এয়ার স্ট্রাইক নিয়ে তৃণমূল কংগ্রেসকে বিঁধলেন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী প্রকাশ জাভড়েকর
admin
বর্ধমান (পূর্ব বর্ধমান) :- সোমবার বর্ধমান টাউন হলে সমাজের বুদ্ধিজীবী শ্রেণীর মানুষদের নিয়ে মুখোমুখি একটি অনুষ্ঠানে কেন্দ্রীয় মানবসম্পদ উন্নয়ন দপ্তরের মন্ত্রী প্রকাশ জাভড়েকরের সঙ্গে বিজেপির রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ সহ রাজ্য নেতৃত্ব হাজির ছিলেন। দিলীপ ঘোষ এদিন তাঁর বিরুদ্ধে পুলিশের স্টিকার লাগানো গাড়ি ব্যবহার করার বিষয়ে যে অভিযোগ উঠেছে সে সম্পর্কে প্রতিক্রিয়া দিতে গিয়ে বলে গেলেন, তাঁর সঙ্গে সবসময় পুলিশ থাকে। অনেক সময়ই তাঁকে নিরাপত্তার জন্য গাড়ি বদলাতে হয়। তাই সেক্ষেত্রে পুলিশের গাড়ি ব্যবহার করা অন্যায় নয়। যদিও তিনি জানিয়েছেন, ওই গাড়িতে পুলিশের স্টিকার ছাড়াও বিজেপির পদ্মফুলেরও একটি স্টিকার ছিল। দিলীপবাবু জানিয়েছেন, কিছু অবার্চিন ব্যক্তি না জেনেই তাঁর বিরুদ্ধে মামলা করেছেন। উল্লেখ্য, রবিবার গোটা দেশ জুড়ে বিজেপির যুব মোর্চার উদ্যোগে সংকল্প যাত্রার বাইক মিছিল নিয়ে এবার সরাসরি বিজেপির রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করার ঘটনায় চাঞ্চল্য ছড়িয়েছে। সোমবার এই ঘটনায় দুর্গাপুরে দিলীপবাবুর বিরুদ্ধে পুলিশের গাড়ি ব্যবহার করার অভিযোগ উঠেছে। অন্যদিকে, গোটা দেশের সঙ্গে বাংলাতেও একসঙ্গে লোকসভা ভোট না করার জন্য মুকুল রায় যে নির্বাচন কমিশনের কাছে আবেদন করেছেন সে সম্পর্কে এদিন দিলীপ ঘোষ জানান, এব্যাপারে তিনি কিছু জানেন না বা শোনেননি। বরং তাঁরা সবসময়ের জন্য নির্বাচনের প্রস্তুত রয়েছেন। নির্বাচন কমিশন যদি বলে কাল ভোট হবে তাহলেও তাঁরা প্রস্তুত রয়েছেন। কারণ বিজেপির এই ভোটকেন্দ্রিক একটি কমিটি রয়েছে। তাঁরা সারা বছর ধরেই কাজ করেন। অপরদিকে, এদিন বক্তব্য রাখতে গিয়ে কেন্দ্রীয় মানব সম্পদ উন্নয়ন দপ্তরের মন্ত্রী প্রকাশ জাভড়েকর কড়া সমালোচনা করেছেন তৃণমূল নেত্রী তথা রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীর বিরুদ্ধে। তিনি বলেন, যেখানে এয়ার স্ট্রাইক নিয়ে গোটা দেশ গর্বিত, সেনাদের ভূয়সী প্রশংসা করছেন দেশবাসীরা,পাকিস্তানের এই জঙ্গী কার্যকলাপের বিরুদ্ধে প্রত্যাঘাতের আওয়াজ উঠেছে সেই সময় মমতা বন্দোপাধ্যায় এয়ার স্ট্রাইকের প্রমাণ চাইছেন। কেন্দ্রীয় মন্ত্রী এদিন জানিয়েছেন, ২৬/১১ হামলার পর দেশের সেনারা প্রত্যাঘাত চেয়েছিল। কিন্তু সেই সময় কংগ্রেস সরকার তার অনুমোদন দেয়নি। তিনি অভিযোগ করেন, কংগ্রেস আমলে দেশের সেনাদের দাবী মেনে অনেক সুযোগ সুবিধাই দেওয়া হয়নি। তিনি অভিযোগ করেছেন, ইউপিএ–র আমলে সেনারা তাঁদের নিরাপত্তার জন্য বুলেট প্রুফ জ্যাকেট