E Purba Bardhaman

বর্ধমান-দুর্গাপুর আসনে বিজেপি এবং পূর্ব বর্ধমানের দুটি আসনে কংগ্রেসের মনোনয়ন দাখিল

বিপুন ভট্টাচার্য, বর্ধমান (পূর্ব বর্ধমান) :- বর্ধমান-দুর্গাপুর লোকসভা আসনের গলার কাঁটা কি শেষ পর্যন্ত দুর্গাপুর মহকুমার দুটি বিধানসভা আসনক্রমশই এই প্রশ্নকে ঘিরেই এখন ভোটার রাজনীতি উত্তপ্ত হয়ে উঠতে শুরু করেছে। যুযুধান ৪টি বড় দলের কাছে এটাই এখন সবথেকে চিন্তার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। এই লোকসভা আসনের মধ্যে রয়েছে পূর্ব বর্ধমান জেলার ৫টি বিধানসভা, যেগুলি প্রধানত কৃষি অঞ্চল হিসেবেই পরিচিত। কিন্তু এগুলির সাথেই রয়েছে পশ্চিম বর্ধমান জেলার ২টি বিধানসভা দুর্গাপুর শিল্পাঞ্চল সন্নিহিত। যেভাবে গত কয়েকবছরে একের পর এক একদা শিল্পনগরীর কলকারখানা বন্ধ হতে শুরু হয়েছে কিংবা রুগ্ন হতে শুরু করেছে তাতেই এই চিন্তাই এখন সমস্ত রাজনৈতিক দলের কাছেই গলার কাঁটা হয়ে উঠতে শুরু করেছে। আর তাকেই কার্যত হাতিয়ার করছেন প্রার্থীরা একে অপরের বিরুদ্ধে। ইতিমধ্যেই সিপিআই(এম) প্রার্থী আভাষ রায় চৌধুরী এই বিষয়টিকেই প্রচারের মুখ্য ইস্যু করে নিজের এলাকা চষে বেড়াচ্ছেন। অন্যদিকেতৃণমূল কংগ্রেসের প্রার্থী মমতাজ সংঘমিতা তাঁর কেন্দ্রের বেশিরভাগ প্রচারই কৃষি অঞ্চলে করলেও শিল্পাঞ্চল নিয়ে কার্যত অসহায় অবস্থায় পড়েছেন তিনিও। খোদ শিল্পাঞ্চলের দাপুটে তৃণমূল পন্থী শ্রমিক নেতারাও এই অশনি সংকেত দেখতে পাচ্ছেন। তাঁরাও কার্যত স্বীকার করছেনশিল্প কারখানা বন্ধ নিয়ে যে ধরণের আন্দো্লন হবার কথা ছিল তৃণমূলের তরফে, তা কিন্তু হয়নি। অনেক সময়ই তৃণমূল পন্থী শ্রমিক সংগঠনকে এব্যাপারে লাগাম পড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। ফলে লোকসভা নির্বাচনের মুখে শিল্পাঞ্চলের মানুষ কি করবেন এখন সেটাই বড় প্রশ্ন। শুধু সিপিএম তৃণমূলই নয়মঙ্গলবার মনোনয়ন পেশ করে বিজেপি প্রার্থীর দিকে শিল্প কারখানা বন্ধ নিয়েই প্রশ্ন ছুঁড়ে দিয়েছেন কংগ্রেস প্রার্থী। মঙ্গলবার শেষ হল পূর্ব বর্ধমান জেলায় আসন্ন লোকসভা নির্বাচনের মনোনয়ন পর্ব। শেষ দিনে পূর্ব বর্ধমান জেলার দুটি আসনে কংগ্রেসের ২জন এবং বিজেপির একজন মনোনয়ন পত্র জমা দিলেন। এদিন জেলাশাসক অনুরাগ শ্রীবাস্তবের কাছে মনোনয়ন পত্র জমা দেন বর্ধমান-দুর্গাপুর লোকসভা নির্বাচনের কংগ্রেস প্রার্থী রণজিত মুখার্জ্জী এবং বিজেপির প্রার্থী সুরেন্দ্রজিৎ সিং অহলুওয়ালিয়া। অন্যদিকেঅতিরিক্ত জেলাশাসক (সাধারণঅরিন্দম নিয়োগীর কাছে মনোনয়নপত্র জমা দেন বর্ধমান পূর্ব লোকসভা আসনের প্রার্থী সিদ্ধার্থ মজুমদার। আর এদিন মনোনয়ন পত্র জমা দিয়েই আত্মবিশ্বাসে ভরপুর হয়ে উঠলেন বর্ধমান-দুর্গাপুর লোকসভা আসনের কংগ্রেস প্রার্থী রণজিত মুখার্জ্জী। তিনি এদিন