বর্ধমান (পূর্ব বর্ধমান) :- বৃহস্পতিবার বর্ধমান হোমিওপ্যাথিক মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালে থ্যালাসেমিয়া রোগীদের জন্য রক্ত গ্রহণ কেন্দ্র বর্ধমান থ্যালাসেমিয়া অ্যাসিস্টেনস (বার্তা)-এর আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করা হল। আগামী ১ আগস্ট থেকে এই রক্ত গ্রহণ পরিষেবা শুরু হবে। প্রতিমাসে ২ দিন হবে চলবে এই পরিষেবা। প্রাথমিকভাবে ৪০ টা বেডের ব্যবস্থা করা হয়েছে। ‘বর্ধমান হোমিওপ্যাথিক মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল’, ‘ভরুকা রিসার্চ সেন্টার ফর হেমাটোলজি এন্ড ব্লাড ট্রান্সফিউশন’ এবং ‘হলুদ পাখী’ স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার যৌথ উদ্যোগে এই ‘বার্তা’ কর্মসূচি শুরু হল। উপস্থিত ছিলেন পূর্ব বর্ধমান জেলা মুখ্য স্বাস্থ্যাধিকারিক ডা. জয়রাম হেমব্রম, বর্ধমান হোমিওপ্যাথিক মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের অধ্যক্ষ ডাক্তার সুস্মিতা চ্যাটার্জী, ভরুকা রিসার্চ সেন্টার ফর হেমাটোলজি এন্ড ব্লাড ট্রান্সফিউশনের ডিরেক্টর তানিয়া দাস, হলুদ পাখির মেন্টর সংগীতশিল্পী ডাক্তার সিদ্ধার্থ শংকর রায় (সিধু), হলুদ পাখির প্রেসিডেন্ট বাসুদেব চ্যাটার্জী প্রমুখ। তানিয়া দাস জানিয়েছেন, তাঁদের কাছে এই রাজ্যের পাশাপাশি অন্য রাজ্য থেকেও রোগী আসেন। রোগীদের তথ্য থেকে তাঁরা দেখেছেন তাঁদের কাছে বর্ধমান, পূর্ব মেদিনীপুর থেকে বেশি রোগী যান। জেলা থেকে তাঁদের কাছে বা কলকাতায় গিয়ে রক্ত গ্রহণ করতে গেলে সময় এবং অর্থও বেশি খরচ হয়ে যায়। তাই তাঁরা জেলায় জেলায় এইভাবে কেন্দ্র খোলার কথা ভেবেছেন। সেক্ষেত্রে এই জেলাতেই প্রথম এই কেন্দ্র করার উদ্যোগ নিয়েছেন। তিনি জানিয়েছেন, রক্তটা বিনামূল্যে দেওয়ার পরিস্থিতি তৈরি থাকলে তাঁরা এই পরিষেবা রোগী প্রতি প্রতিবারে ১৫০০-১৭০০ টাকায় দিতে পারবেন। এটাই বাইরে বেসরকারি জায়গায় করাতে গেলে অনেক বেশি খরচ হবে। তানিয়া দাস জানিয়েছেন, ওয়েবসাইটে সার্চ করে যে তথ্য পাওয়া যাবে দেশে তার থেকে ৩-৪ গুন বেশি থ্যালাসেমিয়া আক্রান্তের সংখ্যা। থ্যালাসেমিয়া আক্রান্তদের সরকারিভাবে নথিভুক্ত করণের কোনও পদ্ধতি চালু না থাকায় প্রকৃত তথ্য পাওয়া যাবে না। তবে যেটা ধরা হয় ভারতে মোট জনসংখ্যার ৭ শতাংশ এবং পশ্চিমবঙ্গে ৯-১০ শতাংশ থ্যালাসেমিয়া আক্রান্ত। ভারতে জনসংখ্যা একটা বড় কারণ, তার সাথে গন-জনসচেতনতা। ক্লাস ৯ থেকে ১২ ক্লাস পর্যন্ত ছাত্রছাত্রীদের যদি থ্যালাসেমিয়া পরীক্ষা করা যায় খুবই ভালো হয়। রাজ্য সরকারকে এই প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। এটায় অনেক অর্থ প্রয়োজন। সরকার তাঁদের কিছুটা সহযোগিতা করলে তাঁরা এই কাজ করবেন। এবং তাঁরা এই কাজ পূর্ব বর্ধমান জেলা থেকেই শুরু করতে চান। এক্ষেত্রে ভবিষ্যতে ভালো ফল পাওয়া যাবে। তিনি জানিয়েছেন, থ্যালাসেমিয়া নিয়ে কাজ করা সংস্থাগুলো একই ছাতার তলায় এসে সকলের জন্য কাজ করতে হবে। তাহলেই এর মোকাবিলা করা যাবে। তিনি এদিন বলেন, রক্ত এখন পণ্য হয়ে গেছে। তাই এখন রক্তদান শিবিরের প্রতিযোগিতা চলছে। এটা ঠিক নয়। অনেক সময়ই এই রক্ত নষ্ট হচ্ছে। এই প্রতিযোগিতার রক্তদান শিবিরে দাতাদের টেনে আনতে উপহারের প্রলোভন দেখান হচ্ছে, দেওয়াও হচ্ছে। রক্তকে পণ্য করে তোলা হয়েছে। এই চিন্তাধারা পালটাতে হবে। এদিন প্রাক্তন মেডিকেল অফিসার ডা. তারক সরকার জানিয়েছেন, মাসে দু’দিন, ১৫ দিন অন্তর রোগীদের রক্ত দিতে হয়। ভরুকা রিসার্চ সেন্টার ফর হেমাটোলজি এন্ড ব্লাড ট্রান্সফিউশন অনেকে উন্নত মানের রক্ত দেয়। যাঁদের ১৫ দিন অন্তর রক্ত নিতে হতো তাঁদের ক্ষেত্রে দেখা গেছে ১ থেকে দেড় মাস পর্যন্ত এই সময় বেড়েছে। তাই তাঁরা যৌথ উদ্যোগে এই উদ্যোগ নিয়েছেন। এক্ষেত্রে খরচ, হয়রানি কমবে। সময়ও বাঁচবে। এখানে বর্তমান পরিকাঠামোয় ২০ জন মাসে দুবার করে অর্থাৎ মাসে ৪০ বার রক্ত দেওয়া যাবে।