E Purba Bardhaman

জাতীয় সড়কে দুর্ঘটনা রোধে ৬ লেনের জাতীয় সড়কের দুপাশে তৈরী হচ্ছে সার্ভিস রোড

বর্ধমান (পূর্ব বর্ধমান) :- আর প্রাণ হাতে নিয়ে জাতীয় সড়কে চলাচল করতে হবে না। আগামী ২০২০ সাল থেকেই শুরু হচ্ছে বর্ধমানের পানাগড় থেকে ডানকুনি পর্যন্ত জাতীয় সড়কের দুধারে সার্ভিস রোডের কাজ। বৃহস্পতিবার পূর্ব বর্ধমান জেলা প্রশাসনের সঙ্গে উচ্চ পর্যায়ের বৈঠকের পর একথা জানিয়েছেন, পূর্ব বর্ধমানের জেলাশাসক অনুরাগ শ্রীবাস্তব। উল্লেখ্য, জাতীয় সড়কে দুর্ঘটনা এবং প্রাণহানির ঘটনায় দফায় দফায় গাড়ির গতি নিয়ন্ত্রণ করার দাবী ওঠে। রাজ্য সরকারের পুলিশ ট্রাফিক বিভাগ এবং পরিবহণ দপ্তর দফায় দফায় এব্যাপারে পরিকল্পনাও গ্রহণ করেন। জাতীয় সড়কে দুর্ঘটনা প্রবণ এলাকাগুলিকে চিহ্নিত করে সেখানে সিসিটিভি, স্পীড কন্ট্রোলার বসানোও হয়। এমনকি ধারাবাহিকভাবে জাতীয় সড়কে বেপরোয়া গতিতে গাড়ি চালানোর দায়ে জরিমানাও আদায় করছেন। অন্যদিকে, উপায়ন্তর না পেয়েই সাধারণ মানুষকে এই জাতীয় সড়ক ধরেই ঝুঁকিবহুল যাতায়াত করতেও হচ্ছে। পূর্ব বর্ধমা্ন জেলা পুলিশ দপ্তর সূত্রে জানা গেছে, ২০১৬ সালে জেলায় মোট পথ দুর্ঘটনা ঘটেছিল ৫০৯টি। তার মধ্যে মারা যায় ৫৪৪ জন। ২০১৭ সালে দুর্ঘটনা ঘটে ৪১০টি এবং মারা যায় ৪৫১জন। ২০১৭ সালের ডিসেম্বর মাস থেকে চলতি বছরের জুন মাস পর্যন্ত দুর্ঘটনা ঘটেছে ১৭২টি এবং মারা গেছেন ১৮৩ জন। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই এই দুর্ঘটনার কারণ দুর্বার গতি। আর এবার জাতীয় সড়কে লাগাতার এই দুর্ঘটনা রোধে এবার বর্ধমানের পানাগড় থেকে ডানকুনি পর্যন্ত ১৩০ কিমি জাতীয় সড়কে ন্যাশনাল হাইওয়ে অথরিটির পক্ষ থেকে প্রথম দুধারেই তৈরী হতে চলেছে সার্ভিস রোড। এর ফলে ছোট বড় সমস্ত যানবাহনকে আর সরাসরি জাতীয় সড়কে উঠতে হবে না। জাতীয় সড়ক দিয়ে কেবলমাত্র সরাসরি দূরপাল্লার গাড়িগুলিই অবাধে যাতায়াত করতে পারবে। থাকবে প্রতি ১ থেকে দেড় কিমির মধ্যে ক্রশিং ব্যবস্থা। অনেক সময় রাস্তা পারাপার করতে গিয়েও দুর্ঘটনার কবলে পড়ছেন সাধারণ মানুষ। বৃহস্পতিবার জাতীয় সড়ক কর্তৃপক্ষের প্রতিনিধি, জেলা প্রশাসনের প্রতিনিধি ছাড়াও পূর্ব বর্ধমান জেলার পানাগড় থেকে জামালপুর থানা পর্যন্ত জাতীয় সড়ক লাগোয়া সমস্ত ব্লকের বিডিও, পঞ্চায়েত প্রধান, পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি, বিধায়ক এবং সাংসদদের নিয়ে এব্যাপারে বিস্তারিত আলোচনা করা হল। বর্ধমানের পানাগড় থেকে হুগলীর ডানকুনি পর্যন্ত ১৩০ কিলোমিটার জাতীয় সড়ককে ৬ লেনে পরিণত করার জন্য কাজ শুরু হতে চলেছে ২০২০ সাল নাগাদ। তার আগে এব্যাপারে প্রস্তুতি শুরু হয়ে গেল। আগামী দেড় থেকে দু বছরের মধ্যে এব্যাপারে চুড়ান্ত পরিকল্পনা তৈরী হয়ে যাবে বলে জেলাশাসক জানিয়েছেন। ন্যাশনাল হাইওয়ের প্রোজেক্ট ডিরেক্টর অরিন্দম হাণ্ডি এদিন জানিয়েছেন, ২০০১ সাল থেকে প্রথম জাতীয় সড়ককে প্রথম ফোর লেন এবং পরে ৬ লেন করার কাজ শুরু হয়। ২০০৫ সালে শেষ হয় ফোর লেনের কাজ। ২০২০ সাল পর্যন্ত রয়েছে এই ফোর লেনের মেয়াদ। তিনি জানিয়েছেন, আগামী ২০২০ সাল থেকে শুরু হচ্ছে পানাগড় থেকে ডানকুনি পর্যন্ত প্রায় ১৩০ কিমি রাস্তাকে ৬ লেনে পরিণত করার কাজ। এজন্য ন্যাশনাল হাইওয়ে অথরিটিকে বেশ কিছু জায়গা অধিগ্রহণও করতে হবে। আর তাই এদিন এব্যাপারে জেলা প্রশাসনের সঙ্গে এব্যাপারে বিস্তারিত আলোচনা হয়েছে। তিনি জানিয়েছে্ন, গলসী বাজার, বুদবুদের কোটা, বর্ধমানের শক্তিগড়ের মত কিছু জায়গায় জাতীয় সড়ক কর্তৃপক্ষকে জমি অধিগ্রহণ করতে হবে। তিনি জানিয়েছেন, এই ৬ লেন রাস্তা তৈরী করার পাশাপাশি রাস্তার দুপাশে তৈরী করা হচ্ছে ৭ মিটার চওড়ার সার্ভিস লেন। এর ফলে মূল জাতীয় সড়কে ছোটবড় যানবাহন, সাধারণ রুটের বাস, আঞ্চলিক স্তরের পণ্য বোঝাই লরী কাউকেই আর উঠতে হবে না। মূল ৬ লেন জাতীয় সড়ক দিয়ে সরাসরি যাতায়াত করবে দিল্লী থেকে কলকাতা বা দূরপাল্লার গাড়ি গুলি। অরিন্দম হাণ্ডি জানিয়েছেন, ন্যাশনাল হাইওয়ে অথরিটি কর্তৃপক্ষের নির্দিষ্ট পরিমাণ গতিতেই এই জাতীয় সড়কে যাতায়াত করতে হয়। সেক্ষেত্রে ন্যূনতম গাড়ির গতিবেগ থাকে ১০০ কিমি প্রতি ঘণ্টায়। উল্লেখ্য, প্রায়শই এই গতির জন্যই জাতীয় সড়কে দুর্ঘটনা ঘটছে। এব্যাপারে তিনি জানিয়েছেন, এজন্যই ৬ লেনের দুপাশেই সমানভাবে ৭মিটার চওড়া সার্ভিস রোড করা হচ্ছে।

Exit mobile version