বর্ধমান (পূর্ব বর্ধমান) :- বর্ধমান শহরের জনবহুল উত্তরা বাসস্ট্যাণ্ড কর্তৃপক্ষের একটি বিজ্ঞপ্তিকে ঘিরে তোলপাড় শুরু হয়ে গেল শহর জুড়ে। পরিস্থিতি মোকাবিলায় কড়া পদক্ষেপ নিতে চলেছেন পূর্ব বর্ধমানের জেলাশাসক বিজয় ভারতী। গত ২৬ অগস্ট নবাবহাটের উত্তরা বাসস্ট্যাণ্ড কর্তৃপক্ষের পক্ষথেকে বাসস্ট্যাণ্ড এলাকা জুড়ে একটি বিজ্ঞপ্তি দেওয়া হয়। যেখানে বলা হয় – “২ টাকা ও ১ টাকা-র কয়েন ব্যাঙ্ক বা বাজারে না চলার কারণে আগামী ১ সেপ্টেম্বর ২০১৯ থেকে টয়লেট চার্জ ৫ টাকা করা হল।” আর এই বিশেষ বিজ্ঞপ্তিকে ঘিরেই শুরু হয়েছে জেলা জুড়ে তোলপাড়। গোটা বিষয়টি জানতে পেরে জেলাশাসক বিজয় ভারতী ওই বিজ্ঞপ্তি তুলে ফেলার নির্দেশ দিয়েছেন। একইসঙ্গে কিভাবে এই বিজ্ঞপ্তি দেওয়া হল তার কৈফিয়ত তলব করেছেন বলে জানা গেছে। উল্লেখ্য, সাম্প্রতিককালে রিজার্ভ ব্যাঙ্কের চালু করা ১ টাকার ছোট কয়েন নিয়েই শুরু হয় গোলমাল। প্রায় সিংহভাগ মানুষই এই ছোট ১ টাকার কয়েন নিতে অস্বীকার করেন। সাধারণ মানুষ থেকে ব্যবসাদাররাও সম্পূর্ণভাবে এই কয়েন নিতে অস্বীকার করছেন। এব্যাপারে ব্যবসাদারদের দাবী, তাঁরা ছোট কয়েন নিলেও ক্রেতারা তাঁদের কাছ থেকে ছোট করেন নিচ্ছেন না। এরফলে তাঁদের কাছে এই ছোট কয়েনের পাহাড় জমতে শুরু করেছে। বাধ্য হয়েই তাঁরাও ছোট কয়েন নেওয়া বন্ধ করে দিয়েছেন। শুধু তাই নয়, ব্যবসাদারদের দাবী, এই ছোট কয়েন নিয়ে তাঁরা যখন ব্যাঙ্কে যাচ্ছেন সেই সময় ব্যাঙ্ক কর্তৃপক্ষও তা নিতে অস্বীকার করছেন। ফলে তাঁরা অসহায় অবস্থায় পড়েছেন। কমবেশী অধিকাংশ ব্যবসাদারদের কাছেই ছোট কয়েনের পাহাড় জমেছে। উল্লেখ্য, মোদী সরকারের আমলে নোট বন্দির সময় কয়েন নিয়েও চরম সমস্যায় পড়েছিলেন সাধারণ মানুষ। সেই নোটবন্দির সময়কালেই বাজারে ছাড়া হয় ১ টাকার ছোট কয়েনকে। কিন্তু কিছুদিন পর থেকেই তা বাজারে ‘অচল পয়সা’ করে তোলা হয়েছে। এমনকি সম্প্রতি এই ছোট কয়েন নেওয়াকে ঘিরে দোকানদার-খরিদ্দারদের মধ্যে বচসাও হয়েছে বেশ কিছু। যেহেতু রিজার্ভ ব্যাঙ্ক কর্তৃপক্ষ এখনও এই ছোট ১ টাকার কয়েনকে অচল হিসাবে ঘোষণা করেননি তাই কেন তা নেওয়া হচ্ছে না প্রশ্ন তুলেছেন সাধারণ মানুষ। এদিকে, গত ২৬ আগষ্ট উত্তরা বাসস্ট্যাণ্ড কর্তৃপক্ষ এই বিজ্ঞপ্তি দেওয়ায় যাত্রীরাও চরম ক্ষুব্ধ হয়ে উঠছেন। যেখানে টয়লেট করার জন্য ২ টাকায় মিটত কেন তাঁরা আরও ৩ টাকা বেশি দিয়ে ৫ টাকা দেবেন তা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন। এদিকে, এব্যাপারে জেলাশাসক জানিয়েছেন, বিষয়টি তাঁর নজরে আসার পরই উত্তরা বাসস্ট্যাণ্ড কর্তৃপক্ষকে ওই নোটিশ বাতিল করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি কেন এই ধরণের নোটিশ দেওয়া হয়েছে তার কারণও জানতে চাওয়া হয়েছে। অপরদিকে, ব্যাঙ্ক কর্তৃপক্ষ কেন এই ছোট কয়েন জমা নিচ্ছেন না তা জানতে আগামী ৯ সেপ্টেম্বর জেলার সমস্ত ব্যাঙ্ক প্রতিনিধিদের নিয়ে বৈঠক ডেকেছেন জেলাশাসক বিজয় ভারতী। বর্ধমান বিডিএ হলে সেই বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে। জেলাশাসক জানিয়েছেন, এটা সম্পূর্ণ অন্যায় হচ্ছে। ছোট কয়েন অবৈধ বা অচল নয়। তা সকলকেই নিতে হবে। যাঁরা নেবেন না তাঁদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এব্যাপারে লিখিত কোনো অভিযোগ পেলেই দ্রুত ব্যবস্থা করা হবে। তিনি জানিয়েছেন, ইতিমধ্যেই তিনি এব্যাপারে রিজার্ভ ব্যাঙ্ক কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথাও বলেছেন।