E Purba Bardhaman

লড়াইটা যদি ন্যায় আর অন্যায়ের হয়, তাহলে কংগ্রেস একদিকে থাকবে, আর তৃণমূল আরেক দিকে থাকবে – সেলিম

If the fight is between justice and injustice, then the Congress will be on one side, and the Trinamool will be on the other - Salim

মেমারী (পূর্ব বর্ধমান) :- নির্বাচন আসছে। রাজ্যবাসীকে বলব, মুখ্য-মিথ্যাবাদী থেকে সাবধান – বৃহস্পতিবার মেমারীর নতুন বাসস্ট‌্যাণ্ডে আয়োজিত প্রয়াত সিপিআই(এম) নেত্রী মহারানি কোঙারের স্মরণসভায় বক্তব্য রাখতে এসে একথা বলে গেলেন সিপিআইএমের রাজ্য সম্পাদক তথা পলিটব্যুরো সদস্য মহম্মদ সেলিম। এদিন রাহুল গান্ধীর নেতৃত্বে ন্যায় যাত্রায় অধীরের বিরুদ্ধে শ্লোগান পোস্টার প্রসঙ্গে সাংবাদিকদের সেলিম বলেন, ইনসাফ চাও, হক চাও, ন্যায় চাও, ন্যায় প্রতিষ্ঠার দাবি করো, অন্যায়ের প্রতিবাদ করো, সঙ্গে সঙ্গে যাঁরা অন্যায়কারী আছে, তাঁরা হামলা করবে, মিথ্যে মামলা করবে, বিদ্রুপ করবেন। আর যাঁরা ন্যায়ের পক্ষের, হকের পক্ষে তাঁরা রাস্তায় নামবেন। তৃণমূলের যা কাজ সেটাই করছে, আরএসএসের ইশারায় মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় নাচছেন। অভিষেককে বাঁচানোর জন্যে। হাইকোর্ট থেকে কোচবিহার– এটা গোটা দেশের মানুষ বুঝুক। কংগ্রেসও বুঝুক, তৃণমূলের ভূমিকা কী? আমরা (বাংলা) তো গত ১২ বছর ধরে ভুক্তভোগী। এখন গোটা দেশ দেখছে। কার স্বার্থে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় রাজনীতি করেন। সেলিম এদিন জানান, “মিছিল করার, আন্দোলন করার, অধিকার যাত্রা করার সবার অধিকার আছে, এটাই গণতন্ত্র। কংগ্রেস জানিয়েছে কী জানায়নি, এটা তো কোনও অজুহাত হতে পারে না। ন্যায় যাত্রা হচ্ছে, ভারত যাত্রা হচ্ছে। তার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ হচ্ছে–তার প্রতিবাদে পোস্টার লিখছে তৃণমূল। টিটকারি দিচ্ছে, হামলা করছে, বাধা দিচ্ছে, কেন? এটা অসমের মুখ্যমন্ত্রী হিমন্ত বিশ্বশর্মাও করেছেন। কংগ্রেস নেতা বিজেপিতে গিয়েছে অসমে, তাঁরা করেছে। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় কংগ্রেস ছেড়ে তৃণমূল তৈরি করে বিজেপির কোলে বসছেন, তাঁরা করছেন। বাকিরা নয়। আসন্ন লোকসভা নির্বাচনে তৃণমূলের একলা চলার ঘোষণা সম্পর্কে এদিন তিনি বলেন, “রাজ্যে যাঁরা ন্যায়ের বিরুদ্ধে, যাঁরা অন্যায় করছেন তাঁদের সঙ্গে জোট হবে? এখানে যাঁরা ইনসাফ চাইছে, হক চাইছে, অধিকার চাইছে, ধর্মনিরপেক্ষতা চাইছে, ন্যায় চাইছে, গণতন্ত্র চাইছে তাঁরা একসঙ্গে হবে। আর যাঁরা বিজেপির দালাল, সাম্প্রদায়িক, আরএসএসের দালাল, যাঁরা লুট করছে তাঁরা তফাতে থাকবে।” “লড়াইটা যদি ন্যায় আর অন্যায়ের হয়, তাহলে কংগ্রেস একদিকে থাকবে, আর তৃণমূল আরেক