E Purba Bardhaman

কর্মবিরতির মাঝেই বর্ধমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতাপালে জুনিয়র ডাক্তারদের মানবিক মুখ

বর্ধমান (পূর্ব বর্ধমান) :- গোটা রাজ্য জুড়ে যখন জুনিয়র ডাক্তারদের কর্মবিরতির আন্দোলনের জেরে রীতিমত স্বাস্থ্য ব্যবস্থা ভেঙে পড়ার জোগাড়। সেই সময় জুনিয়র ডাক্তারদের মানবিক মুখ দেখলো বর্ধমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল। এদিন বর্ধমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে রোগীর চিকিত্সার প্রয়োজনে জুনিয়র ডাক্তাররাক্তদান শিবিরের আয়োজন করেন। তেমনি ধর্ণামঞ্চেই তাঁরা শিশুকে কোলে নিয়ে উতকণ্ঠায় থাকা মায়ের মুখে হাসি ফেরাতে ওখানে বসেই শিশুর চিকিত্সা করেছেন। এদিন আউটডোরে দেখাতে এসে পরিষেবা বন্ধ দেখে ফিরে যাওয়া রোগীদের মধ্যে বিশেষ করে বেশ কয়েকজন শিশুর চিকিত্সা করেছেন জুনিয়র ডাক্তাররা। যদিও এব্যাপারে জুনিয়র ডাক্তাররা কিছু বলতে চাননি। বর্ধমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ডেপুটি সুপার ডাঅমিতাভ সাহা জানিয়েছেনআন্দোলন চালিয়ে গেলেও জুনিয়র ডাক্তাররাও চাইছেনহাসপাতালের জরুরী পরিষেবা যাতে অক্ষুণ্ণ থাকে। এমনকি তাঁরা এব্যাপারে সহযোগিতাও করছেন। অপরদিকেএনআরএস সহ গোটা রাজ্য জুড়ে যখন জুনিয়র ডাক্তাররা তাঁদের নিরাপত্তার দাবীতে আন্দোলন করে চলেছেন। এমনকি খোদ মুখ্যমন্ত্রী তথা রাজ্যের স্বাস্থ্যমন্ত্রীকে সরাসরি আন্দোলনরত জুনিয়র ডাক্তারদের কাছে এসে তাঁদের দাবী দাওয়া শোনার আবেদন জানিয়েছেন। সেই সময় বৃহস্পতিবার রাজ্য স্বাস্থ্য দপ্তরের কর্তারা জুনিয়র ডাক্তারদের নিরাপত্তার দাবী মেনে ১০ দফা নির্দেশিকা জারী করলেন। শুক্রবারই রাজ্যের সমস্ত জেলায় জেলায় এই নির্দেশিকা সরকারী হাসপাতাল গুলিতে পৌঁছেও গেছে। তারপরই শুরু হয়েছে জোরদার তত্পরতা। রাজ্য স্বাস্থ্য দপ্তরের এডিশনাল চীফ সেক্রেটারীর স্বাক্ষর সম্বলিত ওই নির্দেশিকায় বলা হয়েছে, আগামী ১৫ দিনের মধ্যে দ্রুততার সঙ্গে এই নির্দেশ কার্য্যকরী করতে হবে। জানা গেছেমোট ১০ দফা নির্দেশিকায় রয়েছে সংশ্লিষ্ট জেলার স্বাস্থ্য দপ্তরের প্রতিনিধিপুলিশ অফিসার এবং হাসপাতাল কর্তপক্ষকে নিয়ে হাসপাতালের নিরাপত্তায় প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা করার বিষয়টি। হাসপাতালের প্রতিটি জায়গায় সিসিটিভি লাগানোপর্যাপ্ত পেশাদারী নিরাপত্তাকর্মী নিয়োগ করার বিষয়। প্রতি সপ্তাহে নিরাপত্তার বিষয়টি রিভিউ করা এবং সেই অনুযায়ী পরবর্তী নিরাপত্তা বলয় তৈরী করা। হাসপাতালের জরুরী প্রয়োজনে এ্যালার্ম এবং হটলাইন ব্যবহার করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। নির্দেশ দেওয়া হয়েছে