E Purba Bardhaman

বর্ধমানের মোহনবাগান মাঠে ১৭টি গান গেয়েছিলেন লতা মঙ্গেশকর – স্মৃতিচারণে সেদিনের দর্শকরা

Lata Mangeshkar took part in a concert in Burdwan in 1990. At Mohunbagan Ground in Burdwan. 21 February 1990. Photo courtesy - Sujoy Mitra
বর্ধমানে লতা মঙ্গেশ্বকর। ছবি – সুজয় মিত্রের সৌজন্যে

বিপুন ভট্টাচার্য, বর্ধমান (পূর্ব বর্ধমান) :- ১৯৯০ সালের ২১ ফেব্রুয়ারী সকাল থেকেই কার্যত চরম কৌতূহলে ফুটছে গোটা বর্ধমান শহর এবং শহর সংলগ্ন এলাকার মানুষেরা। কার্যত দুপুর থেকেই বর্ধমান শহরের একপ্রান্ত বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়ের মোহনবাগান মাঠে যাবার রাস্তায় তিল ধারণের ঠাঁই নেই। আসছেন ভারতের সুর সম্রাজ্ঞী লতা মঙ্গেশকর। স্বাভাবিকভাবেই “সেদিন সকাল থেকেই দফায় দফায় গেছি মোহনবাগান মাঠ এলাকায়। নিরাপত্তার জন্য পুলিশ ধারে কাছে ঘেঁষতে দেয়নি আমাদের। যদিও আমরা কয়েকজন স্টুডেণ্ট পাশ সংগ্রহ করে নিয়েছিলাম তার আগেই। আজ লতা মঙ্গেশকরের প্রয়াণ হ’ল, রেখে গেলেন আজ থেকে প্রায় ৩১ বছর আগের ইতিহাসকে।” বর্ধমান শহরের গোদা এলাকার বাসিন্দা খোন্দেকার ফজলুর রহমান ওরফে সবুজ মাষ্টার এক নিঃশ্বাসে রবিবার সকালে জানিয়ে গেলেন সেদিনের সেই ইতিহাস। জানিয়েছেন, “রোটারি ক্লাব অব বর্ধমান লতা মঙ্গেশকরকে নিয়ে এসেছিল। তাঁর সঙ্গে এসেছিলেন উষা মঙ্গেশকর, অমিত কুমাররাও।” সবুজ মাষ্টার জানিয়েছেন, ”যতদূর তাঁর মনে আছে মোট ১৭টি গান গেয়েছিলেন লতা মঙ্গেশকর। অমিত কুমার গেয়েছিলেন ‘ওয়ে ওয়ে’ গানটি।” ফজলুর সাহেব জানিয়েছেন, লতা মঙ্গেশকরকে দেখার জন্য ভিড় এতটাই উপচে পড়েছিল যে মোহনবাগান মাঠের চারিপাশের টিনের আড়ালকে সরিয়ে দিতে বাধ্য হয়েছিলেন উদ্যোক্তারা।

বর্ধমানে লতা মঙ্গেশ্বকর। ছবি – সুজয় মিত্রের সৌজন্যে

তিনি জানিয়েছেন, লতা মঙ্গেশকরকে উত্তরীয় পড়িয়ে সম্মান জানিয়েছিলেন জেলা পরিষদের তত্কালীন সভাধিপতি মহবুব জাহেদী। সবুজ মাষ্টার জানিয়েছেন, দর্শকদের চাপে একটি বাসেও ভাঙচুর করা হয়েছিল। রোটারি ক্লাবের একটি অস্থায়ী ছাউনিও ভেঙে গেছিল। তিনি জানিয়েছেন, “ম্যায়নে প্যায়ার কিয়া”-র ‘কবুতর যা-যা-যা …’ গানটি যখন গেয়েছিলেন – তখন দর্শকরা রীতিমত হৈ হৈ করে উঠেছিলেন। ১৯৯০ সালের ২১ ফেব্রুয়ারী লতা মঙ্গেশকরকে বর্ধমানে নিয়ে আসার রাস্তাটি কিন্তু সেদিন খুব সহজ হয়নি। সবুজ খেলার মাঠ ধ্বংস করে অনুষ্ঠান করার বিরোধিতায় মামলাও হয়েছিল। সেদিনের রোটারাক্টের সদস্য ভলেণ্টিয়ারের দায়িত্বে থাকা সুজয় মিত্র জানিয়েছেন, দু-দুবার লতা মঙ্গেশকরের আসা বাতিল হয়ে যায়। এমনকি শেষ তিনি যেদিন এসেছিলেন তার ৭দিন আগেও তাঁরা ছিলেন চরম উত্কণ্ঠায়। আদপেই অনুষ্ঠান হবে কিনা তা নিয়ে তাঁরা রীতিমত দুশ্চিন্তায় কাটিয়েছেন। অনুষ্ঠানের মাত্র ৫ দিন আগে তাঁরা আদালতের অনুমতি পেয়েছিলেন। ওই ৫দিনেই তাঁদের সমস্ত ব্যবস্থা করতে হয়েছিল। তিনি জানিয়েছেন, লতা মঙ্গেশকরকে দেখার জন্য প্রচুর মানুষ এসেছিলেন। সুর সম্রাজ্ঞীকে সেদিন কাছ থেকে তাঁরা দেখেছিলেন। রবিবার সকালে লতা মঙ্গেশকরের মৃত্যু সংবাদ পাওয়ার পর কার্যতই গোটা দেশের সঙ্গে বর্ধমানেও শোকের ছায়া নেমে এসেছে। বর্ধমানের মোহনবাগান মাঠে লতা মঙ্গেশকরের সেদিনের সেই স্মৃতিই ছিল রবিবাসরীয় চর্চার বিষয়।

Exit mobile version