দিকে থাকবে।” ভারত ন্যায় যাত্রা রাজ্যে তৃণমূল করতে দেবে না বলছে। আমরা প্রতিবাদ করছি। কে কোথায় আন্দোলন করবে এটা মমতা মোদী ঠিক করে দেবেন না। রাজীব গান্ধী যুগ যুগ জিও বললেও তার ছেলে যখন রাজ্যে আসছেন তখন পুলিশকে বলছে ওকে ধর। মূল্যবোধের অভাব তৈরি হয়েছে। দেশকে পিছনে নিয়ে যাওয়ার চক্রান্ত হচ্ছে। সেলিম এদিন বলেন, ক্ষমতাকে ব্যবহার করে প্রধানমন্ত্রী বলছেন আমাকে দেখো আর রাজ্যে মুখ্যমন্ত্রী বলছেন আমাকে দেখো। দেবালয় ও ধর্মগ্রন্থ থেকে ধর্মকে রাস্তায় নামিয়ে আনা হচ্ছে। এটা ধর্ম নয় এটা মানুষের মস্তিষ্ককে হাইজ্যাক করা হচ্ছে। বুধবার বর্ধমানের গোদার মাঠে মুখ্যমন্ত্রী দেওচা পাঁচামী প্রকল্পে চাকরির ঘোষণা করে যান। এদিন সেই প্রসঙ্গে সেলিম বলেন, দেওচা পাঁচামী থেকে ২২ হাজার আদিবাসীকে সরিয়ে বলছে কয়লা উত্তোলন হবে। আসলে পুঁজিপতিদের হাতে তুলে দেওয়ার চক্রান্ত হচ্ছে। তিনি বলেন, তৃণমূলের নেতারা বাড়ি কেনে টাকা লুকানোর জন্য। শাহজাহানের বাড়িতে ১৫ দিন পর ইডি ঢাক ঢোল পিটিয়ে ক্যামেরা নিয়ে যাচ্ছে। চোর কি ১৫ দিন ধরে টাকা লুকিয়ে রাখবে? সেলিম এদিন বলেন, বর্তমানে দেখবেন বিজেপি নেতারা আর অভিষেকের নাম বলছে না। ইডি ও সিবিআইও অভিষেক, তাঁর মা ও মাসিকে ডাকছে না। আসলে হাতির দুটো দাঁত। একটা দেখানো ও একটা ব্যবহারের। এদিন সেলিম বলেন, তদন্তে ভয় কাদের। যারা অন্যায় করেছে তাঁদের। এবং সেখানে অভিষেকের নাম চলে এলো। শুধু অভিষেক নয় বিজেপির নামও আসবে। কারণ এইভাবে বিজেপি দেশ চালাচ্ছে। আদালতকে পর্যন্ত প্রভাবিত করছে। আর আদালত প্রভাবিত হচ্ছে। সেখান দাঁড়িয়ে কীভাবে অভিষেককে বাঁচানোর জন্য বিজেপি রাস্তায় নেমেছে। কীভাবে আদালত কক্ষের মধ্যে ঢুকে পড়ছে। এই উদাহরণটাই যথেষ্ট। তৃণমূলের ভবিষ্যৎ নেতা কে সেটা আদালতের দেখার বিষয়। আইন তো সবার জন্য সমান। কেন ১ ঘণ্টার মধ্যে সিঙ্গেল বেঞ্চের রায়কে তদন্ত আটকানোর জন্য ডিভিশন বেঞ্চ। আমরা দেখছি সব কটা দুর্নীতির এক বেঞ্চ থেকে আর এক বেঞ্চ, সেখান থেকে সুপ্রিম কোর্ট। আবার সুপ্রিম কোর্ট ফেরাচ্ছে। সময় নষ্ট করা হচ্ছে, আর সেই সময়ে সমস্ত নথিপত্র লোপাটের চেষ্টা করা হচ্ছে। এইভাবে নারদা, চিটফান্ড কাণ্ডকে ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা করা হয়েছে। ছাত্রভর্তি থেকে নিয়োগ দুর্নীতি, কয়লা পাচার কান্ড-সহ অন্যান্য দুর্নীতির মামলাকেও এইভাবে ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা করা হচ্ছে। গণতন্ত্র কতটা বিপজ্জনক হবে, সাধারণ মানুষের স্বার্থ কতটা হানি হবে – যেখানে প্রতাপান্বিত প্রভাবশালী ন্যায়ালয়কেও প্রভাবিত করছে রাজনীতির স্বার্থে। দুর্নীতি দমনের বদলে দুর্নীতিকে পাহারা দেওয়ার জন্য।

Exit mobile version