দেবার দাবী জানিয়েছিল। কিন্তু তত্কালীন কংগ্রেস সরকার সেনাদের সেই আবেদনকে পাত্তাই দেয়নি। কিন্তু মোদীজী আসার পর দেশের সেনাদের জন্য ২ লক্ষ বুলেট প্রুফ আধুনিক জ্যাকেট দিয়েছেন। যার প্রতিটির ওজন মাত্র ৯ কেজি। প্রকাশ জাভড়েকর বলেন, সেনারা বুলেটের গুলিতে ঝাঁঝরা হয়ে যাচ্ছে আর তাঁদের নিরাপত্তার জন্য কোনো ব্যবস্থাই করেনি যে কংগ্রেস সরকার সেই রাহুল গান্ধী রাফায়েল নিয়ে চিত্কার করছে। অথচ ক্যাগ রিপোর্ট জানিয়ে দিয়েছেন এরকম কোনো কমিশন ডিলই হয়নি। রাহুল গান্ধীকে কটাক্ষ করে তিন বলেন, ‘রাফাল’ মানে ‘রাহুল ফেল’। তিনি বলেন, রাফায়েল বিমান থাকলে ভারতবর্ষই সমৃদ্ধ হবে। প্রসঙ্গত এদিন কেন্দ্রীয় মানব সম্পদ উন্নয়ন মন্ত্রী বলেন, দীর্ঘদিন ধরেই সেনাবাহিনীর দাবি ছিল এক পদ এক পেনশন। মোদীজি আসার পর সেই দাবী পূরণ করা হয়েছে। বাংলার তৃণমূল কংগ্রেস সরকারকেও একহাত নিয়ে এদিন প্রকাশ জাভড়েকর বলেন, কেন্দ্রীয় সরকার অন্যান্য রাজ্যে যে অর্থ বরাদ্দ করে বাংলাতেও তাই করে। কিন্তু বাংলার মমতাদিদি সেই অর্থ সঠিকভাবে প্রয়োগ করছেন না। অন্যান্য রাজ্যে শিক্ষকদের যে বেতন দেওয়া হয় এখানে তা দেওয়া হয়না। উল্লেখ্য, এদিন কেন্দ্রীয় মন্ত্রীর কাছে পূর্ব বর্ধমান জেলার প্রাথমিক, মাধ্যমিক তথা হাইস্কুল, প্যারাটিচার, শিশু শিক্ষা কেন্দ্রের শিক্ষকদের পক্ষ থেকে স্মারকলিপিও দেওয়া হয়। রবিবার সংকল্প যাত্রায় সিভিক ভলেণ্টিয়ারদের বিরুদ্ধেও যেভাবে বিজেপি কর্মীদের ওপর লাঠিচার্জ করার অভিযোগ উঠেছে এদিন তার তীব্র নিন্দা করেন তিনি। তিনি বলেন, এভাবে বিজেপিকে দমানো যাবে না। বরং আগামী লোকসভা নির্বাচনে রাজ্যের ৪২টি আসনের মধ্যে ৩০টিরও বেশি আসন পাবে বিজেপি। পাশাপাশি ২০২১ সালে রাজ্যে ক্ষমতায় আসবে বিজেপিই। তিনি বলেন, রাজ্যে তৃণমূল কংগ্রেস, কমিউনিষ্ট এবং কংগ্রেস একজোট হয়েছে। কিন্তু দেশের মানুষ চাইছে একটা স্থিতিশীল উন্নয়নমুখী সরকার। তাই মোদিই আগামী লোকসভা নির্বাচনে ক্ষমতায় আসবে। সিবিআই ইস্যুতে এদিন মমতা বন্দোপাধ্যায়ের নেতৃত্বে অনশন ধর্ণা নিয়েও কটাক্ষ করেন প্রকাশ জাভড়েকর। তিনি বলেন, এর আসল কারণ কি তা জানাতে হবে জনগণকে। বিরোধীরা মোদির বিদেশ যাত্রা নিয়ে যে সমালোচনা করছেন তারও উত্তর দিয়েছেন প্রকাশ জাভেদকর। তিনি বলেন, বিগত কংগ্রেসের প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিং ৫ বছরে যতবার বিদেশ গেছেন। মোদিজীও ততবারই গেছেন। কিন্তু মোদিজীর গ্রহণযোগ্যতা অনেক বেশি। তার জন্য বিজেপি দায়ী হবে কেন। গোটা দেশে কৃষকস্বার্থে মোদিজী যে প্রকল্প ঘোষণা করেছেন তার সুফল বাংলার কৃষকরা যে পাচ্ছেন না তার কারণ বাংলা থেকে সেই তালিকাই কেন্দ্রের কাছে পাঠানো হচ্ছে না বলে এদিন অভিযোগ করেন প্রকাশ জাভেদকর।