চিকিৎসক অভীক দে ও তাঁর অনুগামীদের বর্ধমান মেডিকেল কলেজে প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা ঘোষণার দাবিতে ব্যাপক আন্দোলনে জুনিয়র ডাক্তাররা
admin
বর্ধমান (পূর্ব বর্ধমান) :- বর্ধমান মেডিকেল কলেজের রেডিওলজি বিভাগের প্রাক্তন মেডিকেল অফিসার তথা বর্তমানে এসএসকেএমের সার্জারি বিভাগের পিজিটি অভীক দে-কে বর্ধমান মেডিকেল কলেজে ঢুকতে দেওয়া হবে না বলে সিদ্ধান্ত নিলেন বর্ধমান মেডিকেল কলেজের জুনিয়র ডাক্তার ও পড়ুয়ারা। এই ঘটনায় ব্যাপক চাঞ্চল্য সৃষ্টি হয়েছে। জুনিয়র ডাক্তারদের সিদ্ধান্ত, বর্ধমান মেডিকেল কলেজের যদি কেনো পদে থাকেন অভীক দে তাহলে তাঁকে অপসারণ করতে হবে। ছাত্রদের জিবি মিটিং-এ এমনই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। উল্লেখ্য, ছাত্রদের দাবি মেনে সোমবারই কলেজ কাউন্সিল-এর মিটিং ডাকা হয়েছে। আর এদিন দুপুর থেকে একদিকে যখন এই মিটিং চলছে সেই সময় বাইরে ছাত্রছাত্রীরা বিক্ষোভে ফেটে পড়েছেন। মেডিকেল পড়ুয়াদের অভিযোগ, ৪-৫ বছর ধরে বর্ধমান মেডিকেলে ভয়ের বাতাবরণ তৈরি করে রেখেছেন অভীক দে ও তাঁর অনুগামীরা। তাঁদের দাবি, অভীক দে হাউস স্টাফ কাউন্সেলিংও প্রভাবিত করেন। ছাত্রছাত্রীরা অভিযোগ করেছেন, যে পদ্ধতিতে হাউস স্টাফ কাউন্সেলিং হয়, সেই পদ্ধতিতে এবার হয় নি। আগে কয়েক বছরের পরীক্ষার নম্বরের গড়ের ভিত্তিতে হতো। এবারে নতুন করে মোট নম্বরকে ৮৫ ধরে তার উপর ১৫ নম্বরের মৌখিক ইন্টারভিউতে পাওয়া নম্বর যোগ করে হাউস স্টাফ নিয়োগ হয়েছে। জানা গেছে, এস এস কে এম-এর সার্জারি বিভাগের পিজিটি অভীক দেকে নিয়ে এত হৈচৈ এত বিতর্ক সেই অভীক দের আইবুড়ো ভাতের অনুষ্ঠান করা হয়েছিল বর্ধমান মেডিকেল কলেজের ক্যাম্পাসের গেস্ট হাউসে। শুধু তাই নয় ডাঃ অভীক দের জন্মদিনের অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয় মেডিকেল কলেজের গেস্ট হাউসের একটি রুমে। কীভাবে সরকারি জায়গায় এইভাবে আই বুড়ো ভাতের অনুষ্ঠান করা যায় সেই প্রশ্ন তুলেছেন মেডিকেল কলেজের ছাত্রছাত্রীরা। তাঁদের অভিযোগ, এইভাবেই দিনের পরদিন নিজের প্রভাব খাটিয়ে যা খুশি করে গেছেন ডাঃ অভীক দে। কখনো জন্মদিন তো কখনো আইবুড়ো ভাতের অনুষ্ঠান। এমনকি, প্রশ্ন উঠেছে ঘটনার দিন আর জি কর মেডিকেলের স্টাফ না হয়েও কীভাবে সেখানে তিনি উপস্থিত ছিলেন। অভিযোগ, অভীক দে রাতের অন্ধকারে বর্ধমান মেডিকেল কলেজের লেকচারার থিয়েটারে ঢুকে সে কথা স্বীকার করে নিয়েছেন প্রায় ১ ঘণ্টার এক অডিও বার্তায়। যা ইতোমধ্যেই ভাইরালও হয়েছে। যা নিয়ে সরব হয়েছেন মেডিকেল কলেজের ছাত্রছাত্রীরা। সোমবার বর্ধমান মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের চিকিৎসক গৌরাঙ্গ প্রামাণিক এদিন প্রশ্ন তুলেছেন, বর্ধমান মেডিকেল কলেজের কেউ না হয়েও কি করে তাঁর আইবুড়ো ভাতের বা জন্মদিনের অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হল। ১১ আগস্ট রাতে কীভাবে লেকচার থিয়েটার বন্ধ হয়ে যাওয়ার পরে মেডিকেল কলেজে ঢুকে বৈঠক করলেন ডাঃ অভীক দে সেই প্রশ্ন তুলে এবার সরব হলেন বর্ধমান মেডিকেল কলেজের জুনিয়র ডাক্তার ও পড়ুয়ারা। সোমবার জুনিয়র ডাক্তারদের জিবি মিটিংয়ে এই বিষয় নিয়ে সরব হন