E Purba Bardhaman

তৃণমূলকে ক্ষমতাচ্যুত করতে বিজেপিকে ভোট দেবেন না – মানিক সরকার

Manik Sarkar, CPI(M) Politburo Member & Former Chief Minister of Tripura. At Burdwan Town Hall Ground. Bardhaman-Durgapur Lok Sabha

বর্ধমান (পূর্ব বর্ধমান) :- পশ্চিমবঙ্গের হৃত গৌরব পুনরুদ্ধার করতে হলে তৃণমূলকে পরাজিত করা জরুরি। তৃণমূল একটাও প্রতিশ্রুতি রাখেনি। তৃণমূলের দুঃশাসনে মানুষের নাভিশ্বাস উঠেছে। তৃণমূলের লোকজনও ভুল বুঝতে পারছেন। তবে, তৃণমূলকে ক্ষমতাচ্যুত করতে বিজেপিকে ভোট দেবেন না। তাহলে মারাত্মক ভুল হয়ে যাবে। শুক্রবার বর্ধমান শহরের টাউনহলে বর্ধমান-দুর্গাপুর লোকসভা কেন্দ্রে দলীয় প্রার্থীর সমর্থনে আয়োজিত নির্বাচনী জনসভায় এই মন্তব্য করেন সিপিএমের পলিটব্যুরোর সদস্য তথা ত্রিপুরার প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী মানিক সরকার।


সভায় তিনি বলেন, এবারের নির্বাচন ভারতের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বের পক্ষে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। দেশজুড়ে বিজেপিকে হটানোর আওয়াজ উঠেছে। বামপন্থীদের পাশাপাশি অন্যান্য অবিজেপি রাজনৈতিক দলগুলিও বিভিন্ন ঘটনা থেকে শিক্ষা নিয়ে বিজেপিকে পরাস্ত করার চেষ্টা চালাচ্ছে।দেশের বিজ্ঞানী, ইতিহাসবিদ, সাহিত্য, গান-বাজনা, নাটক ও সিনেমার সঙ্গে যুক্ত মানুষজনও বিজেপিকে হটানোর ডাক দিয়েছেন। বিজেপি গত ৫ বছরে দেশে দুঃশাসন দিয়েছে। বিজেপি একচেটিয়া পুঁজিবাদের স্বার্থ দেখেছে। শ্রমিক, খেটে খাওয়া মানুষ, খেতমজুর, ছাত্র, সংখ্যালঘু সহ সব শ্রেণির বিরুদ্ধে অর্থনৈতিক আক্রমণ নামিয়ে এনেছে বিজেপি। ২০১৪ সালে মানুষকে ভুল বুঝিয়ে বিভাজনের খেলা খেলে ৩১ শতাংশ মানুষের ভোট পেয়ে ক্ষমতা দখল করেছে বিজেপি। মানুষকে বিপথগামী করেছে তারা। কিন্তু, এবারের নির্বাচন মাখনে ছুরি চালানোর মতো হবেনা। এবারের নির্বাচন কঠিন নির্বাচন। ভোটে জেতা সহজ হবেনা বুঝতে পেরে মানুষের মৌলিক সমস্যাকে দূরে সরিয়ে বিভাজনের কৌশল নিয়েছে বিজেপি। ধমের্র কথা বলে দেশের সংস্কৃতির মূল ধারায় আঘাত করছে। এর মোকাবিলা করার জন্য মানুষ চেষ্টা করলে আক্রমণ নামিয়ে আনা হচ্ছে। সংসদকে খাটো করা হচ্ছে। মানুষের কথা বলার অধিকার হরণ করা হচ্ছে। সাংবিধানিক সংস্থাগুলির কাজে হস্তক্ষেপ করা হচ্ছে। হস্তক্ষেপের কারণে রিজার্ভ ব্যাংকের গভর্নর টিকতে পারছেন না। নিজেদের লোককে বসানোর পরও ভুল বুঝতে পেরে পদত্যাগ করছেন রিজার্ভ ব্যাংকের গভর্নর। বিচার ব্যবস্থার উপরও আক্রমণ হচ্ছে। বিচারপতিরা বিক্ষোভ দেখাচ্ছেন। নির্বাচন কমিশনে কাজে হস্তক্ষেপ করা হচ্ছে। জনগণের প্রতি দায়বদ্ধতা রক্ষা করতে পারছে না কমিশন। এনিয়ে প্রাক্তন কমিশনাররাও প্রশ্ন তুলছেন।


তিনি আরও বলেন, ত্রিপুরায় নানা প্রতিশ্রুতি দিয়ে বিজেপি ক্ষমতায় এসেছে। কিন্তু, ভোটের আগে দেওয়া প্রতিশ্রুতির একটিও রক্ষা করতে পারেনি। বামপন্থীদের উপর ত্রিপুরায় অত্যাচার চালানো হচ্ছে। পাির্ট অফিস ভেঙে গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। গণসংগঠনের অফিস দখল করে সেখানে আরএসএসের অফিস হয়েছে। লোকসভা নির্বাচনেও পশ্চিম ত্রিপুরা আসনের ভোটে ব্যাপক রিগিং করেছে বিজেপি। রিগিংয়ের জন্য পূর্ব ত্রিপুরা লোকসভা আসনের নির্বাচন পিছিয়ে দিতে বাধ্য হয় কমিশন। বিজেপি এ রাজ্যে ভোটে সন্ত্রাসের অভিযোগ করছে। আর অন্য জায়গায় নিজেরা সন্ত্রাস করছে। এ রাজ্যে তৃণমূল কংগ্রেস একটাও প্রতিশ্রুতি রক্ষা করেনি। তৃণমূলের দুঃশাসনে মানুষের নাভিশ্বাস উঠেছে। ইন্টারভিউ দেওয়ার পরও টাকা ছাড়া চাকরি হয়না। সরকারি কর্মচারীরা ডিএ পান না। গণতন্ত্রের কসাইখানায় পরিণত হয়েছে রাজ্য। বিরোধীদের ভোট দিতে দেওয়া হয়না। বুথে রিগিং করা হয়। আবার জয়ীদের সাির্টফিকেট ছিনিয়ে নেওয়া হয়। বাম বিদ্বেষীরা তৃণমূলকে চোখ-কান বুজে ভোট দিয়েছেন। এখন আবার তৃণমূলকে হটাতে বিজেপিকে ভোট দেওয়ার ভাবনা-চিন্তা করছে। আমাদেরও কিছু মানুষ এ ধরণের ভাবনা-চিন্তা করছেন। এটা ভুলেও করবেন না। তাহলে মারাত্মক ক্ষতি হয়ে যাবে। তৃণমূল এবং বিজেপির বিরুদ্ধে একমাত্র বামপন্থীরাই লড়াই চালাতে পারে। তাই, বামপন্থীদেরই ভোট দিন। এদিনের সভায় তিনি ছাড়াও সিপিএমের রাজ্য কমিটির সদস্য অমল হালদার, জেলা সম্পাদক অচিন্ত্য মল্লিক ও প্রার্থী আভাস রায়চৌধুরি বক্তব্য রাখেন।

Exit mobile version