জানানযে ব্যক্তি দার্জিলিংএ নিজের কেন্দ্র থেকেই পালিয়ে বাঁচেন আর যাইহোক তাকে বর্ধমান-দুর্গাপুর লোকসভার মানুষ কখনই ভোট দেবেন না। কারণ তাঁরা ইতিমধ্যেই জেনে গেছেনদার্জিলিংএর মানুষ যখন বিপদে পড়ে তাঁদের সাংসদ তথা কেন্দ্র্রের মন্ত্রীর সাহায্য চেয়েছেন তখনই তিনি দার্জিলিং ছেড়ে পালিয়ে গেছেন। আর অনেক চেষ্টার পর তিনি সরাসরি পাহাড় থেকে সমতলে এসে নেমেছেন। নিজেকে বর্ধমানের ভূমিপুত্র বললে দাবী করলেও এতদিন তিনি বর্ধমানের জন্য কি করেছেনপ্রশ্ন ছুঁড়েছেন রণজিত মুখার্জ্জী। পাল্টা তিনি দাবী করেছেনবর্ধমান-দুর্গাপুর লোকসভার মানুষ যখন দেখবেন ৩০দিনই তাঁরা তাঁদের প্রার্থীকে পাশে পাচ্ছেন তখন তাঁকেই সাংসদ করে দিল্লীতে পাঠাবে ভোটাররা – এব্যাপারে পুরোপুরি তিনি নিশ্চিত। রণজিতবাবু জানিয়েছেনবিজেপি আমলেই একের পর এক কারখানা রুগ্ন হয়েছেবন্ধও হয়েছে। কোনো কোনো কারখানাকে গ্লোবাল টেণ্ডার করে বেসরকারীকরণের দিকে ঠেলেও দেওয়া হয়েছে। স্বাভাবিকভাবেই ১৯৫০ দশকে যে কংগ্রেসের হাত ধরে শিল্পনগরী দুর্গাপুর সেজে উঠেছিল আজ তারই প্রায়শ্চিত্ত করতে ছাইছেন শিল্পাঞ্চলের ভোটাররা। অন্যদিকেএদিন মনোনয়নপত্র পেশ করে বিজেপির প্রার্থী সুরেন্দ্রজিৎ সিং অহলুওয়ালিয়া জানালেনবিজেপির উন্নয়ন কোনো তুষ্টি করণের উন্নয়ন নয়। কোনো একটা এলাকার উন্নয়ন হল আর অন্য কোনো এলাকার উন্নয়ন হল না– এটা বিজেপির লক্ষ্য নয়। বিজেপির উন্নয়ন হল সূর্যের মত। সূর্যের আলো যেমন কোনো কিছুই বিচার করে না। সকলের জন্য সমান আলো ও তাপ দিয়ে যায় – পৃথিবীর কল্যাণের জন্যতেমনই বিজেপির উন্নয়নও তাই। বিজেপি বিশ্বাস করে সকলের সমানাধিকার এবং সকলের ন্যায় বিচারকে। তাই বিজেপির ইস্তাহারে সমস্ত এলাকারসমস্ত ধরণের মানুষের উন্নয়নের কথাই তুলে ধরা হয়েছে। আর ফের বিজেপি সরকার গড়ার পর এই ইস্তাহার অনুযায়ীই কাজ করে যাবে বলে জানালেন বিজেপির বর্ধমান-দুর্গাপুর লোকসভা আসনের বিজেপি প্রার্থী সুরেন্দ্রজিৎ সিং অহলুওয়ালিয়া। মঙ্গলবার পূর্ব বর্ধমানের জেলাশাসক অনুরাগ শ্রীবাস্তবের কাছে বর্ধমান দুর্গাপুর লোকসভা আসনের জন্য মনোনয়ন পেশ করেন তিনি। তিনি জানিয়েছেনদেরী করে বিজেপির প্রার্থীর নাম প্রকাশ করায় কোনো সমস্যাই হবে না। কারণ মানুষ এবার লোকসভায় কাকে চাইছেন তা ইতিমধ্যেই ঠিক করে নিয়েছেন। আর সেই নিরিখে জনগণের রায়ের ওপরই সব কিছু নির্ভর করছে। অন্যদিকেএদিন বর্ধমান পূর্ব লোকসভা আসনের কংগ্রেস প্রার্থী সিদ্ধার্থ মজুমদার জানিয়েছেনতাঁদের সাংগঠনিক কিছু দুর্বলতা রয়েছে কিন্তু তা সত্ত্বেও যেভাবে সাধারণ মানুষ এগিয়ে এসেছেন তাতে তিনি আপ্লুত। তিনি জানিয়েছেনতাঁর জেতার ক্ষেত্রে সব থেকে বড় অস্ত্র সিপিএম বা তৃণমূল কেউই এই কেন্দ্রে কোনো কাজই করেনি। 

Exit mobile version