বর্ধমান (পূর্ব বর্ধমান) :- ‘নট ফর সেল’ সরকারী লেবেল দেওয়া ওষুধ পাচারের তদন্তে নেমে ক্রমশই চোখ কপালে উঠছে তদন্তকারী অফিসারদের। গত সোমবার বর্ধমানের বাহির সর্বমঙ্গলার পাঞ্জাবীপাড়ায় বহুতল একটি আবাসনে ড্রাগ কন্ট্রোল ব্যুরো ও পূর্ব বর্ধমান জেলা পুলিশ যৌথ অভিযান চালিয়ে গ্রেপ্তার করে সৌরেন্দ্রনারায়ণ রায় নামে এক ব্যক্তিকে। তার কাছ থেকে উদ্ধার হয় প্রচুর পরিমাণে সরকারী সাপ্লাইয়ের ওষুধ, ইঞ্জেকশন ও সার্জিক্যাল সরঞ্জাম। এদিকে, তদন্তকারী অফিসারদের সূত্রে জানা গেছে, ধৃত সৌরেন্দ্রনারায়ণ রায় এই অবৈধ ব্যবসা করছেন দীর্ঘ প্রায় ২৫ বছর ধরে। বাম আমল থেকেই এই অবৈধ ব্যবসায় হাত পাকাতে শুরু করেন তিনি। বর্ধমানের খোসবাগান এলাকায় তাঁর ভাইয়ের ওষুধের দোকানও রয়েছে। একটি সূত্রে জানা গেছে, ধৃত সৌরন্দ্রনারায়ণকে জেরা করে তদন্তকারীদের অনুমান, এই কাজের সঙ্গে জেলা ছাড়িয়ে কলকাতার একাধিক স্বাস্থ্য দপ্তরের কর্মী, অফিসাররাও যুক্ত থাকতে পারেন। তদন্তকারী অফিসাররা সৌরেন্দ্রনারায়ণের দেওয়া নাম ও তথ্য যাচাই করতে শুরু করেছেন। জানা গেছে, কলকাতার বাগরি মার্কেট ছাড়াও সৌরেন্দ্রনারায়ণ জেলার মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের স্টোর থেকেও এই সরকারী ‘নট ফর সেল’ লেখা ওষুধাদি সংগ্রহ করত। স্বাভাবিকভাবেই এই ঘটনায় স্টোরের কর্মীরাও এখন তদন্তকারীদের আতস কাচের নীচে। স্টোরের কর্মীদের সঙ্গে যোগসাজসের মাধ্যমেই দীর্ঘ প্রায় আড়াই দশক ধরে তিনি এই কাজ চালিয়ে যাচ্ছিলেন বলে মনে করছেন তদন্তকারীরা। তদন্তকারী অফিসাররা জেনেছেন, সৌরেন্দ্রনারায়ণ সরাসরি বর্ধমান শহরের কমপক্ষে ৫টি নার্সিংহোমকে ওষুধ সরবরাহ যেমন করতেন, তেমনি আরও কিছু নার্সিংহোমকেও বিক্ষিপ্তভাবে ওষুধ সরবরাহ করতেন। সরকারী ‘নট ফর সেল’ ওষুধের সঙ্গে অন্য ওষুধ রেখে গোপনে তা সরবরাহ করতেন সৌরেন্দ্রনারায়ণ। আর তাঁর কাছ থেকে এভাবে অবৈধ ওষুধ বাজার থেকে অর্ধেকেরও কমদামে নার্সিংহোমগুলি সংগ্রহ করত। তদন্তকারীরা জানতে পেরেছেন, নার্সিংহোমে ভর্তি থাকা কোনো কোনো রোগীকে এই সমস্ত সরকারী ওষুধই দেওয়া হত, পরিবর্তে তাঁদের বাজার অনুযায়ী ওষুধের দামের বিল করা হত। ফলে নার্সিংহোমগুলি দু’দিক থেকে চড়া মুনাফা অর্জন করত। জানা গেছে, পূর্ব বর্ধমান জেলার পাশাপাশি বাইরে থেকেও অনেকে তাঁর কাছ থেকে এই সমস্ত ওষুধাদি সংগ্রহ করত। তাদের বিষয়েও তদন্তকারীরা খোঁজখবর শুরু করেছেন। একইসঙ্গে তার এই কাজে কারা কারা যুক্ত, কাদের ইন্ধন ছিল গোটা বিষয়টি নিয়ে ব্যাপকভাবেই তদন্ত শুরু দিয়েছেন তদন্তকারী অফিসাররা।