E Purba Bardhaman

ভিনধর্মের যুবকের সঙ্গে প্রেমের সম্পর্ক মেনে নিতে না পেরে তরুণীরকে শ্বাসরোধ করে খুন করল বাবা ও দাদা

Honour killing - Father and Brother arrested on charges of murder

গণেন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায়, জামালপুর (পূর্ব বর্ধমান) :-  ভিনধর্মের যুবকের সঙ্গে ভালোবাসার সম্পর্ক মেনে নেয়নি তরুণীর পরিবার। জামালপুরে জাতীয় সড়কের পাশে নিয়ে এসে গলায় নাইলনের দড়ি দিয়ে ফাঁস লাগিয়ে তরুণীকে খুন করে তার বাবা ও দাদা। মেহেন্দি দিয়ে তরুণীর থাইয়ে লেখা চারটি ফোন নম্বর ও এক যুবকের নামের সূত্র ধরে অনার কিলিংয়ের ঘটনার কিনারা করল জামালপুর থানার পুলিস। কলকাতার তিলজলা থানার বেনিয়াপুকুর থেকে পুলিস বাবা ও দাদাকে গ্রেপ্তার করেছে। ধৃতদের নাম মহম্মদ মুস্তাফা ওরফে মুস্তাক ও মহম্মদ জাহিদ। জাহিদ একটি অফিসে গাড়ি চালায়। মুস্তাফা ভাড়া গাড়ি চালায়। সোমবার সকালে পুলিস তাদের কলকাতা থেকে গ্রেপ্তার করে নিয়ে আসে। তরুণীকে খুনের কথা তাঁর বাবা ও দাদা কবুল করেছে বলে পুলিসের দাবি। মঙ্গলবার ধৃতদের বর্ধমান আদালতে পেশ করা হয়। বিচার বিভাগীয় হেপাজতে পাঠিয়ে ১৫ সেপ্টেম্বর ধৃতদের ফের আদালতে পেশের নির্দেশ দেন সিজেএম রতন কুমার গুপ্তা। ঘটনার আগে নবগ্রাম ট্রাক পার্কিংয়ের শেডে তরুণী এবং তার বাবা ও দাদাকে গল্প করতে দেখেন জামালপুর থানার দুই সিভিক ভলান্টিয়ার। ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী হিসাবে তাদের দিয়ে ধৃতদের শনাক্ত করার জন্য টিআই প্যারেডের আবেদন জানান তদন্তকারী অফিসার নিবেদন শিকদার। সিজেএম রতন কুমার গুপ্তা পঞ্চম জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেটকে টিআইপ্যারেড করানোর জন্য নির্দেশ দেন।
পুলিস সূত্রে জানা গিয়েছে, গত ৩১ আগস্ট সকালে জামালপুর থানার নবগ্রামের ময়না এলাকার একটি ধাবার মালিক মনোজ যাদব জাতীয় সড়কের পাশে নয়ানজুলিতে এক তরুণীর মৃতদেহ পড়ে থাকতে দেখেন। তিনি পুলিসে ঘটনার কথা জানিয়ে অভিযোগ দায়ের করেন। খবর পেয়ে পুলিস দেহটি উদ্ধার করে ময়না তদন্তে পাঠায়। মৃতার শরীরের কয়েক জায়গায় ক্ষতচিহ্ন ছিল। মাথায় ভারি কিছু দিয়ে আঘাতের চিহ্ন ছিল। গলায় নীল নাইলনের দড়ি পেঁচানো ছিল। ওড়নাও জড়ানো ছিল গলায়। তা থেকে পুলিসের অনুমান, নাইলনের দড়ি দিয়ে গলায় ফাঁস লাগিয়ে তাকে খুন করা হয়েছে। মৃত্যু নিশ্চিত করতে ভারি কিছু দিয়ে মাথায় আঘাত করা হয়েছে। মৃতদেহের সুরতহাল করার সময় তরুণীর থাইয়ে ৪টি মোবাইল নম্বর মেহেন্দি দিয়ে লেখা ছিল। তার পাশেই লেখা ছিল এক যুবকের নাম। যদিও তরুণীর পরিচয় তখনও জানতে পারেনি পুলিস।
