মেমারী (পূর্ব বর্ধমান) :- ডাক্তারির প্রবেশিকা পরীক্ষা নিয়ে দেশ জুড়ে তোলপাড়ের মাঝেই পূর্ব বর্ধমানের মেমারী পুরসভা এলাকায় কর্মরত এক মহিলা চিকিৎসককে মোটা টাকার বিনিময়ে কারচুপি করে নির্দিষ্ট বিভাগে নম্বর বাড়িয়ে স্নাতকোত্তরে ভর্তির পরীক্ষায় (নিট-পিজি) উত্তীর্ণ করে দেওয়ার প্রস্তাব দেওয়ার অভিযোগ উঠল। আর এই ঘটনাকে কেন্দ্র রীতিমত চাঞ্চল্য ছড়িয়েছে। ডাক্তারীর প্রবেশিকা পরীক্ষা নিয়ে তদন্ত চালাচ্ছে সিবিআই। ডাক্তারি-পড়ুয়ারাও এই ঘটনায় গ্রেফতার হয়েছে। তার মধ্যেই ডাক্তারের স্নাতকোত্তর পরীক্ষায় (NEET-PG Exam) বসতে চলা ওই মহিলা ডাক্তারকে মোটা টাকার বিনিময়ে কারচুপি করে নির্দিষ্ট বিভাগে নম্বর বাড়িয়ে উত্তীর্ণ করে দেওয়ার প্রস্তাব দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। এব্যাপারে মেমারী থানায় অভিযোগ করা হয়েছে। সেই অভিযোগের ভিত্তিতে চিকিৎসকদের সংগঠন ‘অ্যাসোসিয়েশন অফ হেলথ্ সার্ভিস ডক্টরস্’ রাজ্য পুলিশের ডিজির কাছে লিখিত অভিযোগ জানিয়েছে। তার প্রতিলিপি দেওয়া হয়েছে স্বরাস্ট্র দফতর, স্বাস্থ্য দফতর থেকে পূর্ব বর্ধমানের জেলাশাসক ও পুলিশ সুপারকেও। মেমারির বাসিন্দা ওই চিকিৎসকের স্নাতকোত্তর পরীক্ষা (নিট-পিজি) থাকায় তিনি সংবাদমাধ্যমের সামনে মুখ খুলতে চাননি। তাঁর বাবা জানিয়েছেন, “মেয়ের কাছে একটা অজানা নম্বর থেকে ফোন এসেছিল। তখন মেয়েকে প্রস্তাব দেওয়া হয়, আপনি কোন বিভাগ নিয়ে স্নাতকোত্তর করতে চান, সেই মতো আপনার র্যাঙ্ক রাখা হবে। এরপরই বিভিন্ন বিভাগের জন্য ৬০-৯০ লাখ পর্যন্ত টাকা দিতে হবে।” সেই ফোনে জালিয়াতরা প্রস্তাব দিয়েছে, মেডিসিনের জন্যে ৯০ লক্ষ, শল্য বিভাগের জন্য ৯০ লক্ষ, প্রসূতি ও স্ত্রী রোগ বিভাগে ৬০ লক্ষ টাকা দিতে হবে। এ ছাড়াও ত্বক, ইএনটি, রেডিওলজি বিভাগের জন্যে ৭০ লক্ষ টাকা দেওয়ার প্রস্তাব দিয়েছে জালিয়াতরা। তিনি জানিয়েছেন, গত ১৬ জুলাই রাত ৮ টা ৩৭ থেকে ৯ টা ৪৯ পর্যন্ত দু’বার ফোন করা হয়েছিল। কিন্তু সেই প্রস্তাবে সাড়া না দিয়ে তাঁর মেয়ে থানায় অভিযোগ দায়ের করেছেন। অভিযোগকারী চিকিৎসকের বাবার আরও দাবি, “কোন পদ্ধতিতে নম্বর বাড়িয়ে র্যাঙ্ক দেওয়া হবে, তা মেয়ে জানতে চেয়েছিল। তাঁকে বলা হয়, ‘২০০ নম্বরের মধ্যে ১০০ নম্বর আপনি লিখবেন। বাকি ১০০ নম্বরের দায়িত্ব আমাদের’। ২০০ প্রশ্নের মধ্যে ১০০ নম্বর ছেড়ে দিতে হবে। বাকি ১০০ প্রশ্নের মধ্যে নিশ্চিতগুলোর উত্তর দেবেন। স্ক্যানের ওখানেই আমাদের লোক থাকে। সেই মার্কস বানিয়ে দেবে। গ্যারান্টি। সমস্ত টাকা ব্যাংকের মাধ্যমে নেওয়া হবে। ক্যাশ নয়। টাকা রেজাল্টের পরে। ডকুমেন্ট পাঠানোর পরে আপনাকে বিস্তারিত জানানো হবে। প্রাথমিকভাবে বুকিং-এর জন্য ৩ লক্ষ টাকা দিতে হবে। কাটঅফ বানিয়ে দেওয়া হবে।” স্বাভাবিকভাবেই আমার মেয়ে তাতে সাড়া দেয়নি। আমরা চাই, এই দুর্নীতি বন্ধ হোক।” ওই চিকিৎসক সংগঠন সূত্রে জানা গেছে, পূর্ব বর্ধমান জেলায় ৪ জনের কাছে এমন জালিয়াতি ফোন গিয়েছিল। বাকি তিনজন অভিযোগ জানাতে নিমরাজি ছিল। ওই সংগঠনের রাজ্যের যুগ্ম সম্পাদক সুবর্ণ গোস্বামী বলেন, “দুর্নীতি বাসা বেধেছে। এই জালিয়াতরা এতটাই বেপরোয়া যে, আগাম নয়, র্যাঙ্ক দেখার পরে টাকা দেওয়ার জন্যে প্রস্তাব দিয়েছে। আমরা চাই, শিকড়ে গিয়ে দুর্নীতির তদন্ত হোক। পুলিশ যথোপযুক্ত ব্যবস্থা নিক।” এদিকে, এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে গোটা জেলা জুড়ে ব্যাপক শোরগোল পড়েছে।