চিকিৎসক পড়ুয়ারা। পড়ুয়াদের অভিযোগ, তাঁরা জানতে পেরেছেন অভীক দে নিজে স্বীকার করেছেন ঘটনার দিন আর জি কর মেডিকেল কলেজের হাসপাতালে উপস্থিত ছিলেন। পাশাপাশি বর্ধমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে কর্মবিরতিতে থাকা জুনিয়র ডাক্তারদের আন্দোলনকে ভাঙার অভিযোগ ওঠে উত্তরবঙ্গ লবির চিকিৎসক ডাঃ অভীক দের অনুগামীদের বিরুদ্ধে। তাঁদের মধ্যে বেশ কয়েকজন বহিরাগত ছাত্রছাত্রীও আছে। যা নিয়ে সরব হয়েছেন আন্দোলনকারীরা। বিষয়টি নিয়ে বর্ধমান মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষ ডাঃ মৌসুমি বন্দ্যোপাধ্যায়কে ডেপুটেশন দিয়েছেন আন্দোলনকারী চিকিৎসকরা। আন্দোলনকারী চিকিৎসকদের অভিযোগ, গত শুক্রবার যখন মেডিকেল কলেজে জিবি মিটিং চলছিল সেই সময় বহিরাগত ও পাশ আউট কিছু চিকিৎসক আন্দোলনকারীদের আন্দোলন বন্ধ করার জন্য আজেবাজে মন্তব্য করতে শুরু করে। শুধু তাই নয় আন্দোলনকারীদের হোস্টেল থেকে বের করে দেওয়ার হুমকি ছাড়াও পরীক্ষায় বসতে দেওয়া হবে না বা রেজিস্ট্রেশন করতে দেওয়া হবে না বলে হুমকি দেয়। এরপরেই আন্দোলনকারী চিকিৎসকেরা পালটা হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেন তাঁরা কোনোভাবেই আন্দোলন থেকে সরে যাবেন না। তাঁদের ভয় দেখিয়ে আটকে রাখা যাবে না। তাঁদের আরও অভিযোগ, উত্তরবঙ্গ লবির চিকিৎসক অভীক দে বর্ধমান মেডিকেলের সঙ্গে যুক্ত না হয়েও এখানকার বেশ কয়েকজন জুনিয়র চিকিৎসকদের সঙ্গে মিটিং করে যান। তিনি কীভাবে বর্ধমান মেডিকেল কলেজে আসেন সেই প্রশ্নও তোলেন আন্দোলনকারীরা। আন্দোলনরত জুনিয়র ডাক্তারদের আরো অভিযোগ, বর্ধমান রাজ কলেজের দুটি রাজনৈতিক দলের মধ্যে লড়াইয়ের জেরে বর্ধমান মেডিকেল কলেজের পড়ুয়াদের সেখানে নিয়ে যাওয়া হত। রাজনৈতিক দলের মিটিংয়ে তীব্র রোদে কার্জন গেট পর্যন্ত হাঁটানো হয় তাঁদের। পিজিটি গৌরাঙ্গ প্রামাণিক এদিন জানিয়েছেন, আজ কলেজ কাউন্সিল-এর মিটিং হয়। সেখানে বিক্ষোভ হয়। বর্ধমান মেডিকেল কলেজ দিচ্ছে ডাক অপশাসন এবং সিন্ডিকেট চক্র নিপাত যাক। অভীক দের অনুপ্রবেশ এই কলেজে অবৈধ ঘোষণা করার জন্য অধ্যক্ষ এবং কলেজ কাউন্সিলের কাছে জানানো হয়েছে। আর জি করে কোনও ভাবে যুক্ত না হয়েও সেই ঘরে অভিক দে কীভাবে আবির্ভূত হয়েছিলেন। কেন সেখানে গিয়েছিলেন। কী পরিকল্পনা ছিল। উনি আর জি করে গিয়ে কী করেছেন? শুনতে পাচ্ছি উনি ফিঙ্গার প্রিন্ট এক্সপার্ট হিসেবে গিয়েছিলেন। উনি আগে বর্ধমান মেডিকেল কলেজের রেডিওলজি বিভাগের মেডিকেল অফিসার ছিলেন। এখন এস এস কে এম-এর সার্জারি বিভাগের পোস্ট গ্র্যাজুয়েট। এই দুটি বিভাগের সাথে ফিঙ্গার প্রিন্ট-এর সম্পর্ক নেই। সমস্ত ঘটনা পরিকল্পিত ভাবে লঘু করে দেওয়ার চেষ্টা চলছে। যাঁদের প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে মদতে অপরাধীরা বাইরে ঘুরে বেরাচ্ছে তাঁদের বিরুদ্ধে খুন, ধর্ষণ ও তথ্য প্রমাণ লোপাটের ধারায় মামলা করে তাদেরকেও বিচারবিভাগীয় তদন্তের আওতায় আনা হোক। তিনি জানিয়েছেন, তাঁদের প্রধান দাবি, অভিক দের অনুপ্রবেশ অবৈধ ঘোষণা। স্টুডেন্ট কাউন্সিল অটোনমাস বডি তৈরির জন্য পদক্ষেপ নিতে হবে, রেসিডেন্ট ডাক্তারদের অ্যাসোসিয়েশন তৈরির জন্য পদক্ষেপ নিতে হবে।