গণেন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায়, বর্ধমান (পূর্ব বর্ধমান) :- আসানসোল সংশোধনাগারে এক বিচারাধীন বন্দিকে বেধড়ক মারধর নিয়ে তদন্তের নির্দেশ দিলেন বর্ধমানের মাদক সংক্রান্ত বিশেষ আদালতের ভারপ্রাপ্ত বিচারক পার্থপ্রতিম দত্ত। মারধরের বিষয়ে তদন্ত করার জন্য পশ্চিম বর্ধমানের জেলাশাসককে নির্দেশ দিয়েছেন বিচারক। এ ব্যাপারে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য জেলা শাসককে বলেছেন বিচারক। এছাড়াও বিচারাধীন বন্দি যদি হাইকোর্টে এনিয়ে মামলা করতে চায়, তাহলে তাকে আইনি সাহায্য দেওয়ার জন্য জেলা শাসককে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে বলেছেন বিচারক। এ ধরণের ঘটনার যথাযথ তদন্ত হওয়া উচিত বলে জানিয়েছেন বিচারক। বন্দিকে মারধরে অভিযুক্ত পুলিস কর্মীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া উচিত বলে মত প্রকাশ করেছেন বিচারক। এমনকি জনস্বার্থ মামলার জন্য প্রয়োজন হলে আদেশের কপি হাইকোর্টে পাঠানোর জন্য নির্দেশ দিয়েছেন বিচারক। যেহেতু বিচারাধীন বন্দির হাইকোর্টে মামলা করার মত সামর্থ্য নেই, সে কারণে আদেশের কপি হাইকোর্টে পাঠানো যেতে পারে বলে জানিয়েছেন বিচারক। ৭ দিনের মধ্যে জেলা শাসককে এ বিষয়ে আদালতে রিপোর্ট পেশ করতে বলা হয়েছে। জেলা শাসকের পাশাপাশি আসানসোল-দুর্গাপুরের পুলিস কমিশনারকে বন্দির চিকিৎসার ব্যবস্থা করাতে বলেছেন বিচারক। জেলা মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিকের তত্ত্বাবধানে যাতে বন্দির চিকিৎসা হয় তার ব্যবস্থা করতে নির্দেশ দিয়েছেন বিচারক। সোমবারের মধ্যে চিকিৎসা সংক্রান্ত রিপোর্ট পেশ করতে হবে আদালতে। ভরা আদালতে বন্দির উপর নৃশংস অত্যাচার নিয়ে পুলিসের ভূমিকায় উম্মা প্রকাশ করেন বিচারক।
আদালত সূত্রে জানা গিয়েছে, ২০১৪ সালের ২৫ জুন বর্ধমান থানার পুলিস ১০৮ শিবমন্দির এলাকা থেকে গাঁজা সহ ভাস্কর কর্মকার, দীনবন্ধু ঘোষ, শংকর অধিকারী ও সোনু হালদারকে গ্রেপ্তার করে। ধৃতদের কাছ থেকে ২২ কেজি ৫০০ গ্রাম গাঁজা উদ্ধার হয় বলে পুলিসের দাবি। মামলাটির বিচার চলছে। ভাস্কর অবশ্য আদালতে হাজির হচ্ছেনা। সে পলাতক। শুক্রবার অপর দুই অভিযুক্ত শংকর ও সোনু আদালতে হাজির হয়। তারা জামিনে রয়েছে। আসানসোল সংশোধনাগারে রয়েছে দীনবন্ধু। তাকে সেখান থেকে আদালতে পেশ করা হয়। এদিন শুনানি চলাকালীন বিচারকের দৃষ্টি আকর্ষণ করে দীনবন্ধু। তাকে সংশোধনাগারে দুই পুলিস কর্মী ব্যাপক মারধর করেছে বলে বিচারকের কাছে জানায় সে। এরপর পোশাক খুলে তার উপর হওয়া অত্যাচারের নিশানা সে বিচারককে দেখায়। বিচারক নিজের মোবাইলে দীনবন্ধুর শরীরে আঘাতের চিহ্নের ছবি তুলে রাখেন। দীনবন্ধুর শরীরের বিভিন্ন জায়গায় রক্ত জমাট হয়ে থাকার চিহ্ন রয়েছে। বিচারকের কাছে সে কেঁদে ফেলে। ভরা আদালতে সে জানায়, সংশোধনাগারে পয়সা দিলেই সবকিছু মেলে। মোবাইল থেকে নেশার দ্রব্য পৌঁছে যায় বন্দিদের কাছে। এর প্রতিবাদ করার জন্যই তাকে মারধর করা হয়েছে।