একটি কেন্দ্র থেকেই গোটা নিরাপত্তা ব্যবস্থাকে পরিচালনা করার। হাসপাতালে অনভিপ্রেত ঘটনা ঘটলে দ্রুত পুলিশকে তা দেখার পাশাপাশি রোগীপক্ষের কোনো অভিযোগ থাকলে তা পুলিশকে দেখতে বলা হয়েছে। উল্লেখ্যজুনিয়র ডাক্তারদের কর্মবিরতি শুক্রবার চতুর্থদিনে পা দিল। মুখ্যমন্ত্রীর কড়া হুঁশিয়ারীকে পাত্তা না দিয়েই নিজেদের দাবীদাওয়ার সমর্থনে অনড় অটল মনোভাব দেখিয়ে জুনিয়র ডাক্তারইন্টার্ণ সহ সরকারী হাসপাতালের সিনিয়র  অন্যান্য চিকিত্সকও তাঁদের আন্দোলনে যোগ দেওয়ায় ক্রমশই পরিস্থিতি হাতের বাইরে যেতে শুরু করল। কলকাতার এনআরএস কাণ্ডের জেরে গত মঙ্গলবার থেকেই বর্ধমান মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালেও চলছে একই চিত্র। শুধু তাই নয়আইনকে বুড়ো আঙুল দেখিয়েই হাসপাতালের ভেতর মাইক বাজিয়ে চলছে শ্লোগানপিকেটিংও। যদিও কিছু সময় পরেই মাইক খুলে নেওয়া হয়। বৃহস্পতিবারই মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশে বর্ধমান হাসপাতালের জুনিয়র ডাক্তারদের দেওয়া তালা ভেঙে জরুরী বিভাগ চালু করে হাসপাতাল সুপার ডাউত্পল দাঁ জানিয়েছিলেন শুক্রবার থেকেই খুলে দেওয়া হবে আউটডোরও। তিনি জানিয়েছেনসিনিয়র ডাক্তারফ্যাকাল্টি মেম্বার সকলের সঙ্গেই এব‌্যাপারে আলোচনা হয়েছে। কিন্তু শুক্রবার সকাল থেকে পরিস্থিতির বিন্দুমাত্র উন্নতি ঘটেনি। ফলে চরম দুর্ভোগের মধ্যে পড়েন রোগীরা। এদিনও আউটডোর খোলেনি। হাসপাতাল সুপার ডাউত্পল দাঁ জানিয়েছেনএদিন তাঁরা চেষ্টা করেও আউটডোর চালু করতে পারেননি। তবে পুরনো রোগীদের এদিন জরুরী বিভাগ লাগোয়া ঘরে অস্থায়ী আউটডোরে চিকিত্সা করা হয়েছে। প্রায় ১৫০০ রোগীর এদিন চিকিত্সা করা হয়েছে। এমনকি এদিন ইএনটি বিভাগে বর্ধমানের জামার কোড়া এলাকার বাসিন্দা এক মহিলার গলায় আটকে যাওয়া পয়সা বার করা হয়েছে। পাশাপাশি বর্ধমান শহরের বাদশাহি রোডের বাসিন্দা এক ক্যান্সার আক্রান্ত রোগীর গলায় থাকা নল খুলে যাওয়ায় নতুন করে তা অপারেশন করে লাগানোর ব্যবস্থা করা হয়।  এদিন জরুরী বিভাগে ৩টি অপারেশন করা হয়েছে। যদিও আউটডোরের জন্য নতুন টিকিট করা হয়নি। যদিও গত কয়েকদিনের মতই এদিনও বহু রোগী এসে ফিরে যান। অপরদিকে,বৃহস্পতিবার এবং শুক্রবার রাজ্যের বিভিন্ন হাসপাতালগুলিতে চিকিত্সকদের যে গণ ইস্তফার হিড়িক চলছে বর্ধমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে তার প্রভাব পড়ল। হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছেএখনও পর্যন্ত ইস্তফা পত্রে ৩০জন স্বাক্ষর করেছেন। সেই স্বাক্ষর এখনও চলছে। স্বাভাবিকভাবেই শনিবার এই সংখ্যা আরও বাড়বে বলে জানিয়েছেন হাসপাতালের ডেপুটি সুপার ডাঅমিতাভ সাহা।

Exit mobile version