টর। এছাড়াও ১ লক্ষ ৩৫ হাজার হেক্টর এলাকা চাষ ডিপ টিউবওয়েল, নদী থেকে জল উত্তোলিতের মাধ্যমে কিংবা অন্য কোনোভাবে চাষ হয়। তবে তিনি জানিয়েছেন, আগষ্ট মাসের মাঝামাঝি সময় পর্যন্ত খরিফ চাষের স্বাভাবিক সময় রয়েছে। জগন্নাথবাবু জানিয়েছেন, পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে যেহেতু জলসংকটের একটা প্রভাব রয়েছে তাই চাষীদের কম জলে কিভাবে চাষ করা যায় তাতে আকৃষ্ট করার চেষ্টা চলছে। সেক্ষেত্রে জিলোটিন পদ্ধতি, শী পদ্ধতি, ড্রাম সিডার পদ্ধতি প্রভৃতি ব্যবহারের ওপর জোড় দেওয়া হয়েছে।

Exit mobile version