পূর্ব বর্ধমানের সভা থেকে মমতার হুংকার বাংলায় এনআরসি করতে দেব না
admin
বর্ধমান (পূর্ব বর্ধমান) :- বাংলায় কোনোভাবেই এনআরসি হতে দেবো না। প্রয়োজনে এক নদী রক্ত দেব। জীবন দেওয়ার জন্যও তৈরী। কিন্তু বিজেপিকে ক্ষমা করবন না। সোমবার বর্ধমানের দেওয়ানদিঘীতে বর্ধমান-দুর্গাপুর লোকসভা আসনের তৃণমূল কংগ্রেসের প্রার্থী মমতাজ সংঘমিতার সমর্থনে নির্বাচনী জনসভায় বক্তব্য রাখতে এসে একদা সিপিএমের খাসতালুকে এভাবেই বিজেপিকে আক্রমণ করলেন তৃণমূল সুপ্রিমো মমতা বন্দোপাধ্যায়। এদিন মমতা বন্দোপাধ্যায় সাম্প্রতিক সময়ে স্বভাবসিদ্ধভাবেই তাঁর বক্তব্যের সিংহভাগ জুড়ে আক্রমণ শানিয়েছেন বিজেপির বিরুদ্ধে। উল্লেখ করেছেন বিগত ৫ বছরে রাজ্য সরকার কি কি উন্নয়ন ঘটিয়েছেন সে সম্পর্কেও। আর তারপরেই পাল্টা চ্যালেঞ্জ ছুঁড়েছেন কেন্দ্রের মোদি সরকারের বিরুদ্ধে। জানিয়েছেন, গত ৫ বছর কেবলই দেশ বিদেশ ঘুরে বেড়িয়েছেন। কি কি উন্নয়ন করেছেন? আর সেই মোদিই এখন বলছে মমতা কিছু করেনি? এরপরই একের পর এক সবুজশ্রী,কন্যাশ্রী-সহ রাজ্যের বিভিন্ন প্রকল্পের পাশাপাশি আগামী দিনে ডানকুনি পুরুলিয়া ফ্রেট করিডর, নিম্ন দামোদরের উন্নয়ন, রাস্তা ঘাটের উন্নয়ন, ব্রীজ তৈরী প্রভৃতি একাধিক প্রকল্পের উল্লেখ করেছেন। এদিন বক্তব্য রাখতে গিয়ে গত কয়েকদিন ধরে শিলাবৃষ্টি, ঝড়ের দাপটে ফসলের ব্যাপক ক্ষতির বিষয়টি মাথায় রেখেই এদিন মমতা ঘোষণা করেছেন, ফসলের যে ক্ষতি হয়েছে তা ব্লক স্তরের প্রশাসন সার্ভে করে দেখছেন। তৃণমূল সরকার চাষীদের পাশে রয়েছে। তাদের ক্ষয়ক্ষতির বিষয়টি রাজ্য সরকার দেখছে। এক্ষেত্রে নির্বাচন কোনো বাধা হয়ে দাঁড়াবে না। রাজ্যের সাড়ে সাত কোটি মহিলা ও তাঁদের পরিবারের সমস্ত সদস্যদের জন্য বছরে ৫ লক্ষ টাকার স্মার্ট হেল্থ কার্ড চালুর বিষয়টিও তিনি উল্লেখ করেছেন। যদিও একদা সিপিএমের খাসতালুক এই দেওয়ানদিঘীর নির্বাচনী সভা থেকে এদিন মমতা বন্দোপাধ্যায় একটি শব্দও উল্লেখ করেনি সিপিএমের বিরুদ্ধে। উল্লেখ্য, এদিন বর্ধমান কাটোয়া রোডের একপাশে সভামঞ্চ করা হলেও রাস্তার অন্য পাশেই ছিল হেলিপ্যাড। আর এদিন মমতা বন্দোপাধ্যায়ের হেলিপ্যাড থেকে সভামঞ্চে আসার জন্য প্রায় আধঘণ্টা ধরে রাস্তা অবরোধ করে রাখে পুলিশ। ব্যাপক যানজটে আটকে পড়ে একাধিক এ্যাম্বুলেন্সও। এদিন দেওয়ানদিঘীর এই সভায় পুরনো দিনের সেই আবেগ দেখা মেলেনি। মমতা বন্দোপাধ্যায়ের ভাষণকে উজ্জীবিত করতে মাঝে মাঝেই নেতারা হাত তুলে উপস্থিত জনতাকে হাততালি দিতে উত্সাহিত করেছেন। এদিন বক্তব্য রাখতে গিয়ে বর্ধমান–দুর্গাপুর লোকসভা কেন্দ্রের বিজেপির প্রার্থী সুরেন্দ্রজিত সিং অহলুবালিয়ার নাম না করে তাঁর বিরুদ্ধেও তোপ দেগেছেন তৃণমূল সুপ্রিমো। জানিয়েছেন, বর্ধমানের বিজেপির প্রার্থী বিমল গুরুঙ্গের বড় বন্ধু। উনাকে ভোট দিলে আবার বাংলা ভাগ হবে। মমতা বলেন, শান্ত দার্জিলিংকে অশান্ত করেছিলেন এখানে যিনি বিজেপির প্রার্থী হয়েছেন। দার্জিলিং–এর মানুষ শান্ত বলে তিনি আবার দার্জিলিং শান্ত করেছেন। দার্জিলিং থেকে পালিয়ে এসে বলছে আমাকে ভোট দাও। কেন মানুষ ভোট দেবেন। তৃণমূলের প্রার্থী মমতাজ সংঘমিতা বর্ধমানের মেয়ে। একজন ডাক্তারও। আর উনি বিমল গুরুঙ্গের বড় বন্ধু। উনাকে ভোট দিলে আবার বাংলা ভাগ করে দেবে। মনে রাখবেন পাহাড় ভাগ করতে চেয়েছিলেন উনি। দার্জিলিং থেকে পালিয়ে এসে ভাবছে বর্ধমানটা এবার দখল করব। বলছে আমার শ্বশুর বাড়ি। শ্বশুর বাড়ি তো কি যায় আসে। রাজনীতিতেও কিছু যায় আসে না। পাহাড়ে আগুন লাগিয়ে বাংলায় আগুন লাগানোর চেষ্টা করবেন না। বর্ধমানের আগুন লাগতে দেব না।বাংলায় আগুন লাগাতে দেব না। প্রয়োজনে এক নদী রক্ত দেব। জীবন দেওয়ার জন্য তৈরি। কিন্তু বিজেপিকে কোন দিনই ক্ষমা করবো না। ভোট প্রচারে সোমবার পূর্ব বর্ধমানে তিনটি সভা করেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। প্রথম সভাটি হয় পূর্বস্থলীর জামালপুরের। বেলা ২ টো নাগাদ বর্ধমান শহর লাগোয়া দেওয়ানদিঘীতে জনসভা করেন। এর পর বিকালে রায়না সেহারাবাজারে সভায় বক্তব্য রাখেন মুখ্যমন্ত্রী। নাগরিকপঞ্জি ইস্যুতে দেওয়ানদিঘীতেও তিনি সবর হন। বলেন, মোদিবাবু পাঁচ বছর ধরে সারা বিশ্ব ঘোরাঘুরি করেছে। কিছুই করেনি। আবার নির্বাচন আসতেই হিন্দু–মুসলমান সুড়সুড়ি দিতে শুরু করেছে। নাগরিকপঞ্জির নামে সবাইকে তাড়িয়ে দেব। আসামে ২২ লক্ষ হিন্দু বাঙ্গালী পরিবারগুলিকে বাদ দিয়েছে। ২০ লক্ষ মুসলিমকে বাদ দিয়েছে। কিছু বিহারিকে বাদ দিয়েছে। আগে বলতো বাংলায় করবো। এখন বলছে সারা ভারতে করবে। তার মানে বর্ধমানের যে ছেলে মেয়েরা রাজস্থানে কাজ করছে তাদের রাজস্থান থেকে ঘাড় ধাক্কা দিয়ে তাড়িয়ে দেবে। বিহার থেকে বাংলার ছেলে মেয়েদের তাড়িয়ে দেবে। মোদীবাবুর সরকার ঘাড় ধাক্কা দেওয়ার সরকার ? নাগরিকপঞ্জির নামে মানুষকে মারার সরকার। আমরা এই সরকার মানি না। বিজেপিকে এদিন বসন্তের কোকিল বলে কটাক্ষ করেন মমতা। তিনি বলেন, বসন্তের কোকিল, ভোট এলেই ভোট দাও ভোট দাও করে। একদম ভোট পাবে না। ৩৬৫ দিন যারা থাকবে তারাই ভোট পাবে। তুমি বসন্তের কোকিল কুহু কুহু ডাকো। তোমার সঙ্গে মানুষের কোন সম্পর্ক নেই। মা দুর্গার অশুভ শক্তি বধ করেছিল। তাই তার হাতে অস্ত্র ছিল। আর এরা নিজেরাই অশুভ শক্তি। হাতে গদা নিয়ে, তরোয়াল নিয়ে মাথায় ফেটি বাঁধছে। টাকা দিয়ে বাইক কিনে দিচ্ছে গুন্ডাদের। টাকা দিচ্ছে অস্ত্র–বোমা কিনছে। আর বলছে বাংলা আমরা নেব, বাংলা আমরা নেব। তোরা ছাই নিবি। মমতা এ দিন বলেন, তিনি নিজে হিন্দু ধর্মের মেয়ে, তুমি রামকৃষ্ণ মান না, বিবেকানন্দ মান না, তুমি কেমন হিন্দু। কোথা থেকে ধর্ম আমদানি করলে? বিজেপির নতুন আমদানি করা ধর্ম ভারতের ধর্ম নয়। নিজের স্বার্থে ভোটে জেতার জন্য আর ভাগাভাগির করার জন্য এই ধর্ম ব্যবহার করে। বিজেপি পচা শামুকের আমদানি করেছে। তাতে কেউ পা দেবেন না। পা কেটে যাবে। এদিন সেহারাবাজারের জনসভায় মমতার অভিযোগ, বাংলায় বিজেপি, সিপিএম, কংগ্রেস এক হয়েছে, মোদীকে প্রধানমন্ত্রী বানাতে। সিমিএম কর্মীদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, আমি দুঃখের সঙ্গে বলছি, এখনও যাঁরা বামপন্থী আছেন, তাঁরা বিজেপির কাছে নিজেদের বিক্রি করবেন না।