বোলপুর, বর্ধমান-দুর্গাপুর এবং বর্ধমান পূর্ব কেন্দ্রের প্রার্থীদের সমর্থনে নির্বাচনী সভা করলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়
admin
আউশগ্রাম ও গলসী (পূর্ব বর্ধমান) :- আমার প্রার্থী অসিত মাল এক জন নিপাট ভদ্রলোক, আপনাদের পরিবারের ছেলে। তাঁকে ভোট দিন। শতাব্দী রায়কেও ভোট দিয়ে জয়যুক্ত করুন। আউশগ্রাম হাইস্কুল ফুটবল মাঠের নির্বাচনী সভা থেকে বললেন তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি বলেন, ৩১ মার্চ থেকে বাইরে আছি। রোজ মিটিং করছি। মাঝে এক দিনের জন্য রেড রোডের প্রার্থনায় গিয়েছিলাম। আর দক্ষিণা কালীর পুজো দিতে গিয়েছিলাম। রাতে গিয়ে সকালেও চলে এসেছি। অর্থাৎ বাড়ির সঙ্গে আমার সম্পর্ক নেই বললেই চলে। পুরোটাই মা-মাটি-মানুষকে ঘিরে। অনেকে বলেন হেলিকপ্টার চড়ে আসা। একবার চড়ে দেখুন। ওটা না আগুনের মতো জ্বলে, আর ওখানে কোনও ঠান্ডা নেই। টোটাল লু বইছে। হেলিকপ্টারের মধ্যে থাকা মানে ৫০ ডিগ্রিতে আমায় আসতে হয়। তীব্র দহনের মধ্যে নির্বাচন কমিশন বিজেপিকে সন্তুষ্ট করতে মানুষকে কষ্ট দিয়ে তিন মাস ধরে ইলেকশন করছে। অন্য বার আমরা দেখতাম ৭-৮ মে-র মধ্যে হয়ে যেত। এ বার কী হল! বাধ্য হয়ে ছাত্রছাত্রীদের ছুটি দিলাম। ওরা পারছে না, কষ্ট হচ্ছে। তীব্র জলসঙ্কট চারিদিকে। সমস্ত পুকুর শুকিয়ে গিয়েছে। তার মধ্যেও যতটা পারি সেবা করে চলেছি। আপনারা অনেকে জানেনই না, ১৭ ডিগ্রিতে এসি চালিয়ে দেন। কিন্তু বিদ্যুতের যে চাহিদা বাড়ছে। আমি অত এসি ব্যবহার করি না। বাড়িতে যে ঘরে থাকি এসি চালাই না। বাইরে থাকলেও ২৭ ডিগ্রির নিচে চালাই না। আপনারা বিদ্যুৎ সঞ্চয় করুন। বিখ্যাত গবেষকেরা বলছেন, ২৫ ডিগ্রির নিচে নামানো উচিত নয়। যত্রতত্র অপচয় করলে একদিন কিন্তু ভাঁড়ার শেষ হয়ে যায়। তাই দেউচা পাঁচামি করছি। যাতে একশ বছর বিদ্যুতের অভাব না হয়। মানুষ কম পয়সায় বিদ্যুৎ পায়। এক লক্ষের বেশি ছেলেমেয়ের চাকরি হবে। পানাগড় থেকে কোচবিহার ইন্ডাস্ট্রিয়াল করিডর হচ্ছে। রঘুনাথপুর থেকে ডানকুনি পর্যন্ত আর একটা করিডর হচ্ছে। আপনারা ফসল দেন। আমরা তাই খেয়ে বেঁচে থাকি। পিজ্জা, বিরিয়ানি, ধোকলা এক এক দিন খাওয়া যায়, কিন্তু রোজ বেঁচে থাকতে চাই রোটি-কাপড়া-মকান। বিজেপি আমার কাছে জবাব চাইছে। আমি বলছি, আগে তোরা জবাব দে। এটা দিল্লির ইলেকশন, আমার নয়। কিন্তু সেখানে বিজেপিকে হারাতে হবে। এত রোদে, এত ঝড়ে-জলে বিজেপি যেন একটা সিট না পায়, তার দিকে লক্ষ্য রাখতে হবে। এক একটা সিট চোখের মনির