বর্ধমান (পূর্ব বর্ধমান) :- প্রায় চার বছর ধরে লাগাতার প্রশাসনের দরজায় কড়া নাড়িয়েও কোনো ফল না পাওয়া এবং খোদ রাজ্যপালের দরবারে অভিযোগ জানিয়েও কোনো সুরাহা না পাওয়া মেমারীর দেবীপুর অঞ্চলের হেতমপুর গ্রামের কংগ্রেসি এক পরিবার হেঁটে রওনা দিলেন নবান্নের উদ্দেশ্যে। গত ২৫ জুলাই থেকে তাঁদের ‘সুবিচারের’ দাবিতে জেলাশাসক চত্বরে ২৬ দিন ধরে হত্যে দিয়ে পড়ে থাকলেও জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে কোনো সুরাহা মেলেনি বলে অভিযোগ। বাধ্য হয়ে বুধবার অশক্ত মাকে হুইল চেয়ারে বসিয়ে দুই ছেলে ও এক মেয়ে হেঁটে রওনা দিলেন নবান্নের উদ্দেশ্যে। সঙ্গে নিয়েছেন লিফলেট, তাঁদের ওপর অত্যাচারের এই ঘটনা তাঁরা জনসাধারণকে জানাতে পথে বিলি করবেন এই লিফলেট। জীবান সেখ জানিয়েছেন, গত ২৫ জুলাই তাঁরা এসেছিলেন সুবিচারের আশায় জেলাশাসকের দরবারে। উল্লেখ্য, এর আগে চলতি বছরেই ২৫ এপ্রিল বর্ধমানের রাজপথে রাস্তায় গড়াগড়ি দিতে দিতে জেলাশাসকের কাছে ‘তৃণমূলের অত্যাচারের’ বর্ণনা দিতে এসেছিলেন বৃদ্ধা সেখ কোহিনুর সেখের দুই ছেলে জীবান সেখ এবং বাজান সেখ । মা কোহিনুর সেখ এবং অবিবাহিত বোনকে নিয়ে তাঁরা এসেছিলেন সুরাহা চাইতে। কিন্তু বছর গড়িয়ে গেলেও আজও কোনো সুরাহা না মেলায় ফের ২৫ জুলাই তাঁরা আসেন পূর্ব বর্ধমানের জেলাশাসকের কাছে। বৃদ্ধা কোহিনুর সেখ জানিয়েছেন, তাঁর স্বামী প্রয়াত সেখ নুর ইসলাম কংগ্রেস করতেন। তিনি জীবিত থাকাকালীন তাঁর দুই মেয়ের বিয়ে হয়। বর্তমানে বিবাহযোগ্য আরও একটি মেয়ে রয়েছে। রয়েছে তাঁর দুটি পুত্র সন্তানও। গত প্রায় বছর কয়েক ধরেই তাঁর ছোট মেয়ের বিয়ে দেবার জন্য চেষ্টা করছিলেন। সেজন্য তাঁর জমি বিক্রির প্রয়োজন পড়ে। সেই জমি (পুকুর সহ মোট প্রায় ১১ বিঘা) বিক্রি করতে গিয়ে বিএলআরও দপ্তরে গিয়ে জানতে পারেন তাঁদের জমির কোনো রেকর্ড নেই। ওই দপ্তর থেকে সমস্ত নথি লোপাট করা হয়েছে। এরপরই তৃণমূলের নেতারা তাঁর বাড়ির ওপর চড়াও হয়। তাঁর বড় ছেলে বাজান সেখকে বেধড়ক মারধর করা হয়, কেড়ে নেওয়া হয় স্বাস্থ্যসাথী কার্ড, রেশন কার্ড। এর ফলে তাঁরা দীর্ঘদিন ধরে রেশন পাচ্ছেন না। এব্যাপারে জেলা ও ব্লক স্তরের সমস্ত প্রশাসনিক অধিকারিকদের কাছে আবেদন করলেও কোনো ফল হয়নি। বাধ্য হয়ে তাঁরা কলকাতার রাজভবনের সামনে ধর্ণায় বসেন, কিন্তু পুলিশ সুকৌশলে তাঁদের সেখান থেকে তুলে দেয়। শুধু এটাই নয়, এই অবস্থায় এলাকারই কিছু তৃণমূলের নেতা তাঁর মেয়ের বিয়ে ভেঙে দিতে শুরু করেছে বলে অভিযোগ। তাঁদের অভিযোগ যেখানেই যোগাযোগ করা হচ্ছে সেখানেই তৃণমূলের নেতারা বিয়ে ভেঙে দিচ্ছেন।
কোহিনুর সেখের ছোট ছেলে জীবান সেখ জানিয়েছেন, তাঁর বৃদ্ধা মা কোহিনুর বিবি অসুস্থ। ঠিকমতো চলাফেরাও করতে পারেন না। দীর্ঘদিন ধরে তাঁরা কংগ্রেস পার্টি করেছেন। কিন্তু বর্তমানে তাঁদের পাশে কংগ্রেসের নেতারা সেভাবে দাঁড়াননি। তাই তিনি বিজেপির কাছে গিয়েছিলেন সাহায্য প্রার্থনার জন্য। আর এজন্যই তাঁদের ওপর চড়াও হয়েছে তৃণমূলের নেতারা। তাঁদের প্রায় ১১ বিঘে জমির চাষ বন্ধ করে দিয়েছে। গতবার হিমঘরে রাখা প্রায় ৪০ কুইন্টাল আলুও তাঁদের বিক্রি করতে দেওয়া হয়নি। আলুর বণ্ড জোর করে কেড়ে নেওয়া হয়েছে তাঁদের কাছ থেকে। জীবান সেখের বোন সেখ মুমতাজ জানিয়েছেন, রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী একজন মহিলা। আর তাঁরই দলের নেতারা তাঁদের ওপর এই বছরের পর বছর ধরে অত্যাচার চালিয়ে যাচ্ছেন। পুলিশ, প্রশাসন সব জেনেও কোনো ব্যবস্থা নিচ্ছে না। সেখ মুমতাজ জানিয়েছেন, তিনি বিয়ে করতে চান, সংসার করতে চান। এটা কি তাঁর অপরাধ? এদিন জীবান সেখরা জানিয়েছেন, আর জি কর কাণ্ডে নিয়ে এখন সবাই বিচার চাইছেন। রাস্তায় নেমেছেন। আর জি কর সহ রাজ্যের সমস্ত ধর্ষিতা, নির্যাতিতা মহিলার প্রতি অন্যায় অবিচারের প্রতিকারে আমরাও রাস্তায় নেমেছি। জানিয়েছেন, আর জি করের ঘটনার পর এটা বুঝেছি যে, মুখ্যমন্ত্রীর কাছে ন্যায় বিচার চেয়ে কোনো লাভ নেই। তাই আমরা শুধু ন্যায় বিচারের জন্যই নয়, প্রতিবাদ জানাতে রাস্তায় নেমেছি। স্বাধীনতার ৭৮ বছর পরেও এক অত্যাচারিত বিধবা মহিলার করুণ কাহিনি শোনার জন্য প্রশাসনের কেউ নেই। শুনলাম এখন সবাই জাস্টিস চাইছে। আমরাও জাস্টিস চাইছি।