গণেন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায়, বর্ধমান (পূর্ব বর্ধমান) :- বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়ের আমানত আত্মসাতের ঘটনায় নয়া তথ্য সামনে এল। ঘটনায় ধৃত সুব্রত দাস গ্রেপ্তার হওয়ার আগে যাদবপুর থানা-সহ বিভিন্ন জায়গায় বিশ্ববিদ্যালয়ের এক আধিকারিক ও কর্মীর বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করেন। তাতে সে জানায়, টেন্ডার পাইয়ে দেওয়ার আশ্বাস দিয়ে তার কাছ থেকে ১২ লক্ষ টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের এক আধিকারিক ও অপর এক কর্মী। ওই কর্মী নিজেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের গুরুত্বপূর্ণ আধিকারিকের পিএ বলে পরিচয় দেয়। যদিও সে টেন্ডার পায়নি। তার টাকাও ফেরত দেওয়া হয়নি। বুধবার তার আইনজীবী অতনু সরকার বিভিন্ন থানায় ও পুলিসের উপর মহলে পাঠানো সেই অভিযোগের কপি বর্ধমানের সিজেএম আদালতে জমা দিয়েছেন। আদালত অভিযোগের কপি তদন্তকারী অফিসারের কাছে পাঠানোর জন্য নির্দেশ দিয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের কয়েকজন আধিকারিকের সঙ্গে সুব্রতর যে যোগাযোগ ছিল তা এই ঘটনায় সামনে এসেছে। জামিনের আবেদনের শুনানিতে জেলা জজের পর্যবেক্ষণে ঘটনায় বিশ্ববিদ্যালয়ের কয়েকজন আধিকারিকের যোগ থাকার সম্ভাবনার কথা সামনে আসে। সুব্রতর জমা করা নথি সেই সম্ভাবনাকে আরও জোরালো করল বলে মনে করছে আইনজীবী মহল। এদিকে, দ্বিতীয় দফার ৪ দিনের পুলিসি হেফাজতের মেয়াদ শেষ হওয়ার পর এদিন সুব্রতকে ফের সিজেএম আদালতে পেশ করা হয়। তার আইনজীবী অভিযোগের কপি জমা দিয়ে বলেন, ঘটনায় অনেক রাঘববোয়াল জড়িত রয়েছে। তাদের বাঁচাতে সুব্রতকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। যদিও সরকারি আইনজীবী নারদ কুমার ভূইঞা জামিনের বিরোধিতা করেন। দু’পক্ষের সওয়াল শুনে ধৃতকে ১০ এপ্রিল পর্যন্ত বিচার বিভাগীয় হেফাজতে পাঠানোর নির্দেশ দেন ভারপ্রাপ্ত সিজেএম।
আদালত সূত্রে জানা গিয়েছে, বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়ের স্থায়ী আমানত প্রকল্পে জমা রাখা ১ কোটি ৯৩ লক্ষাধিক টাকা হাতিয়ে নেওয়া হয়। সেই ঘটনায় বিশ্ববিদ্যালয়ের অবসরপ্রাপ্ত কর্মী শেখ এনামূল হককে গ্রেপ্তার করা হয়। বর্তমানে সে জামিনে মুক্ত রয়েছে। পরে পুলিস সুব্রতকে গ্রেপ্তার করে। তাকে দু’দফায় ১৪ দিন হেফাজতে নেয় পুলিস। দ্বিতীয় দফায় ৪ দিনের হেফাজতের মধ্যেই ঘটনার তদন্তভার সিআইডির হাতে তুলে দেওয়া হয়। সিআইডি হেফাজতে নিয়ে সুব্রতকে টানা জিজ্ঞাসাবাদ করে। তাকে নিয়ে খণ্ডঘোষ থানা এলাকার অপর এক অভিযুক্তের বাড়িতে হানা দেন সিআইডির গোয়েন্দারা। যদিও অভিযুক্তের হদিশ পায়নি সিআইডি। সুব্রতকে নিয়ে সিআইডি তার নদীয়ার কল্যাণীর ভাড়াবাড়িতে যায়। সেখান থেকে বেশকিছু নথিপত্র বাজেয়াপ্ত করেছে সিআইডি। তবে, হাতিয়ে নেওয়া টাকা এখনও উদ্ধার হয়নি। সুব্রতর ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট একটি প্রতারণার মামলায় আগেই সিজ করেছে গুজরাট পুলিস। হাতিয়ে নেওয়া টাকা কোথায় পাঠানো হয়েছে তা সুব্রতকে জিজ্ঞাসাবাদ করে জানার চেষ্টা করছেন সিআইডির গোয়েন্দারা।