মতো রক্ষা করতে হবে। বাংলায় বিজেপির দুটো চোখ, কংগ্রেস আর সিপিএম। ভোট কাটতে এদের দাঁড় করায়। যদি তৃণমূলের কিছু ভোট কাটা যায়। কেষ্টকে আপনারা কত ভালোবাসেন মাটির ছেলে। ওর অগুন কী আছে, কেসে কী আছে আমি জানি না। আইন আইনের পথে চলবে। গরিব লোক ওর কাছে গিয়ে দাঁড়ালে কখনও ফেরাত না। জেলাটা ছিল ওর হাতের মুঠোয়। আমি মিটিং করতে গিয়ে দেখেছি কী ভাবে ও কাজ করত। প্রতি ইলেকশনে ওকে নজরবন্দি করে রেখে দিত। যাতে ইলেকশনের দিন বেরোতে না পারে। চাঁদুর বাড়িতেও রেড করল। যে কোনও কারও বাড়িতে রেড করতে পারে। হয় বিজেপিকে ভোট দাও, নাহলে ইডিতে যাও। সিবিআই যাও, ইনকাম ট্যাক্স খাও, জেলে যাও। আমাদের ট্যাক্সের টাকা নিয়ে যায়। কিন্তু সেই টাকা থেকে একশ দিনের মজুরি দেয় না। তিন বছর টাকা দেয়নি। সাড়ে তিনশ কমিশন এসেছে। কাগজপত্র দিয়ে প্রমাণ করেছি। আমি তো রোজই বলি, বড় বড় কথা বলার আগে, তৃণমূলকে চোর বলার আগে ওরা ডাকাতেরা একবার মুখ ফুটে বল তোদের রিপোর্টে কী আছে। উত্তরপ্রদেশ, মহারাষ্ট্র, বিহারের রিপোর্ট বের করা। বাংলার রিপোর্ট বার কর। তার সঙ্গে এজি-র রিপোর্ট বার কর। ওরা দেয়নি। আমাদের এমপিরা পার্লামেন্টে ধরনা দিয়েছে, মার খেয়েছে। টানতে টানতে পুলিশ নিয়ে গিয়ে সারা রাত থানায় রেখেছে। তৃণমূলের এমপিরা একমাত্র বিজেপিকে পার্লামেন্টে জব্দ করে রেখেছে। আর কেউ পারে না। তৃণমূল না থাকলে বিজেপির বিরুদ্ধে লড়ার কেউ নেই। বাংলায় তৃণমূলের ভোট কাটলে বিজেপি লাভবান হবে। আপনারা নিশ্চয় সেটা চান না। আউশগ্রামের মানুষের কাছে আমি কৃতজ্ঞ। এক দিন রাস্তা দিয়ে যাচ্ছিলাম। আউশগ্রামের প্রাথমিক স্কুলের বাচ্চারা দাঁড়িয়ে আছে। কারও পায়ে জুতো নেই। সঙ্গে সঙ্গে ফোন করে বললাম সব প্রাথমিক স্কুলের শিশুরা যেন বিনা পয়সায় জুতো পায়। খালি পায়ে স্কুলে না যেতে হয়। আউশগ্রামকে দেখেই এই সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম। নানুরে যখন ১১ জনকে খুন করেছিল। আমি এসেছিলাম। দেখলাম কারও গায়ে একটা সাদা কাপড় নেই। বললাম, কিনতে পারলে না। আমায় বলল ওদের পয়সা নেই। মানুষের দেহ সৎকার হবে তার আগে একটা সাদা চাদর দেবে না। ভাল ভাবে শেষকৃত্য হবে না। সেই দেখে সমব্যথী প্রকল্পের সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম। ঝাড়গ্রামের একটা ছেলে আমার গাড়ির সামনে এসে বলেছিল, দিদি শুধু মেয়েরা সাইকেল পাবে, ছেলেরা পাবে না? তারপর থেকে সিদ্ধান্ত নিলাম, সবাই পাবে। সংখ্যালঘুদের জন্য চার কোটি স্কলারশিপ করে দিয়েছি।