তদন্তে নেমে পুলিস মোবাইল নম্বরের সূত্র ধরে খোঁজখবর শুরু করে। সেটি মহারাষ্ট্রের নাগপুরের এক যুবকের বলে জানতে পারে পুলিস। খুনের কিনারার জন্য একটি বিশেষ তদন্তকারী দল গড়ে দেন পুলিস সুপার। দলটি নাগপুরে যায়। স্থানীয় পুলিসের সাহায্য নিয়ে ওই যুবকের হদিশ পায় পুলিস। মোবাইল নম্বরগুলি তারই বলে নিশ্চিত হয় পুলিস। মৃতার ছবি যুবককে দেখায় পুলিস। সেটি তার প্রতিবেশী বিহারের মুজফফরপুরের চাকএলাহাদাদের জাহানা খাতুন (১৯)-এর বলে শনাক্ত করেন যুবক। এরপর তাকে নিয়ে বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজের মর্গে আসে পুলিস। সেখানেও মৃতদেহটি জাহানার বলে শনাক্ত করেন ওই যুবক। তার সঙ্গে জাহানার ভাব-ভালোবাসার সম্পর্ক ছিল বলে যুবক পুলিসকে জানায়। যদিও সেই সম্পর্ক জাহানার পরিবার মেনে নেয়নি। বাড়ির অমতে যুবকের সঙ্গে ভাব-ভালোবাসার সম্পর্ক চালিয়ে যাওয়ার কারণে জাহানাকে খুন করা হয়েছে বলে নিশ্চিত হয় পুলিস। ওই যুবক নাগপুরে একটি জরির কারখানায় কাজ করেন। তার সঙ্গে কয়েকমাস আগে জাহানা নাগপুরে পালিয়ে এসেছিলেন বলে জানতে পেরেছে পুলিস। কিন্তু, চাপে জাহানাকে মুজফফরপুরের পুলিসের হাতে যুবক ফিরিয়ে দিয়ে আসেন। ঘটনার কিছুদিন আগেও জাহানা যুবকের মুজফফরপুরের বাড়িতে চলে যান। কিন্তু, পড়শি ও আত্মীয়দের চাপে তাঁকে সেখান থেকে ফিরিয়ে আনে জাহানার পরিবারের লোকজন। তাকে বাড়িতে শিকল দিয়ে বেঁধে পর্যন্ত রাখা হয় স্থানীয় মাতব্বরদের পরামর্শে। পরিবারের তরফে জাহানার বিয়ের ঠিকও হয়। আগামী ৭ অক্টোবর তার বিয়ের দিন স্থির হয়। কিন্তু, বিয়েতে রাজি হননি জাহানা। মেহেন্দি অনুষ্ঠানের সময় তিনি যুবকের সঙ্গে ফোনে কথা বলেন। বিষয়টি জানাজানি হতেই তার বিয়ে ভেঙে যায়। এরপর দাদা ও বাবা তাঁকে নিয়ে কলকাতায় চলে আসে। কলকাতায় নিয়ে এসে অন্যত্র বিয়ের জন্য তাকে চাপ দেওয়া হয়। যদিও তাতে কোনওভাবে রাজি হননি জাহানা। এদিকে, মুজফফরপুরে জাহানার পরিবারের লোকজনের উপর চাপ সৃষ্টি হচ্ছিল। এমনকি পরিবারকে একঘরে করে দেওয়ারও হুমকি দেওয়া হয়। জাহানা কোনওভাবেই যুবককে ছাড়তে রাজি না হওয়ায় তাকে মেরে ফেলার পরিকল্পনা করে বাবা ও দাদা। ঘটনার দিন রাতে গাড়িতে চাপিয়ে তাকে জামালপুরের দিকে আনা হয়। গাড়ি চালাচ্ছিল জাহিদ। পিছনে বাবার সঙ্গে বসেছিলেন জাহানা। তাকে গলায় দড়ির ফাঁস লাগিয়ে খুন করা হয়। এরপর প্রমাণ লোপাটের জন্য দেহটি নয়ানজুলিতে ফেলে দেওয়া হয়।

Exit mobile version