E Purba Bardhaman

বর্ধমানের প্রাথমিক স্কুল ভাঙার ঘটনায় নবান্নের নির্দেশে শুরু তদন্ত

Investigation started in Burdwan primary school demolition incident. The BJP submitted a deputation to the Sub-Divisional Officer demanding punishment for the culprits

বর্ধমান (পূর্ব বর্ধমান) :- বর্ধমান শহরের ১৫ নং ওয়ার্ডের ২ নং শাঁখারীপুকুর এলাকায় বিবেকানন্দ সেবক সংঘের পাশে বন্ধ থাকা একটি প্রাথমিক স্কুলকে ভেঙে মাটির সঙ্গে মিশিয়ে দেবার ঘটনায় তদন্ত শুরু করল জেলা প্রশাসন। গত ২৫ নভেম্বর সকাল থেকেই ওই ক্লাবের উদ্যোগে স্কুল ভবনটি জেসিপি দিতে ভেঙে ফেলা শুরু হয়। স্থানীয় মানুষের কাছ থেকে অভিযোগ পেয়েই পুলিশ কাজ বন্ধের চেষ্টা করলেও গোটা ভবনটি তার আগেই ভেঙে গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়। এদিকে, এই স্কুল ভবনকে ভেঙে ফেলার ঘটনায় ওই ক্লাবের সভাপতি তমালকান্তি মণ্‍ডল জানান, বিডিএ-র পক্ষ থেকে ওই জায়গায় একটি শিশুদের পার্ক তৈরী করবে। যদিও খোদ বিডিএ-র চেয়ারম্যান কাকলী তা গুপ্ত সরাসরি তমালবাবুর এই বক্তব্যকে নাকচ করে দেন। যা নিয়ে বিতর্ক তুঙ্গে ওঠে। উল্লেখ্য, স্বাধীনতার পরবর্তী সময়ে বাংলাদেশ থেকে আসা শরণার্থীদের কল্যাণের জন্য এই প্রাথমিক স্কুল চালু হয়। এলাকা সূত্রে জানা গেছে, প্রায় কয়েকদশক আগে বন্ধ হয়ে গেছে এই স্কুল। ছাত্র ও শিক্ষকের অপ্রতুলতাই বন্ধের কারণ। খোদ জেলা স্কুল পরিদর্শক স্বপন দত্ত জানিয়েছেন, ওই স্কুল ভবনটি শিক্ষা দপ্তরেরই সম্পত্তি। তা এভাবে ভেঙে ফেলা যায় না। গোটা বিষয়টি তিনি সংশ্লিষ্ট এআইকে তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন। এদিকে, এই বিষয়ে সংবাদ মাধ্যমে খবর হতেই খোদ নবান্ন থেকে জেলা প্রশাসনের কাছে অবিলম্বে গোটা বিষয়ে এফআইআর করে তদন্তের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে বলে জানা গেছে। তার পরিপ্রেক্ষিতে স্কুল শিক্ষা দপ্তর তথা ডিআই- দপ্তর থেকে বর্ধমান থানায় এফআইআর দায়ের করা হয়েছে বলে জানা গেছে। সোমবার এই ঘটনায় বিজেপির ৩নং নগর মণ্ডলের নেতৃত্বে বর্ধমানের সদর মহকুমা শাসকের (উত্তর) কাছে স্মারকলিপি দিয়ে অবিলম্বে এই ঘটনায় জড়িতদের শাস্তির দাবী জানানো হয়েছে। বিজেপির ৩ নম্বর নগর মণ্ডলের সভাপতি সুমিত দত্ত জানিয়েছেন, ভারত স্বাধীন হওয়ার পরে ১৫ নম্বর ওয়ার্ডের ২ নম্বর শাঁকারি পুকুর এলাকায় বিবেকানন্দ সেবক সংঘের পাশে আর আর ডিপার্টমেন্ট শিক্ষাদপ্তরকে দিয়ে বেলতলা প্রাইমারী স্কুল চালু করে। সেই স্কুল ভবন গত ২৫ নভেম্বর ভেঙে ফেলা হয়েছে । শাসক দলের মদতপুষ্ট ক্লাব সভাপতি তমালকান্তি মণ্ডলের নেতৃত্বে মেশিন দিয়ে স্কুল ভেঙে গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়। যারা এই স্কুলে পড়েছেন তাঁদের অনেকের আবেগ জড়িয়ে আছে। তাঁরা মানসিকভাবে ভেঙে পড়েছেন। স্কুল ভেঙে দেওয়া মানে সমাজের মেরুদন্ড ভেঙে দেওয়া। তাঁরা এই ঘটনায় জড়িতদের গ্রেফতারের দাবি জানিয়েছেন। কার মদতে ভাঙা হয়েছে, মূলচক্রী কে? – তা প্রকাশ্যে নিয়ে আসার দাবী করেছেন তাঁরা। একইসঙ্গে জড়িতদের শাস্তির দাবীতে বিজেপির বর্ধমান শহরের ৩ নম্বর নগর মণ্ডল থেকে সোমবার বর্ধমান সদর উত্তর মহকুমাশাসকের কাছে তাঁরা স্মারকলিপি দিয়েছেন। সুমিতবাবু জানিয়েছেন, স্কুলকে ভাঙার পিছনে অসাধু চক্র কাজ করেছে। ওই জায়গায় প্রোমোটারির উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে বলে তাঁরা মনে করছেন। বিষয়টি প্রাইমারি স্কুল কাউন্সিল, জেলাশাসক, পুলিশ সুপার, পুরসভার চেয়ারম্যান, মুখ্যমন্ত্রী-সহ রাজ্যের শিক্ষামন্ত্রীকেও জানানো হয়েছে। বিরোধী দলনেতার সঙ্গেও কথা হয়েছে, প্রয়োজনে তাঁরা হাইকোর্টেও যাবেন। তিনি অভিযোগ করেছেন, এই স্কুল ভাঙার পিছনে শাসক দলের প্রভাবশালী নেতা আছে। ভাঙ্গার দিন স্থানীয় কাউন্সিলার নিমাই মজুমদারও ওখানে হাজির ছিলেন বলে তিনি দাবী করেছেন। এদিকে, সোমবার মহকুমা শাসক তীর্থঙ্কর বিশ্বাস জানিয়েছেন, ১৫ নম্বর ওয়ার্ডে একটি স্কুলভবন ভেঙে ফেলার অভিযোগ পেয়েছেন। ইতিমধ্যেই বর্ধমান থানায় অভিযোগ হয়েছে। ডি আই অফিসেও অভিযোগ জমা পড়েছে। তদন্ত করে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হবে। যদিও, শাসক দল তৃণমূল কংগ্রেসের পক্ষ থেকে জানান হয়েছে, তাঁদের দলের সাথে যুক্ত কোনও নেতা-কর্মী অথবা জনপ্রতিনিধি এই ঘটনার সাথে কোনও ভাবেই যুক্ত নয়।

Exit mobile version